April 25, 2024, 11:14 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-12-29 22:06:28 BdST

২০৩৫ সালে আমূল পরিবর্তন ঘটবে দেশের অর্থনীতিতে


একের পর এক উন্নয়নের সুখবর মিলছে বাংলাদেশের জন্য। সম্প্রতি জিডিপি ও মানব উন্নয়ন সূচকে ভারত, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করে চলেছে দেশটি।

নানা বাধা বিপত্তির মাঝেও থেমে নেই উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। ভবিষ্যতে কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি তারই একটি আভাস পাওয়া গেল।

২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ছাড়িয়ে ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ, এমনটাই আভাস দিলো ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক এন্ড বিজনেস রিসার্চ।

`ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১` নামের এই রিপোর্টটি গেল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী আর মাত্র ৭ বছর পরেই চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩০ সালে ভারত হবে তৃতীয়। আর ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ উপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সিইবিআর বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বেশিরভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবার। এর বিপরীতে চীন খুব কৌশলে করোনা ভাইরাস দ্রুত এবং কঠোরভাবে মোকাবিলার কারণে সামনের বছরগুলোতে পৌঁছে যাবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে।

চীন যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে, সেটাকে সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করা হচ্ছিলো এতোদিন। কিন্তু সিইবিআর বলছে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হয়েছে। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল, তার থেকে ৫ বছর আগেই অর্থাৎ ২০২৮ সালে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।

একইভাবে বাংলাদেশও যেহেতু করোনা ভাইরাসের মধ্যেও কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে, তাই সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধারাবাহিক এবং জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশা করছে সিইবিআর।

সিইবিআর তাদের রিপোর্টে বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল বেশ ভালো। এবং এটা ঘটেছে দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও। গত পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে গড়ে ১ শতাংশ হারে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণ অনেক সীমিত রাখা সম্ভব হয়েছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন ৭ হাজার ৫২ জন। প্রতি এক লাখে মাত্র ৪ জন। যদিও এই মহামারির কারণে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ছিল সীমিত, তা সত্ত্বেও অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে এটি।

কারণ মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে চাহিদা গিয়েছিল কমে আর আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা এড়াতে পেরেছে।

সিইবিআর এর পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, ২০২১ সাল হতে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটবে গড়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। তবে এর পরের দশ বছরে এই হার কিছুটা কমে গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে।

২০২০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৯ ডলার। এই হিসেবটা পিপিপি বা পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটিকে হিসেবে নিয়ে করা। বাংলাদেশকে এখন একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলে গণ্য করা হয়।

সিইবিআর এর সূচক অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন এক নম্বর শক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে চীন এবং জাপান। প্রথম দশটি দেশের তালিকায় এরপর ক্রমান্বয়ে আছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং কোরিয়া।

২০৩৫ সাল নাগাদ এই প্রথম দশটি দেশের তালিকা থেকে ঝরে যাবে ইতালি, কানাডা এবং কোরিয়া। তাদের স্থলে প্রথম দশটি দেশের তালিকায় ঢুকবে ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল এবং রাশিয়া।

২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের প্রথম ২৫টি দেশের তালিকায় যুক্ত হবে তিনটি নতুন দেশ: ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং বাংলাদেশ। এর মধ্যে ভিয়েতনামের অবস্থান হবে ১৯, ফিলিপাইনের ২২ এবং বাংলাদেশের ২৫।

যেসব অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যাবে তার মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, ইসরায়েল, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নাইজেরিয়া, বেলজিয়াম, সুইডেন, ইরান এবং তাইওয়ান রয়েছে তালিকায়।

তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বাংলাদেশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ আলাদা জায়গা করে নিচ্ছে।

সামাজিক সূচকেও অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এগিয়ে বাংলাদেশ, বিশেষ করে নারী শিক্ষা, নারী-পুরুষ সমতায়ন, সামাজিক সচেতনতার সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বলয় তৈরি এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। বলা চলে ২০৩৫ সাল নাগাদ নিজেকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা