October 17, 2025, 2:42 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-10-16 13:28:11 BdST

ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল বহিরাগতের দখলে


ঢাকার ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল বহিরাগতদের দখলে। ৫ আগস্টের পর একটি গ্রুপ শ্রমিকদের মারধর করে বাস টার্মিনালটি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সঙ্ঘবদ্ধ চক্র আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর একটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল আউয়াল (সভাপতি), হাজী আবুল কাশেম ( সাধারণ সম্পাদক) এর নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই অবৈধ নির্বাচনের সহযোগিতায় ছিলেন শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। আর সার্বিক সহযোগিতা করেছেন পরিবহন সেক্টরের দুইজন গডফাদার।

শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে যুগে যুগে চলছে ক্ষমতার মহা উৎসব। পরিবহন মাফিয়া শাহাজাহান খান জেল হাজতে থাকায় তার অন্যতম সহযোগী আব্দুর রহিম বক্স দুদু বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করছেন। শ্রমিকরা তাদের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল করেও কোন সুফল পাচ্ছেনা। সরকার এই ব্যাপার একেবারেই নিশ্চুপ নীতি অবলম্বন করায় দখলবাজরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবহন সেকেন্ড। ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে শ্রমিকরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শ্রমিকদেরকে প্রতিনিয়ত মারধর ও ডিউটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অসংখ্য বাস শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে। অসহায় এসব শ্রমিকের আহাজারি শুনতে নারাজ শক্তিশালী বহিরাগতরা।

সরেজমিনে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ১৮টি রোডে প্রায় ১৫ শত গাড়ি চলে। প্রতিটি গাড়ি থেকে ৬৮০ টাকা করে রশিদ বিহীন আদায় করা হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন বাবদ নেয়া হচ্ছে প্রতি গাড়ি থেকে ৪০ টাকা। বোবা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ১২০ টাকা করে। লাইনম্যানকে দিতে হয় ২০ টাকা করে। ফুলবাড়িয়া, সদরঘাট, আজিমপুর, সাভার, মিরপুর ও গাজীপুর চৌরাস্তা সহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা উঠানো হয়। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিএনপির দখলে চলে যাওয়ায় শ্রমিকরা কিছুটা আশার বাণী দেখে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মিলে একাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, একজন শ্রমিক সারাদিন কাজ করে তিনশ' থেকে ৫ শ' টাকা বেতন পায়। তাও আবার প্রতিদিন ডিউটি নেই। শ্রমিকদের টাকায় নেতারা কোটিপতি। নিয়ম হলো শ্রমিকদের নেতা হবে শ্রমিক। কিন্তু বহিরাগতরা এসে শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা প্রকৃত শ্রমিকদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অবৈধ নির্বাচন করে দখল বাণিজ্য করছেন। অসহায় শ্রমিকদের পক্ষে কেউ নেই। সরকারও এই বিষয়ে করণীয় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। যদি সরকার পরিবহন সেক্টরের দিকে নজর দিতো তাহলে এই সেক্টর থেকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন হতো।

সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং- ১৭৭৬) এর অবৈধ নির্বাচন করায় ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন বার বার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রিট করলেও তার কোন সুফল পাচ্ছেনা শ্রমিকরা। এর কারণ শ্রম অধিদপ্তরের একাধিক ব্যক্তি এই চক্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজিঃ নং-১৭৭৬) এর সদস্য ইসমাইল সরদার এবং সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের সাজু বহিরাগতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাজু মিয়া বলেন, ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি:নং ঢাকা-১৭৭৬ )এর কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন নং- ৭৩৭২/২০১১ ও ৪৩১৬/২০১৪ এর রায়ের নির্দেশনা অমান্য এবং শ্রম আইন, ২০০৬ এর ৩১৭(৪) (ঘ) লঙ্ঘন করা ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, ঢাকার গত ১৫/৯/২৫ তারিখের পত্রের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন করা হয়েছে। স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

কথিত নির্বাচন কমিশন বর্ণিত রীটের রায় ও আইন এবং বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের আইনী নির্দেশনাকে লঙ্ঘন করে নির্বাচন পরিচালনা করার শ্রমিকদের রিযিকের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় গণঅভ্যুত্থানের পরে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন রায় , সরকারী দপ্তরের পত্রের নির্দেশনা এবং শ্রম আইনকে লঙ্ঘৈনের ধৃষ্টতা প্রতিরোধ করা হয়েছে।

আবু তাহের সাজু আরো বলেন, শ্রম অধিদপ্তর ও শ্রম মন্ত্রণালয় এই দায় এড়াতে পারেনা।

অপর একটি সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি থেকে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচার মাফিয়ারা বিতারিত হয়েছে। কিন্তু আরেকটি পরিবহন মাফিয়াদের হাতে হস্তান্তর করে গিয়েছে পরিবহন সেক্টর। তারা ক্ষমতায় না আসতেই দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল দখল করে বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। পরিবহন সেক্টর থেকে কেউ বাঁধা দিলেই গুম ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে।

এই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ এর থেকেও ভয়ংকর। আওয়ামী লীগ প্রতি গাড়ি থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করতো কিন্তু এখন এই সিন্ডিকেট প্রতি গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছে ৮০০ টাকা করে। টাউন সার্ভিস গাড়ি এবং দূরপাল্লার বাস থেকে দেদারসে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.