April 25, 2024, 9:35 am


সামিউর রহমান লিপু

Published:
2020-08-24 06:40:32 BdST

ভারতের কাঁপন ধরিয়েছেন শেখ হাসিনা?


আকস্মিকভাবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফর নিয়ে আলোচনা চলছে। ঠিক কি কারণে শ্রিংলা ঢাকায় এসেছেন এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলেনি। কিন্তু বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে অস্বস্তি দূর করতেই হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকা ছুটে এসেছিলেন। 

একজন কূটনৈতিক বলেছেন যে, ভারতের কাঁপন ধরিয়েছেন শেখ হাসিনা। আর এই কারণেই করোনার মধ্যেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাকে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। 

জানা গেছে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশেই শ্রিংলা এই সফর করেছেন। মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেন কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক উদ্যোগ এবং কৌশলের কারণে ভারত ভয় পেয়েছে। এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি দিতেই হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশে এসেছেন।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, ভারতের ভয়ের প্রধান কারণ হলো শুষ্ক মৌসুমের জন্য তিস্তায় জলাধার নির্মাণ। 

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার পানির জন্য অপেক্ষা করছিল এবং চুক্তি হবে হবে করেও শেষ পর্যন্ত এই চুক্তি হয়নি। বরং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণে এই চুক্তি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 

কিন্তু শেখ হাসিনা অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি এই চুক্তির জন্য ভারতের কাছে আবেদন-নিবেদনের বদলে নিজের সক্ষমতা প্রমাণেই বেশি আগ্রহী। তিনি তিস্তাতে শুকনো মৌসুমে যেন পানি আটকে রাখা যায় সেজন্য জলাধার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই জলাধারের জন্যে ইতিমধ্যে চীন ১০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরের অনুমোদন দিয়েছে। 

এই খবরটি ভারতের সবথেকে বড় ভয়ের কারণ বলে কূটনৈতিক মহল ধারণা করছে। করোনার সময়ে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফরের এটাই প্রধান কারণ বলে মনে করছে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র। 

এরকম জলাধার নির্মাণ যদি করা হয় তাহলে বাংলাদেশের যেমন শুকনো মৌসুমে পানির সমস্যা হবেনা ঠিক তেমনি ভারতের জন্যেও সেটা একটি বড় মাথাব্যাথার কারণ হবে। অবশ্য ভারত এরকম জলাধারের ব্যাপারে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে কোন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।

ভারতের ভয়ের দ্বিতীয় কারণ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক। বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক কিছুদিন ধরে নতুন মাত্রা লাভ করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে চীন অংশগ্রহণ করছে এবং করোনা সঙ্কটের সময় বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, চীনা একটি কোম্পানি বাংলাদেশে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্যে অনুমতি চেয়েছে এবং সেই অনুমতির বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো নাকচ করে দেয়নি, বিবেচনা করে দেখছে। 

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এই অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের ভয়ের আরেকটি কারণ বলে জানা গেছে। এজন্য শ্রিংলা চীন নয় ভারতের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তৃতীয় যে কারণে ভারতের অস্বস্তি এবং ভয় ঢুকেছে তা হলো, দুই দফা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলি আলাপ এবং ভারত এই আলাপের বিষয়টি একটু উদ্বেগের চোখে দেখছে। বিশেষ করে যখন কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশের মাঝে টানাপোড়েন চলছে তখন সার্ক অঞ্চলে ভারতের একমাত্র বন্ধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ কিছুটা হলেও ভারতকে সংশয়ে ফেলেছে।

উল্লেখ্য যে, এই উপমহাদেশে ভারত কূটনৈতিক দৌড়ে একেবারেই পিছিয়ে পড়েছে, মোটামুটিভাবে একঘরে হয়ে গেছে। এই কারণে বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের আর কোন বন্ধু নেই। আর তাই এই বন্ধুত্বেও যেন ফাটল না ধরে সেটা নিশ্চিত করার জন্যেই আসলে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের এই সফর। 

শেখ হাসিনার দেশপ্রেম এবং তাঁর বিচক্ষণতা ভারতের কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন কূটনৈতিকরা। আর সেজন্যেই তড়িঘড়ি করে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার এই সফর।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা