April 27, 2024, 10:55 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-08-15 06:08:41 BdST

করোনায় নিয়মবহির্ভূত কেনাকাটা: বিল পাবেন না ঠিকাদাররা


করোনা সংক্রমণের পর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে নিয়ম বহির্ভূত কেনাকাটাগুলো হয়েছে সেগুলোর বিল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, এই ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত শীঘ্রই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়ে দেওয়া হবে। 

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কেনাকাটার ধূম পড়ে যায় এবং এই সমস্ত কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। 

করোনা সংক্রমণের সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই সমস্ত কেনাকাটা হয়েছে সরাসরি ক্রয় বা ডিপিএম পদ্ধতিতে। কিন্তু ডিপিএম পদ্ধতিতেও যে নূন্যতম নিয়মনীতি থাকে, সেই নিয়মনীতিগুলো মানা হয়নি কেনাকাটায়। 

এরকম একাধিক কার্যাদেশ পাওয়া গেছে যেটা সিএমএসডি থেকে দেওয়া হয়েছে, যেখানে এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর একক মূল্য কত, কত পিস মাস্ক সরবরাহ করা হবে এবং মোট প্রাক্কলিত মূল্য কত তাঁর কিছুই উল্লেখ নেই।

একইভাবে পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রেও এরকম একটি কার্যাদেশের নামে কাগজ দেওয়া হয়েছে যেখানে কোন ধরণের আর্থিক হিসেব দেওয়া হয়নি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, গত অর্থবছরের শেষেই এই বিলগুলো ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন ডিজি অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ নিজে ব্যক্তিগতভাবে তৎপর হয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ঐ বিলগুলো আটকে দেওয়া হয়েছিল এবং ঐ বিলগুলোকে অধিকতর যাচাইবাছাইয়ের জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল মহা হিসেব নিরীক্ষকের দপ্তরকে। এই সময়ে এই সমস্ত কার্যাদেশ এবং যে বিল দাখিল করা হয়েছে তা পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় তা পর্যালোচনা করে কোন বিল পরিশোধযোগ্য নয় বলে ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে যে, অদ্ভুত ধরণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশটিই দুর্নীতির বড় প্রমাণ। কার্যাদেশটিতে শুধু জিনিসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে তাঁর নাম উল্লেখ রয়েছে। অথচ একক মূল্য, কি পরিমাণ সরবরাহ হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। এরকম পাঁচটি খাতের কেনাকাটায় অনিয়ম এবং দুর্নীতি ধরা পড়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে। এগুলো হলো-

১. এন-৯৫ মাস্ক কেনা। এই কেনাকাটার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জেএমআই নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে এবং সেই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া কার্যাদেশে ক্রয়মূল্য দাখিল করা হয়নি। কতদিনে কি পরিমাণ মাস্ক সরবরাহকরা হবে তাও উল্লেখ করা হয়নি।

২. পিপিই-এর ক্ষেত্রে মিঠুর একটি বেনামি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া আরো দুটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে তাঁতে কোন মূল্য উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র পিপিই সরবরাহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

৩. আরটি পিসিআর মেশিনের ক্ষেত্রে একটি প্রাক্কলিত মূল্য ছিল। কিন্তু দেখা গেছে যে, বাজারমূল্যের থেকে কয়েকগুণ বেশি এবং এটা ডিপিএম পদ্ধতিতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং একাধিক দরপত্রদাতাকেও এই দরপত্র দেওয়ার জন্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

৪. রি-এজেন্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে যে, বাজারমূল্যের থেকে রি-এজেন্টের মূল্য অনেক বেশি। এক্ষেত্রেও বাজার যাচাই করা হয়নি এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কোনরকম টেন্ডার ছাড়াই এই কেনাকাটা করা হয়েছে।

৫. এই সময়ে সফটওয়্যার ক্রয়ের নামেও বিভিন্ন কেনাকাটা করা হয়েছে যেগুলো ভৌতিক এবং বাস্তবে আদৌ এই ধরণের কেনাকাটা করা হয়েছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যেন দুর্নীতির উৎসব শুরু হয়েছিল। আর তাঁর লাগাম টেনে ধরতেই প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বিলগুলো আটকে দেওয়া হয়েছিল।

এখন যারা এগুলো সরবরাহ করেছিল তাঁরা স্থায়ীভাবে এই বিল পাবেন না বলেই নিশ্চিত হওয়া গেছে।  

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা