August 15, 2025, 4:51 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-08-15 03:07:54 BdST

৮১ বছরে পা রাখলেন বেগম জিয়া


বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। দেশনেত্রী ৮১ বছরে পা রাখলেন। মহীয়সী এই রাজনীতিবিদের জন্মদিন উপলক্ষে তার শারীরিক সুস্থতা কামনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয় এবং মসজিদে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে।

১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহিদ হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত কয়েকবছর অসুস্থতার মধ্যে থাকায় তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় চিকিৎসকদের নিবিড় পরিচর্চায় চিকিৎসাধীন আছেন। দুই ঈদে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাছাড়াও অসুস্থ শরীর নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করেন। দেশের এই ক্লান্তিলগ্নে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা।

এর মধ্যে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে চার মাস কাটান তিনি। সেখান থেকে গত ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি। এক যুগের বেশি সময় পর গত ১০ মে দুই পূত্রবধুকে নিয়ে গুলশানে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাসায় যান তিনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল খালেদা জিয়াকে। সেদিন তিনি সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বস্তরের মানুষের স্পন্দনে জায়গা করে নিয়েছেন। নারী-পুরুষ সকলের মনিকোঠায় ঠাই তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোন আসনেই হারেননি। আছে বিপুল পরিমাণ ভোটে বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড। যা বিগত দিনের সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। তিনি সাবেক সফল রাষ্ট্রপতি স্বামী জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত একজন রাজনীতিবিদ। যার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ ও যোগ্য নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে তখন ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থান করছিলেন খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তখন বিপর্যস্ত ও দিশাহারা। জিয়াউর রহমান এর পরবর্তী দলের হাল কে ধরবেন, সেটি নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন আব্দুস সাত্তারের বয়স আনুমানিক ৭৮ বছর। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের বার্ধক্য এবং দল পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিতসভায় তিনি ভাষণ দেন। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েকমাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। এরপর ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

১৯৮০ দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে উঠে। ৯০'র গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে ১৩৬ টি আসন পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার সবগুলোতেই জয়লাভ করেছেন। ১৯৯৬ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলে খালেদা জিয়ার দ্বিতীযবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু সেবার আন্দোলনের মুখে বিএনপি বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা চাপে পড়ে যায়। খালেদা জিয়ার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয়, তার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারেননি। দেশে-বিদেশে সে নির্বাচন প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে বেগম জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বাইরে ছিলেন। যদিও এজন্য তাকে নানা বিধিনিষেধ পালন করতে হয়। যার মধ্যে ছিল- রাজনীতিতে অংশ না নিতে পারা, কোনো ভাষণ বা বক্তব্য না দেওয়া, বিদেশ যেতে না পারা ইত্যাদি।

এরপর গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগের পতনের পর মামলা থেকে খালাস পেয়ে লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান। চিকিৎসা শেষে গত কোরবানির ঈদের আগে দেশে ফেরেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এরপরই রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন তিনি। দলের কান্ডারি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীরা বদ্ধপরিকর। দলের নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.