April 20, 2024, 3:36 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-08-27 23:54:05 BdST

প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রশ্ন এবং চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়াল


দীর্ঘ দুই মাস ঝুলে থাকার পর অবশেষে চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদৃষ্টিতা এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সিনোভ্যাককে বাংলাদেশে ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়া হলো বলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সিনোভ্যাক আইসিডিডিআরবি’র মাধ্যমে তাদের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছিলো। এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেছিল বিএমআরসির কাছে। বিএমআরসির ইথিক্যাল কমিটি নৈতিকতার মানদণ্ডে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দেওয়া যায় বলে জানিয়ে দিয়েছিলো। 

এরপর শুরু হয় বিতর্ক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় যে, এ ধরণের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়নি। একমাসেরও বেশি সময় ধরে এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

অবশেষে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করেন এবং তিনটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলেন তার মধ্যে প্রথম প্রশ্নটি ছিলো, যদি সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে হয় তাহলে অন্যদেশের বা কোম্পানির ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সেটি বাধা হবে কিনা? অর্থ্যাৎ চীনা ভ্যাকসিন যদি ট্রায়াল দেওয়া হয় তাহলে কি অক্সফোর্ড বা সিরামের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হবে? একটি দেশে একাধিক কোম্পানির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা যায় কিনা? 

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এমন কোন নীতি নেই। একটি দেশে একাধিক কোম্পানি ভ্যাকসিন ট্রায়াল করতে পারে। এটি দেখতে হবে যে, নৈতিকতার মানদণ্ডে সঠিক আছে কিনা। বাংলাদেশ যদি সিনোভেট ভ্যাকসিন ট্রায়াল করে তাহলে এর পাশাপাশি অক্সফোর্ড বা সিরামের ভ্যাকসিনও ট্রায়াল হতে পারে। এতে কোন রকমের প্রতিবন্ধকতা নেই। কারণ আইসিডিডিআরবি এ ধরণের কাজগুলো করে। একাধিক কোম্পানি তাদের উৎপাদিত পন্যের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রায়াল করতে পারেন। এটি একটি স্বাভাবিক বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া।

প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন যদি আমরা ট্রায়াল দেই তাহলে আমাদেরকে সবার আগে দেবে কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যে দেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়, সে দেশ অবশ্যম্ভাবীভাবে অগ্রাধিকার পায় এবং এটি আন্তর্জাতিক রীতি। ভ্যাকসিন উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে প্রথম যে দেশগুলো ভ্যাকসিন পাবে, যে দেশগুলোতে ট্রায়াল হয়েছে সে দেশগুলো অন্যতম।

তৃতীয় যে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী করেন, এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন খরচ হবে কিনা, বা বাংলাদেশের কোন আর্থিক সংশ্লেষ আছে কিনা- এর উত্তরে জানানো হয় যে ভ্যাকসিন ট্রায়াল হবে সম্পূর্ণ চীনা কোম্পানির খরচে, সমস্ত ব্যায়ভার তারাই বহন করবে। বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশের এখানে কোন আর্থিক সংশ্লেষ নাই। এটি একটি বিজ্ঞান গবেষণা। কাজেই যে প্রতিষ্ঠান এই গবেষণা করবে, সেই প্রতিষ্ঠানের এই দায়িত্ব বর্তাবে খরচগুলো বহন করার।

এরপর প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে। যদি বাংলাদেশে কেউ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে চায় এবং ইথিক্যাল কমিটি যদি মনে করে যে, এই ভ্যাকসিনটি বাংলাদেশে ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কোন রকম সমস্যা নাই। নৈতিক মানদণ্ডের লঙ্ঘন হবে না এবং কোন রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি হবে না। সেক্ষেত্রে যারা বাংলাদেশে এই গবেষণা করতে চাইবে তাদেরকে স্বাগত জানানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী এটিও বলে দেন যে, বাংলাদেশ যেন সবার আগে ভ্যাকসিন পায়। সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্যই তিনি ভ্যাকসিন নিয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা এবং খোঁজ খবর নিয়ে কোন ভ্যাকসিনগুলো বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হবে সেরকম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে যদি প্রয়োজন হয় অগ্রীম বুকিং দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন। এরপরই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান যে, বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হবে। 

যে কাজটি প্রধানমন্ত্রী মাত্র দেড় মিনিটে করলেন, সে কাজ দেড় মাসেও করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।     

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা