April 27, 2024, 5:49 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2024-03-26 00:28:20 BdST

কারও রক্তচক্ষু জাতি মেনে নেবে না: শেখ হাসিনা


একাত্তরের ও পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তিরা তাদের পরাজয়ের বদলা নিতে এখনও তৎপর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনও তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ।

সোমবার (২৫ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সরকারপ্রধান এই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সরাসরি সম্প্রচার করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নিশ্চিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। কাজেই কাণ্ডারি হুঁশিয়ার। বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় - জাতির পিতা নির্দেশিত এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই আমরা দেশ পরিচালনা করি। আমাদের কোনো প্রভু নেই, আছে বন্ধু। তাই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার এবং ১৯৭৫ এর পর পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করেছে। একইসঙ্গে আমার দল আমাকে পঞ্চমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব অর্পন করেছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশবাসীর প্রতি আমার কর্তব্য হিসেবে এবং আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য আমি বার বার এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি সকলের সমর্থন এবং সহযোগিতা নিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাবার।

তিনি বলেন, আজকে ২০২৪ সালে স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা কোন অসার বাগাড়ম্বর দাবি নয়। বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা প্রমাণ করেছি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়েও একটি দেশকে এগিয়ে নেয়া যায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ওৎ পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়।

শেখ হাসিনা ভাষণে ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার ইতিহাস তুলে ধরেন। ওই মেয়াদে দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিও তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত পনের বছরের অধিক সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছে। এই পনের বছরের অভিযাত্রা একেবারেই কুসমাস্তীর্ণ ছিলো না।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি দেশি-বিদেশি শক্তির নানা ষড়যন্ত্র আমাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করেছে বার বার। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডর এবং কয়েক দফা প্রলঙ্কারী বন্যা উপকূলীয় এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুধু আমাদের দেশের নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে ধকল কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ আরোপের ফলে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলি চরম সংকটের মুখে পড়েছে। নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি এসব পণ্যের স্বাভাবিক চলাচলও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরসঙ্গে গত বছরের শেষে যুক্ত হয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলী বাহিনীর গণহত্যা।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও জনজীবনে কম দুর্ভোগের কারণ হয়নি। ২০১৩-১৪ সময়ে এবং ২০১৬ সালে বিএনপি-জামাতের দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসন্ত্রাস, অগণিত মানুষ হত্যার মত নৃশংসতা এখনও জনমনে গভীর দাগ কেটে আছে।

তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং তার মিত্ররা এবারও হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসংযোগের মত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিলো। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে এবার তাদের পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। তবুও তাদের হাতে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। এসব অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশের অগ্রগতি কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিগত দেড় দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব রূপান্তর ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অভিঘাত মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সকল খাতে আজকে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এক সময়ের দারিদ্র্য-জরাক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সকল শর্ত পূরণ করেছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হবে।

গত তিন মেয়াদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চলমান রোজার মাসে সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচির কতা তুলে দরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা বেশ আগে থেকেই চিনি, ছোলা, ডাল, ভোজ্য তেলসহ কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলি।

তিনি বলেন, আমরা এই বছর সরকারিভাবে এবং দলগতভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন নিরুৎসাহিত করেছি। আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠন নির্দেশমত তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে। 

মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা চড়া ছিলো। তবে এসব পণ্যের দাম কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সংবিধানকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। জাতীয় সংসদকে আমরা রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। স্থানীয় সরকারের সকল স্তরে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিগণের দ্বারা স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপরে আস্থা রাখার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের উপর আবারও আস্থা রাখার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, যে উন্নয়ন-অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত সাধন করেছি, তা আরও এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। যে বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-মুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা