March 19, 2024, 5:27 pm


সামি

Published:
2018-05-22 03:29:37 BdST

নেপথ্যে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালের একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট ঘুষের বিনিময়ে মিলে মামলার রায়


বিশেষ সংবাদদাতা

কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালে চলছে হযরবল অবস্থা। বিচার প্রার্থীদের মামলা নিষ্পত্তিতে রয়েছে চরম ভোগান্তি। সুনির্দিষ্ট হারে চাহিদা মতো টাকা দিলে স্বল্প সময়ে মেলে মামলার নিষ্পত্তি।

সাধারনত অন্যান্য আদালতের মামলা আর কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালের মামলার ধরন আলাদা। সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট অফিস তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে কাস্টমস ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করে থাকে।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাত যাকে বলে রাষ্ট্রের রক্ত; জাতীয় রাজস্ব আদায়ের সেক্টর যেখানে তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকিবাজদের ধরা হয়। অনেক কষ্ট করে, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষেত্র বিশেষে জীবন বাজি রেখে ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকিবাজদের ধরে থাকে। সংশ্লিস্ট কমিশনারেট অফিসের আদেশ এর বিরুদ্ধে আপীল হয় উক্ত আদালতে।

যে সকল মামলা অর্থের বিনিময়ে নিষ্পত্তি হয়; সেখানে রাষ্ট্র হেরে যায়, জিতে যায় একশ্রেণীর বিচারকেরা। আর যেখানে অর্থ বিনিময় হয় না, সেখানে উক্ত ফাইল পড়ে থাকে হিমাগারে। ফলে দুই দিক থেকেই রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কঠোর নজরদারীর অভাবের কারণে রাষ্ট্র হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকা। আর সেই সুযোগে সম্পদশালী হয়ে উঠছে টাইপিস্ট থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিস্ট কতিপয় কর্তাবৃন্দ।

একটি ছোট কেস স্টাডি কেইস নং VAT-33/2017 ৫/২/২০১৭ ইং তারিখে আপীলাত ট্রাইব্যুনালে মামলাটি আসে কমিশনার; কাস্টমস এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর থেকে। জারিকৃত দাবীনামা নথি নং ৪৯/এ(৮)৬২ অনিয়ম ও মূসক ফাঁকি/ মেসার্স পদ্মা গুল/মূসক/১৬/০৯।

উক্ত মামলায় মেসার্স পদ্মা গুল ইন্ডাস্ট্রিজ, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী এর বিরুদ্ধে ৮/৩/২০১৬ইং হতে ১১/৮/২০১৬ ইং তারিখ পর্যন্ত ভুয়া চালানপত্র ব্যবহার করে ৯৪,৩০৩ গ্রোস গুল অপসারনের বিপরীতে ১, ১৮,৪৪,৪৩৯/১০ টাকা মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ (১) মোতাবেক দাবীনামা সম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।

উক্ত মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসলে ট্রাইব্যুনাল দ্রুত ৮/৫/২০১৭ইং তারিখে নিষ্পত্তি করে আপীলকারী মেসার্স পদ্মা গুল ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে মামলা টি রদ ও রহিত করে।

যেখানে ট্রাইব্যুনালে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকে, শুনানি করে মামলা ঝুলিয়ে রাখা হয়, বারবার তারিখ দেয়া হয়; সেখানে একজন কমিশনারেট  অফিস কর্তৃক উপস্থাপনকৃত কাগজপত্রকে ভুয়া আখ্যায়িত করে আপীল বিভাগের দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি প্রশ্নসাপেক্ষ।

কথিত আছে ন্যূনতম ১৫% অর্থের বিনিময় ছাড়া মামলা নিষ্পত্তি হয় না কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালে। এখানে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে সদস্য, রেজিস্ট্রার, ডেসপাস রাইটার এর দিকেই ভুক্তভোগীদের আঙুল। এক কথায় ১৫% অর্থ বিনিময় হলে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও জরিমানা থেকে মওকুফ পাওয়া যায়। তা না হলে ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর ঘুরতে থাকে। কিছু কিছু মামলার নথি অন্ধকার কোঠায় ফেলে রাখা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে নানান অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় জনপ্রিয় ফিনান্সিয়াল নিউজ পোর্টাল “দি ফিন্যান্সটুডে.নেট” দীর্ঘদিন ট্রাইব্যুনালের দিকে কঠোর নজরদারী রাখার কারণে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য প্রমান হাতে পেয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ও একজন সদস্য মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে ভুয়া মুক্তিযুদ্ধের সনদ দ্বারা চাকরীর অভিযোগ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাদের কারোরই বয়স ন্যুনতম ১২ বছর ৬ মাস ও ছিল না। অথচ মহামান্য হাইকোর্টে রিট করে এরা রয়েছে বহাল তবিয়তে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট খুলনায় চাকুরীকালীন সময়ে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তিনি বরাবরই এসব ম্যানেজ করতে ওস্তাদ। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে তার পদোন্নতি আটকে রেখেছিলেন। কিন্তু নজিবুর রহমানের বদলিজনিত কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব সুরাইয়া পারভীন শেলী এবং যুগ্নসচিব বিশ্বনাথ বনিক ট্রাইব্যুনালের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মারগুব আহম্মদের নিকট হতে কয়েক লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তার পদোন্নতি প্রাপ্তিতে সহায়তা করেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নিকট অভিযোগ জমা পড়েছে।

চাকুরীর সনদ অনুযায়ী মারগুব আহম্মদের জন্ম তারিখ ০১/১১/১৯৬০ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র ১৭/০১/২০১৮ইংতে জারি করা হয় যার স্মারক নং ৪৮.০০.০০০০.০০২.১০.২৬২৪.২০১৭/৭৭২। উক্ত পত্রে মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে কমপক্ষে ১২ বছর ৬ মাস হতে হবে।  এতে করে মারগুব আহম্মদের জন্ম তারিখ ১/১১/১৯৬০ হতে ৩০/১১/১৯৭১ তারিখে তার বয়স হয় ১১ বছর ২৯ দিন।

উক্ত তথ্যানুযায়ী তিনি কোনক্রমেই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। উপরন্তু মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় থেকে মন্ত্রী ১৫/১১/২০১৭ তারিখে শুনানিতে হাজিরা দেয়ার জন্য চিঠি দিলেও তিনি শুনানিতে হাজির হননি।

ট্রাইব্যুনালের সদস্য জাকির হোসেন জেলা ও দায়রা জজ। কিছুদিন পূর্বেও তিনি থাকতেন মতিঝিলের সরকারী কলোনিতে। কিন্তু বর্তমানে তিনি থাকেন নয়াপল্টনে রুপায়নের আলীশান এপার্ট্মেন্টের নিজস্ব ক্রয়কৃত ফ্ল্যাটে। কথিত আছে এই ফ্ল্যাটটির ডেকোরেশনে তিনি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রাইব্যুনালের কর্তাব্যক্তিদের সম্পদের খোঁজখবর দুর্নীতি দমন কমিশন নিলেই বুঝা যাবে এখানে কি পরিমাণ দুর্নীতি হয়। চলতি বছরে এই ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশ সদস্যের চাকুরীর মেয়াদ শেষ হবে। তাই এই চক্র ট্রাইব্যুনালকে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে। এখানে টাকা ছাড়া বিচার পাওয়া অসম্ভব।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা