April 20, 2024, 12:31 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2022-08-23 23:15:48 BdST

সিলেট ও হবিগঞ্জে বিক্ষোভকাজে ফেরা নিয়ে দ্বন্দ্বে চা শ্রমিকরা


ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সিলেট ও মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকদের একটি অংশ কাজে ফিরেছে। তবে দাবি আদায়ে বড় একটি অংশ এখনো কর্মবিরতি পালন করছে।

গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে হবিগঞ্জ ও সিলেটে। অবশ্য চা শ্রমিক নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো দু-একদিন লাগবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে গত রোববার রাতে চা শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে তাদের মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন এবং অন্যান্য দাবি পূরণেও পদক্ষেপ নেবেন।

এই আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আগের মজুরিতেই কাজে ফেরার সিদ্ধান্তের কথা জানান চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। যদিও দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে তা ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকদের একাংশ এ মজুরি প্রত্যাখ্যান করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বিকাল পর্যন্ত মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। স্থানীয় মণ্ডপের সামনে তারা বিক্ষোভ করেছেন।

চা শ্রমিক নমিতা বারাইক বলেন, নেতাদের কথা আমরা বিশ্বাস করি না। তারা রাতের আঁধারে চুক্তি করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। অন্যথায় আমরা কাজে যোগ দেব না।

মালনীছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. আজম আলী বলেন, শুনেছি শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। তবে কেউ কাজে যোগ দেননি। সিলেটের খাদিম ও শ্রীমঙ্গলের জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরীও বলেন, প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েও শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন। কোথাও কাজ করছেন না। তবে আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা কাজে যোগ দেবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে কাজে ফিরেছেন লাক্কাতুরা, দলদলিসহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের কিছু বাগানেও শ্রমিকরা কাজ শুরু করেছেন। তবে সংখ্যায় তা নগণ্য।

এ বিষয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, গতকাল প্রায় ভোরে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে সিদ্ধান্তের লিখিত কপি সব বাগানে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে শ্রমিকদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে আজ থেকে সবাই কাজে যোগ দেবেন বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রোববার রাতে সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করছেন। তবে দুর্গা পূজার আগে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রমিকদের বিষয় বিবেচনা করে ওই সময় প্রধানমন্ত্রী মজুরি নির্ধারণ করবেন বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। গতকাল থেকে প্রতিটি চা বাগানের শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে সব চা বাগানে কাজ শুরু হতে এক-দুদিন সময় লাগবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে।

আপাতত চলমান মজুরি অর্থাৎ ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে আলোচনার পর মজুরির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনায় চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে।

অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা। গতকাল দুপুরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চুনারুঘাটের চান্দপুর বাগানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

চান্দপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাঁওতাল বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের কাজে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়নি। তারা যদি প্যাডের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে কাজে যাওয়ার নির্দেশনা দেয় তাহলে আমরা কাজে যাব। তবে অবশ্যই ৩০০ টাকা মজুরি নিয়ে। এর কম হলে আমরা কাজে যাব না।

বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, আমরা চাই দ্রুত বাগান সচল হোক। কারণ বাগান বন্ধ থাকলে মালিক, শ্রমিক তথা দেশ সবারই ক্ষতি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা