September 2, 2025, 4:24 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-09-02 10:30:50 BdST

বিএনপির সামনে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ


১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বিপথগামী একদল সেনাসদস্যের হাতে শাহাদাত বরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবর্তমানে বিএনপি টিকবে না এমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং কিছু মিডিয়া। মাত্র তিন বছরের কম বয়সী শিশু বিএনপি শুধু টিকেই যায়নি, গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়চেতা, নিরাপস ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়ে যায় দুর্দান্ত গতিতে। শুধু তাই নয়, দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এক দশকের মাথায় ১৯৯১ সালে বিপুল সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় বিএনপি।

ওয়ান-ইলেভেনের পর ফের খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে দলকে অস্তিত্বের সংকটে ফেলার দুরভিসন্ধি হয়েছিল। অনেকে দলটির ভবিষ্যৎ নেই বলে তাচ্ছিল্যভরে হরেক রকম মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দলটি টিকে আছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই, উত্থান-পতন আর ভাঙা-গড়ার খেলা মোকাবিলা করে। ষড়যন্ত্রকারীরা শত চেষ্টা করেও দমিয়ে রাখতে পারেনি বিএনপিকে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জন্ম হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ মধ্যপন্থি এই রাজনৈতিক দলটির। চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা বিএনপি দীর্ঘ দেড় যুগের ঘোর অমানিশা কাটিয়ে আবার দলটির সামনে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন হাতছানি দিচ্ছে। স্বস্তির শ্বাস নিতে পারছে দলটি। ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় এক অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পলায়নের পর ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

গত দেড় যুগ ধরে সবকিছুই ছিল বিএনপির প্রতিকূলে।ওয়ান-ইলেভেনের পর সেনা-সমর্থিত শাসনে পর্যুদস্ত হয় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সহ দলের নেতাকর্মীরা। ২০০৮ সালের মইন-ফখরুদ্দীনদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়ায় পাতানো নির্বাচনে ভরাডুবি হয় বিএনপির। অবর্ণনীয় নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে নিঃশেষ করে দিতে রাষ্ট্রীয় স্বৈরশক্তি সর্বাত্মক চেষ্টা করে । ২০১৩ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি ক্ষমতার চৌহদ্দি থেকে অনেক দূরে চলে যায়। নেতাকর্মীরা অনেকটাই হতাশাগ্রস্ত ও হতোদ্যম হয়ে পড়েন। খোদ শীর্ষ পর্যায়েই হতাশার ছায়া পড়তে দেখা যায়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে অন্য অনেকের মতো বিএনপিও কিছু সুবিধা ইতোমধ্যে পেয়েছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিধি-নিষেধের শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছেন। কারাবন্দি নেতারা মুক্তি পেয়েছেন। নিপীড়নমূলক মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে এবং হচ্ছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দেয়া ফরমায়েশি সাজার রায়গুলো বাতিল হয়েছে। তার বক্তব্য প্রচারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। দল হিসেবে বিএনপি মিডিয়ায় প্রাপ্য প্রচারসুবিধা পাচ্ছে। প্রশাসনেও বিএনপির মতাদর্শের অনেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। বুক ভরে শ্বাস নিতে পারছেন দলের নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা। বাসাবাড়িতে ঘুমাতে পারছেন তারা। মামলার জালে আটকে তছনছ হয়ে যাওয়া লাখো জাতীয়বাদী পরিবারে স্বস্তির সুবাতাস বইছে। মিটিং-মিছিল করতেও কোন বাধাঁর সম্মুখীন হতে হচ্ছেনা।

প্রায় ১৯ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ও জিয়া পরিবার এখনো বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কালজয়ী জাতীয়তাবাদী আদর্শ আর উন্নয়ন, উৎপাদন ও জনগণতান্ত্রিক রাজনীতিই বিএনপির মূল শক্তি। সেই আদর্শ থেকে খানিকটা বিচ্যুতি ঘটেছে—এমন অভিযোগ ও আক্ষেপ করছেন দলটির কোনো কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী। ‘দেশ মৌলবাদের অভয়ারণ্য’ হওয়ার শঙ্কা কিংবা অতিমাত্রায় বাম-প্রেম ভুল বার্তা দিচ্ছে। যদিও বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা আদর্শিক বিচ্যুতির অভিযোগ কবুল করতে নারাজ। তবে দলের মধ্যে হাইব্রিডদের চামচামি বেড়ে যাওয়ায় ত্যাগীরা মনক্ষুন্ন। কমিটি গঠনে আদান-প্রদানের অভিযোগও উঠেছে। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকায় এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যারা টাকা লুফে নিচ্ছে তাদের আখের ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ত্যাগী নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মতে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে বাংলাদেশের অবস্থা যেমনটা ছিল, ঠিক তেমনি প্রায় পাঁচ দশক আগে পঁচাত্তরের আগস্টে বিপ্লবপূর্ব দেশে ছিল ব্যাপক দুর্নীতি, অরাজকতা ও অস্থিরতা। হতাশা, ক্ষোভ, বঞ্চনা, আর সীমাহীন বৈষম্য। একদলীয় দুঃশাসনে পিষ্ট-অতিষ্ঠ জনগণের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি একদলীয় বাকশালি শাসন কায়েমের পর রুদ্ধ হয়েছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পথ।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তার পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে করা হয় এ দলের আহ্বায়ক। জাগদল গঠনের পর একই বছর ‘জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’ নামে একটি রাজনৈতিক জোট গঠিত হয়। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১৩ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এই নির্বাচনে জেনারেল ওসমানীকে হারিয়ে বিপুল ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন জেনারেল জিয়াউর রহমান।

নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পরই জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সংবাদ বসম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিলুপ্তি ঘটে জাগদল ও ঐক্যফ্রন্টের। ঘোষিত ১৯ দফাকেই নবগঠিত বিএনপির মূল আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। জিয়াউর রহমান প্রথমে দলের আহ্বায়ক এবং পরে চেয়ারম্যান হন। প্রথম মহাসচিব হন অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। মুক্তদ্বার নীতি গ্রহণ করে দলকে ব্যাপক ভিত্তিতে একটি জাতীয়তাবাদী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রূপ দিতে জিয়াউর রহমান দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থি মতাদর্শের রাজনীতিকদের স্বাগত জানান। তখন দলের ৪৫ শতাংশেরও বেশি নেতাকর্মী ও সদস্য ছিলেন রাজনীতিতে নবাগত ও তরুণ। দলের প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়—অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্য ও জনগণের মধ্যে স্বনির্ভরতার চেতনা সৃষ্টি। পাশাপাশি চারটি মূলনীতি ছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালে গোটা জাতি ছিল বিভক্ত। আর এই বিভক্তি ছিল ডান, মধ্য ও বাম ইত্যাকার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে বা করেনি কিংবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বা বিপক্ষ শক্তি হিসেবেও। ফলে ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী ও সংস্কৃতিসেবীর মতো সামাজিক শক্তিগুলোও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। আমলা এমনকি সামরিক বাহিনীও মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রপতি জিয়ার বিএনপি গঠনের প্রধান লক্ষ্য ছিল এ বিভাজন দূরীকরণ এবং গোটা জাতি যাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একক সত্তা হিসেবে কাজ করতে পারে, সেজন্য বিবদমান গোষ্ঠী ও উপদলের একত্রীকরণ। জিয়াউর রহমান শুধু তার প্রতিষ্ঠিত দল নয়, বাকশালের কারণে বিলীন হয়ে যাওয়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ করে দেন। বিলুপ্ত হওয়া আওয়ামী লীগকেও নিজ নামে রাজনীতি করার পথ সুগম করে দেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান । যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ভুলে গিয়ে বিএনপিকে ক্ষতবিক্ষত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো।

বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়েছে বিএনপিকে। দল গঠনের মাত্র দু’বছরের মাথায় কতিপয় দেশদ্রোহী বিপথগামী সেনার হাতে প্রাণ দিতে হয় ইতিহাসের সফল ও নন্দিত রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানকে। তারপর দলের হাল ধরেন গৃহবধূ বেগম খালেদা জিয়া। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াইয়ে আপসহীন ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে তার। নব্বইতে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারে নেতৃত্ব দেন। বস্তুত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অপরিমেয় দেশপ্রেম কাল হয়েছে দলটির। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দু’মেয়াদে ক্ষমতায় গিয়ে দেশের উন্নয়নে যেমন অবদান রেখেছে বিএনপি, তেমনি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে বিপর্যয়ের মুখেও পড়েছে বারবার।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সামনের চ্যালেঞ্জগুলো ভিন্নমাত্রিক। যে কয়টি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে এবারের নির্বাচনের ঢের তফাত রয়েছে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট বিএনপির ধানের শীষে পড়েছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, এমন ভোটাররাও আওয়ামী লীগ ঠেকাতে বিএনপিকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছে শহীদ জিয়ার দল। ১৯৯৬ সালে জয় না পেলেও ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হতে পেরেছিল। সামনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকছে না। ফলে কাছাকাছি মতাদর্শের বিকল্প থাকছে ভোটারদের সামনে। এবার দলের নেতাকর্মীদের বাইরের পপুলার ভোট টানতে বিএনপিকে প্রমাণ করতে হবে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি মতাদর্শের রাজনীতিতে তারাই শ্রেষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ এবার প্রায় সম-মতাদর্শের বিকল্প রয়েছে ভোটারের সামনে।

আওয়ামী লীগ স্বনামে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও তাদের ভোট কোন বাক্সে যায় এবং ভোটের বাক্সে তার কী প্রভাব পড়ে, সেটিও বিএনপির সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এছাড়া দেড় দশক ধরে ভোট দিতে না পারা প্রায় ৪০ শতাংশ তরুণ ভোটার কী করবে, সেটাও অজানা। নির্বাচনী ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যাওয়ায় ভোটের মানচিত্র বর্তমানে কেমন রূপ নিয়েছে, তা কারো জানা নেই।

বিভিন্ন জরিপ বলছে, প্রায় অর্ধেক ভোটার মন খুলে বলছেন না, আগামী নির্বাচনে কাদের ভোট দেবেন তারা। ফলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন যে অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জের হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি এরই মধ্যে অনুধাবন করেছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন যতটা সহজ হবে ভাবছেন, ততটা সহজ নয়।’

প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগমুক্ত রাজনীতিতেও বিএনপির পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক রাজনীতিতে হাল ধরবেন, এমন আশা ছিল অনেকের মনে। কিন্তু ঢাকায় এবং লন্ডনে চিকিৎসার পরও রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পর্যায়ে বেগম খালেদা জিয়ার সক্রিয়তা প্রত্যাশার চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। সাজা ও মামলার খড়গ থেকে এরই মধ্যে মুক্ত হয়েছেন দলের বর্তমান প্রাণপুরুষ নির্বাসিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। কিন্তু নিরাপত্তাসহ নানা জটিল সমীকরণে তিনি এখনো বিলাত প্রবাসী। ডিসেম্বরের শুরুতে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই দেশে ফিরে আসবেন তারেক রহমান।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে অনুকূল ময়দান পেলেও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-সংশয় বিএনপিকে আশা-নিরাশার দোলায় দোলাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ, পতিত হাসিনা সরকারের নিপীড়নমূলক মামলা, সাজার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এবং জন-আকাঙ্ক্ষার আলোকে রাষ্ট্র সংস্কারের ধরন ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে নানা ধরনের চাপ সামলাতে হচ্ছে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ায়। টানাপোড়েনও হয়েছে সময়ে সময়ে। লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক ও যৌথ ঘোষণায় বরফ গললেও অজানা নানা আশঙ্কা এখনও বিএনপিকে তাড়া করছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হলেও সরকারের মধ্যেই একটি অংশ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে বলে খোলামেলা অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দীর্ঘ স্বৈরশাসনে নিপীড়িত, বঞ্চিত ও বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সামলে রাখার কঠিন কাজটি করতে গিয়ে দলটিকে গত বছরজুড়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। পাঁচ হাজারের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। স্বল্পসময়ে এত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো অপ্রিয় কাজটি নেতৃত্বের কাছে অত সহজ ছিল না। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে নিজেদের অবস্থান নিয়েও মাঝে মাঝে দোলাচলে পড়তে হচ্ছে দলটিকে। আবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযাত্রী জামায়াতের নব-উত্থানও স্নায়ুচাপ বাড়িয়েছে।

এদিকে, নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশে অস্থিরতা বাড়ছে। একের পর এক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন ও টেকসই গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে চোখ রাঙাচ্ছে দেশি-বিদেশি অশুভ শক্তি। এসব ক্ষেত্রে বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিএনপি বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, উদারনীতি ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হলে পাতের ভাতে ছাই পড়ার আশঙ্কা হবে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে বিএনপিকে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.