April 25, 2025, 2:59 pm


নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক

Published:
2025-04-21 15:40:46 BdST

রাজবাড়ীর বালিয়াডাঙ্গি গণহত্যা


১৯৭১ সালে এমনি এই দিনের শেষে রাজবাড়ীর কর্মক্লান্ত মানুষ যখন ছিলেন ব্যস্ত তখন সেই নিরপরাধ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাংক, মর্টার, মেশিনগান, রাইফেলসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানের হানাদার বর্বর সেনাবাহিনী। নির্বিচার তারা বিভিন্ন চালিয়েছিল গণহত্যা। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিলো রাজবাড়ীর বাতাস।

১৯৭১ সালের ২০শে এপ্রিল সন্ধ্যায় হাজার হাজার ছাত্র জনতার উপস্থিতে পদ্মার পাড় মুখরিত হয়ে ওঠে।পাকবাহিনী আসবে এই সংবাদে। তৎকালীন ছাত্র জনতা ও এলাকাবাসীর নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। হাজার হাজার মানুষ লাঠি, ঢাল সরকি, তলোয়ার নিয়ে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারা যখন বাড়ী ফেরার প্রস্ততি নিচ্ছিল তখনই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমন করে বসে। তাদের আধুনিক অস্ত্রের কাছে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি রাজবাড়ীবাসীর।

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তান্ডবলীলা চালায়, রাস্তার পাশে বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয়, হত্যা করা হয় অসংখ্য শিশু, বৃদ্ধা মহিলাকে। এসময়ে তৎকালীন রাজবাড়ী জেলার এস ডি ও ডঃ শাহ ফরিদ এর বর্ননায় গোয়ালন্দ ঘাট প্রতিরোধের বর্ননা ভয়াবহভাবে ফুটে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার বীরত্বের কথা সবাই শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করে আজও।

২১ এপ্রিল গোয়ালন্দ প্রতিরোধ ও গণহত্যা দিবস

১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর দিকে পাকবাহিনী পদ্মাপারের গোয়ালন্দ মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ ঘাট দখলে নিতে আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। এরপর পাকবাহিনী নিরস্ত্র মানুষের উপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়।

জানা যায়, কাকডাকা ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরি করে হানাদার বাহিনী এসে নামে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার উজানচর ইউনিয়নের কামারডাঙ্গি এলাকায়। সেখানে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনীর একটি দল হালকা অস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারি অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে। এসময় শত্রুবাহিনীর বুলেটে শহীদ হন আনছার কমান্ডার মহিউদ্দিন ফকির।

এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ব্যাপক গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের স্বাধীনতাকামী জিন্দার আলী মৃধা, নায়েব আলী বেপারি, মতিয়ার বেগম, জয়নদ্দিন ফকির, কদর আলী মোল্লা, হামেদ আলী শেখ, কানাই শেখ, ফুলবুরু বেগম, মোলায়েম সরদার, বুরুজান বিবি, কবি তোফাজ্জল হোসেন, আমজাদ হোসেন, মাধব বৈরাগী, আহাম্মদ আলী মন্ডল, খোদেজা বেগম, করিম মোল্লা, আমোদ আলী শেখ, কুরান শেখ, মোকসেদ আলী শেখ, নিশিকান্ত রায়, মাছেম শেখ, ধলাবুরু বেগম, আলেয়া খাতুন, বাহেজ পাগলাসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ধারনা করা হয় অজ্ঞাত আরো দেড়শত লাশ এদিক ওদিক ছিটিয়ে ছড়িয়ে ছিলো। সেই থেকে এই দিনটিকে গোয়ালন্দ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে বিবেচনা করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারন মানুষ।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর আব্দুস সামাদ মোল্লা বলেন, ২১ শে এপ্রিল ছিল বুধবার। ভোরে পাক হানাদার বাহিনী গোয়ালন্দ আক্রমন ও নিরস্ত্র মানুষের উপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তা ভাবলে এখনো গা শিউরে ওঠে। আমাদের হালকা অস্ত্রের প্রতিরোধ বেশীক্ষন স্থায়ী না হলেও মূলত ওই দিনই আমাদের সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।

২১ এপ্রিলের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা

তৎকালীন রাজবাড়ী পুলিশের আর্মায়ার সিরাজুদ্দিন খান (কনষ্টেবল নং১০২১) এর মৌখিক নির্দেশে অস্ত্রাগারের সকল রাইফেল ও বুলেট নাম ঠিকানা লিখে মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেন। এবং সেই খাতাটি নিজ দায়িত্বে রেখে সব প্রমান পুড়িয়ে দেন।

তৎকালীন এসডিও ড শাহ মোহাম্মদ ফরিদ তার চোকোস্লোভাকিয়ার তৈরীকৃত ব্রানো ২২ রাইফেল দিয়ে পাক জেট যুদ্ধজাহাজ তাক করে গুলি করেন।

এদিকে ২১ এপ্রিল প্রতিরোধ যুদ্ধস্থলকে স্মরনীয় করে রাখতে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেছে স্থানীয়রা যদি ও অর্থ অভাবে স্থবির হয়ে আছে কাজ দীর্ঘদিন ধরে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.