August 18, 2025, 8:44 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-08-18 12:47:21 BdST

রেলে আধুনিকতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ডিজি বদ্ধপরিকর


বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন দক্ষ ও পরিশ্রমী একজন কর্মকর্তা। তিনি পতিত সরকারের দোসরদের সব চক্রান্ত ধুলিস্যাৎ করে দিয়ে রেলওয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি রেলওয়েতে আধুনিকতা এবং শৃঙ্খলা ফিরতে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কর্মকর্তার দক্ষতা ও দূরদর্শিতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তার সততা ও নিষ্ঠাবান কাজের অগ্রগতি থামিয়ে দিতে রেলওয়েতে ঘাপটি মেরে থাকা পতিত সরকারের দোসর, একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে রেলকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।

লোকোমোটিভ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে বহু ইঞ্জিন অচল অবস্থায় পড়ে থাকার সাথে সরাসরি এই আওয়ামী দোসররা দায়ী । এই অচলাবস্থা থেকে রেহাই পেতে মহাপরিচালক আফজাল হোসেন রেলের প্রতিটি সেক্টর নিজেই তদারকি করছেন। কর্মচারীদেরকে কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। কিন্তু সুবিধাবাদীরা তাদের স্বার্থ রক্ষায় দক্ষ ও পরিশ্রমী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে রেলওয়েকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। স্বার্থান্বেষী ও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে রেলওয়েকে বাচাঁতে বদ্ধপরিকর রেলের ডিজি।

প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন। তিনি প্রকৌশল ক্যাডারের ত্রয়োদশ বিসিএস এর একজন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী পদে ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল যোগদান করেন আফজাল হোসেন। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে দায়িত্ব পালন এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো), বাংলাদেশ রেলওয়ে পদে কর্মরত ছিলেন।

প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন ১৯৯৪ সালে রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি হতে মৌলিক ও চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ; বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) হতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ; ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্ত করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী-১ (ঢাকা); সেতু প্রকৌশলী (পূর্ব); নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন,পশ্চিম); বিভাগীয় প্রকৌশলী (ঢাকা); অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম); বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (পাকশী); প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিম) পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি প্রকল্প পরিচালক পদে খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প; ঢাকা-টঙ্গীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন ১৯৬৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এলাসিন তারক যোগেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, টাঙ্গাইল হতে প্রথম বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ হতে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযু্ক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ মাস্টার্স অব আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (MURP) এ ভর্তি হন। MURP'তে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ত্রয়োদশ বিসিএস পরীক্ষায় অবতীর্ন হন এবং সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে এক বছর চাকুরী করেন।

চাকুরী জীবনে প্রকৌশলী আফজাল হোসেন একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়েতে পরিচিতি লাভ করেছেন। মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন অফিসে উদ্ভাবনী ও উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি রেলওয়েতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী সেবার মানোন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি ২০১৫ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় হতে সম্মাননা লাভ করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামো ও রোলিং স্টক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে রেলওয়ের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশসমূহ হলো চায়না, দক্ষিন কোরিয়া, ভারত, জাপান। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- Land Use Planning (BUET); Middle Management Training on Track Maintenance; National Training on Public Procurement from Bangladesh Institute of Management, Dhaka; FIDIC Contract Training from Construction Supervision Consultant, Bangladesh Army.

রেলওয়ে ডিজি (মহাপরিচালক) হিসেবে মোঃ আফজাল হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নতুন রেলপথ স্থাপন, পুরনো রেলপথের আধুনিকীকরণ, যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন এবং রেলওয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধি।

বাংলাদেশ রেলওয়ের উল্লেখযোগ্য সাফল্য

পুরনো রেলপথের পুনর্বাসন ও আধুনিকীকরণ। পুরনো রেলপথগুলোকে আধুনিকীকরণ করে সেগুলোর মানোন্নয়ন, সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নতুন ইঞ্জিন ও বগি সংযোজন করে রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

যাত্রীসেবার মান উন্নয়ন

যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শতভাগ অনলাইনে টিকিট, উন্নত যাত্রী বিশ্রামাগার এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা।

রেলওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে RPF (Railway Protection Force) এর আধুনিকায়ন এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নতুন ট্রেন সংযোজন

নতুন নতুন ট্রেন সংযোজন করে যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কিছু নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

অন্তর্বতীকালীন সরকারের সময়ে রেলওয়ের উল্লেখ্য অর্জনসমূহ

১. যমুনা রেল সেতুর কাজ সম্পন্ন করে ব্রিজের ওপর ডাবল লাইন চালু করা হয়েছে। এতে ব্রিজের উপর ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময় সাশ্রয় হচ্ছে। তাছাড়া কোন গতি নিয়ন্ত্রণ, লোড নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

২. পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ২য় ফেইজ ভাংগা যশোর সেকশনে ৮৬ কিমি রেলপথ উদ্ধোধন করা হয়েছে।২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে খুলনা - ঢাকার জাহানাবাদ এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-বেনোপোলের মধ্যে রুপসী বাংলা ট্রেন উদ্ধোধন করা হয়ছে।

৩. ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-নরসিংদী এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নতুন কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা ঢাকা এর মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে নবনির্মিত রেলপথে জাহানাবাদ এবং ঢাকা বেনাপোলের মধ্যে রূপসী বাংলা ট্রেন চালু করা হয়েছে।

৪. সুষ্ঠু রেল ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত দুইটি ঈদে ট্রেনের কোন শিডিউল বিপর্যয় এবং দুর্ঘটনা ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনাও ঘটেনি।

৫. জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য JICA এর সাথে loan Agreement স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে এই অংশে শীঘ্রই ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ আরম্ভ হবে।

৬. চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনে মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজ এ রূপান্তর এর জন্য এডিবি এর সহায়তায় চট্টগ্রাম হতে দোহাজারী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র অনুমোদিত হলে কাজটি আরম্ভ হবে।

৭.EDCF কোরিয়ান অর্থায়নে কালুরঘাট এলাকায় বিদ্যমান পুরাতন রেল ব্রিজের উজানে একটি রেল কাম রোড ব্রীজ নির্মাণের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

৮. টিকিটের কালোবাজারি রোধ এবং শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে সকল স্টেশনে টিকিট চেকিং ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অনলাইনে টিকিট কালোবাজারি রোধে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

৯.বাংলাদেশ রেলওয়ের গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে অপারেটিং রেশিও ছিল ২.৫। বর্তমানে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে অপারেটিং রেশিও ২.০৯। এতে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে তুলনামুলক ভাবে অর্থ্যাৎ ব্যয় ও আয়ের পার্থক্য কমে এসেছে।

ডিজির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আওয়ামীপন্থী দোসররা

ভারতের ইন্ধনে বাংলাদেশ রেলওয়েকে ধ্বংসের গভীর চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আর ভারতের চক্রান্ত ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন বর্তমান রেলওয়ের ডিজি প্রকৌশলী মোঃ আফজাল হোসেন। এরই পরিপেক্ষিতে আওয়ামীপন্থী একটি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে অপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।

খোঁজ জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে বর্তমানে এক অস্বাভাবিক অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে রেলকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লোকোমোটিভ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতির কারণে বহু ইঞ্জিন বর্তমানে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এই অচলাবস্থার পেছনে রেলওয়ের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি রেলওয়ের স্টোর এবং মেকানিক্যাল বিভাগকে দুর্বল করে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন। ওয়ার্কশপগুলো প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের জন্য স্টোর বিভাগে চাহিদাপত্র পাঠালেও তা অনুমোদনের পর্যায়ে নানা প্রশ্ন ও অজুহাতে আটকে যাচ্ছে। এসব ফাইল যখন তার কাছে অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়, তখন তিনি তা ফেরত পাঠিয়ে দেন সিসিএস-এ তথাকথিত ‘কোয়ারি’র নামে। ফলে মালামাল সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণ থেমে যাচ্ছে এবং যাত্রীসেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

গত ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখে ‘রেল নিউজ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন ছড়ানো হয়, যেখানে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ডিজি মো. আফজাল হোসেনকে জড়িয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। অথচ তিনি একজন সজ্জন, ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা। এই প্রতিবেদনটি শুধু মানহানিকরই নয়, রেলওয়ের মতো একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করতেই করা হয়েছে। রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশব্যাপী যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ চলছে। এই ধরনের ভিত্তিহীন প্রচারণা সেই প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করার নিন্দনীয় চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। ডিজি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অতীতের ফ্যাসিবাদী শাসনের মতো রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষা না করায় জিডি আজ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।

সূত্র জানায়, চীনের কর্মকর্তারা সে সময় বাংলাদেশের রেলমন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত বৈঠক করতে থাকেন। উদ্দেশ্য প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিমি. স্পিডের বুলেট ট্রেন চালু করা। সমস্ত নথিও রেডি, সম্ভাব্যতা যাচাইও শেষ, নকশা চূড়ান্ত করাও শেষের পথে বাকি শুধু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার একটা মূল্যবান সাইন। কিন্তু বিধিবাম সেখানেই হাসিনার কাছে একের পর এক ফোন আসতে থাকে দিল্লি থেকে। দাদাবাবুরা যে নারাজ বাংলাদেশে ৩০০ কিমি. স্পিডের বুলেট ট্রেন চালুর ব্যাপারে। বাঙালিদের কপাল পুড়িয়ে হাসিনা সেদিন ভারতের কৃতদাসীর মতো আর সাইন করলেন না সেই ফাইলে। এর সাথে সাথে বুলেট ট্রেনের যুগে প্রবেশ করাও হলো না বাংলাদেশের। প্রকল্পের সেই ফাইল রেল ভবনেই পড়ে রইলো নীরবে নিভৃতে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে দেশকে যেভাবে চালিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে বাংলাদেশ কোনো আলাদা রাষ্ট্র নয় বরং ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো প্রদেশ। আর হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন বরং মোদি সরকারের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।

২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এই মাস্টারমাইন্ডের নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি হাত দেন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আটকে থাকা সব প্রকল্পে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকায় এলেন চীনের কর্মকর্তারা, বৈঠক হলো, সকল প্রস্তুতিও এবার সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু এগিয়ে যাবার পালা আর বিশ্বকে দেখানোর সময় যে, আমরাও বুলেট ট্রেনে চেপে পা রেখেছি একুশ শতকে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম দ্রুতগতির ট্রেন চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে তা বিরাট প্রভাব ফেলবে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিমিষেই যেতে পারবে চট্টগ্রামে আবার কাজ সেরে দিনেই চলে আসতে পারবে রাজধানীতে এতে বাড়বে কাজের গতিও। যেখানে বর্তমানে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা সেখানে তখন লাগবে মাত্র ৫৫ মিনিট। একসাথে এই বুলেট ট্রেন পরিবহন করতে পারবে ৫০০ জন যাত্রী। দ্রুত গতির এই রেলসেবা চালু হলে বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থানও। কারণ এই প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হবে ৬টি স্টেশন। এগুলো হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম। প্রতিটি স্টেশনের আশপাশে গড়ে উঠবে শিল্প এলাকা আসবে বিদেশি বিনিয়োগও। এভাবেই লাখ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বুলেট ট্রেনের এই পকল্প ঘিরে। এবার আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা নেই, তবে তাদের লোকজন ঠিকই নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের ডিজি মো. আফজাল হোসেনের মাস্টারপ্লানের কাছেই হার মানবে ভারতের সকল ষড়যন্ত্র।

রেলওয়ের কর্মচারীরা বলছেন, এ যেন এক পরিকল্পিত ব্যর্থতা। স্টোর এবং ওয়ার্কশপকে অকার্যকর দেখিয়ে লোকোমোটিভ ও বগি মেরামতের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সদ্য পতিত এক ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার দুর্নীতিগ্রস্ত বেসরকারিকরণ প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বলে মনে করছেন তারা। রেলওয়েতে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন পতিত সরকারের দোসররা। তারা রেলওয়েকে অকার্যকর করতে নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। ঘটছে প্রতিদিন অপ্রীতিকর ঘটনা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.