August 4, 2025, 4:52 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-08-03 03:41:21 BdST

ফ্লাইট এক্সপার্টের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ


বাংলাদেশের অন্যতম বড় অনলাইন ট্রাভেল সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ দেশ থেকে পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও অফিস বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি এবং সাধারণ গ্রাহকরা।

ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের মূল কর্তা গতরাতে গোপনে দেশত্যাগ করেছেন। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

শনিবার (২ আগস্ট) সকালে রাজধানীর মতিঝিলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে গেলে সেটি বন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

ব্যবহারকারীরা জানাচ্ছেন, টিকিট রিফান্ড, বুকিং কনফার্মেশন কিংবা যেকোনো ধরনের সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির হেল্পলাইন থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

ফ্লাইট এক্সপার্টের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের সর্বশেষ পোস্ট ছিল হজ নিয়ে। সেখানে হজ রেজিস্ট্রেশন ও প্যাকেজের মূল্য প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর আর কোনো আপডেট নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক গ্রাহক ও ট্রাভেল ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জয়িতা আফরিন নামে একজন লিখেছেন, ‘ফ্লাইট এক্সপার্টের মতো ট্রাস্টেড কোম্পানি যদি এভাবে পালিয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ আর কাকে বিশ্বাস করবে?’

ফ্লাইট এক্সপার্টের সিইও সালমান তাদের অফিসের অভ্যন্তরীণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছেন, সাঈদ, হোসাইন এবং সাকিব তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তারা খুব সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করে গত বৃহস্পতিবারের মিটিং-এ সব দোষ তার (সালমানের) উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল এবং সালমানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। আজ সকালে তারা ৩ কোটি টাকা বা তার কম টাকা তুলে নিয়েছেন এবং তা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, কোম্পানিটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে।

সালমান আরও জানান, তার দিকে আসা হুমকি এবং দোষারোপের কারণে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি দুঃখিত এবং বলেছেন যে এভাবে চলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। একটি জমকালো লঞ্চ ইভেন্টের মাধ্যমে তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করা হয়। শুরু থেকেই তারা দেশি-বিদেশি ফ্লাইট টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রসেসিংসহ নানা সেবা দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিশেষ করে, সহজ ইউজার ইন্টারফেস, নানা ডিসকাউন্ট অফার এবং মোবাইল পেমেন্টের সুবিধার কারণে স্বল্প সময়ে তারা বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে।

ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে শতাধিক ট্রাভেল এজেন্সি তাদের ক্লায়েন্টদের টিকিট বুক করত। অনেকে আগাম পেমেন্ট করে লাখ লাখ টাকা আটকে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু ট্রাভেল এজেন্সি নয়, সাধারণ যাত্রীরাও টিকিট কনফার্মেশন না পেয়ে দিশেহারা।

শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ সেখানে ভিড় করেছেন। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সির প্রতিনিধি, যাঁরা নিজেদের কেনা টিকিটগুলো কী হবে, তা জানতে চান। কিন্তু কার্যালয়ে গিয়ে অধিকাংশই হতাশ।

এসময় ইউনিয়ন ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মালিক কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সব শেষ ভাই, আমার ভাই ২৫-৩০ লাখ টাকা নাই। আমি শেষ।’ তিনি জানান, তার সবগুলো টিকিটই ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে কাটা ছিল। তবে এসে শুনেছেন, সেগুলো ফ্লাইট এক্সপার্টের সরাসরি টিকিট নয়, অন্য দুটি এজেন্সির মাধ্যমে নেওয়া।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইট এক্সপার্ট নিজেরা সরাসরি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে টিকিট না নিয়ে দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করত। এখন ওই দুটি এজেন্সি নিজেদের কেনা টিকিটগুলো রিফান্ড (ফেরত) করে অর্থ তুলে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

এই বিষয়ে ফ্লাইট এক্সপার্টের সেলস ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, গতরাতেই আমাদের মালিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অফিসের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হচ্ছে না। আমরা মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি এই বিষয়ে। 

মতিঝিল সিটি সেন্টার ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরাও জানান, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রশিদ নিয়মিত অফিসে আসতেন। তবে তিন দিন ধরে তিনি অনুপস্থিত।

সেখানে থাকা একটি এজেন্সির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছোট এজেন্সিগুলো টিকিট বুকিংয়ের জন্য বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভর করতে বাধ্য। এই নির্ভরতাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.