August 17, 2025, 5:33 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-08-16 19:22:24 BdST

সিন্ডিকেটের হোতা সচিবের আপন খালাতো ভাইবিমান সচিবের বিরুদ্ধে টিকিট সিন্ডিকেটকে সহযোগিতার অভিযোগ


উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রির সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরিন জাহানের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। পদে বসেই তিনি আকাশ পথের যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণে মনোযোগী না হয়ে সিন্ডিকেটের পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত নাসরীন জাহান সাত বছর দুবাইয়ে শ্রম কাউন্সিলর ছিলেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির কারণে যুগ্ম সচিবের পর তিনি আর পদোন্নতি পাননি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে নিজেকে বঞ্চিত দাবী করে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

পতিত শেখ হাসিনার হাসিনার সুবিধাভোগী হয়েও ব্যাপক আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন, যা অবিশ্বাস্য ও অবাক করার মতো বিষয়।

আকাশ পথে যাত্রীদের স্বার্থ সংরক্ষণে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করার লক্ষ্যে ২৬টি ট্রাভেল এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বেসামরিক বিমান পরিহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এজেন্সিগুলো যাত্রীর প্রকৃত পরিচয় ছাড়াই আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের টিকেট ব্লক করে রেখে উচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে আসছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এজেন্সিগেুলো তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতি আকারে কারন দর্শানোর নোটিশের জবাব দেয়।

বিমান মন্ত্রণালয় কর্তৃক আকাশ পথে যাত্রী সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ট্রাস্কফোর্স গঠন করে। কিন্তু সচিব নাসরিন জাহান টাস্কফোর্সের কাজ থামিয়ে দেন। এই বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে নানা গুঞ্জন। সচিবের নির্দেশনার কারণেই সরকারি কোনো মনিটরিং নেই। ফলে টিকিটের বাড়তি দামের কারণে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করা শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীদের নাভিশ্বাস অবস্থা। ঢাকা থেকে জেদ্দার আপডাউন ১টি টিকিট যার মূল্য ৭০ হাজার টাকা সেই টিকিট এখন এক লক্ষ দশ হাজার টাকার কাছাকাছি উঠে গিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে সচিব নাসরিন জাহান মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে টাস্কফোর্সের কাজ বন্ধ রাখেন। ফলে দেড় থেকে দুই গুন দামে বিমান টিকেট কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের।

উল্লেখ্য যে, নাসরিন জাহান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ (শিবালয়-ঘিওর-দৌলতপুর) আসনে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঈগল প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ (এস এম জাহিদ) এর আপন খালাতো বোন।

বর্তমান সময়ে এয়ার টিকিট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রবাসী ও শ্রমিক যাত্রীদের অতিরিক্ত দামে টিকিট কিনতে বাধ্য করে তিনি একদিকে সিন্ডিকেট থেকে নিজে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে প্রবাসী ও শ্রমিক যাত্রীদেরকে সরকারবিরোধী মনোভাব উস্কে দিয়ে  একটি বিশৃংখল পরিস্থিতি তৈরি করে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এর ফলে যে কোন সময় প্রবাসীদের কর্তৃক রেমিটেন্স ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

নাসরিন জাহান তার খালাতো ভাইকে ব্যবহার করে একটি চক্রকে টিকেটে সিন্ডিকেট গঠন ও অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, নাসরিন জাহান কমিশন ছাড়া কোন কাজ করেন না। যেকোনো ফাইল তার কাছে আসলে ফাইল আটকে রেখে ঘুষের বিনিময়ে ফাইল ছাড়েন। দুর্নীতির কারনে তাকে দুবাই থেকে প্রত্যাহার করা হয়। দুর্নীতির কারণে যুগ্ম সচিবের পর তিনি আর পদোন্নতি পাননি।

নাসরিন জাহানের দুই বোন কানাডা প্রবাসী। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বড় অংকের অর্থ কানাডায় পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার দুই কন্যা সন্তানও কানাডা প্রবাসী। কানাডায় নাসরিনের বাড়ি ও দুটি গ্যাস স্টেশন থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকার মিরপুরে রয়েছে তার একাধিক বাড়ি।

জানা গেছে, এয়ার টিকিট সিন্ডিকেটকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা হিসেবে বেরিয়ে এসেছে নাসরিন জাহানের নাম। প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস আকাশ পথে যাত্রী সাধারণের স্বার্থে যে ১০ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন সেই নির্দেশনা না মেনে ব্যবসা করার সকল রকমের সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন এই বিমান সচিব নাসরিন জাহান। স্বরাষ্ট্র সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে গঠিত এয়ার টিকিটের অতি উচ্চ মূল্য বৃদ্ধির তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টটি আজ পর্যন্ত মুখ দেখেনি এই নাসরিন জাহানের কারণে। এমনকি এই তদন্ত রিপোর্টে তিনি তার সচিব পদের প্রভাব বিস্তার করে অনেকের নাম বাদ দিয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, সুনির্দিষ্টভাবেই ৩০টি এজেন্সি ও ১১টি এয়ারলাইন্সের জিএসএ অভিযুক্ত ছিলো অথচ তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে তিনি কোন কাজ করতে দেননি। একের পর এক ট্রাভেল এজেন্সি ও জিএসএ'দের শুধুমাত্র কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে কয়েকশো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। টিকিট সিন্ডিকেটের জন্য দায়ী সকল জিএসএ ও এজেন্সিদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। যে কারণে বর্তমান সময়ে আবার টিকিটের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই বিষয়ে বিমান উপদেষ্টাকেও অন্ধকারে রেখেছন নাসরিন জাহান।

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে নাসরিন জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.