October 25, 2025, 2:14 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-10-25 00:06:51 BdST

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার আমলনামাতারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিটি থানা, উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দলের জন্য কাজ করার আদেশ জারি করেছেন। তিনি নেতাকর্মীদের বিনয়ী আচরণ করতে বলেছেন সর্বস্তরের মানুষের সাথে। শুনতে বলেছেন মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা।

মানুষের পাশে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করাই হচ্ছে বিএনপির মূল আদর্শ। যেটি ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ। বাবার আদর্শে গড়া এবং মায়ের দোয়াপ্রাপ্ত তারেক রহমান ইতোমধ্যে দেশের অসহায় মানুষের জন্য নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যেসব জেলা, উপজেলায় বিএনপির রাজনৈতিক কোন্দল রয়েছে সেদিকেও কড়া দৃষ্টি রেখেছেন। ত্যাগী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন পিছিয়ে আছেন সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন তারেক রহমান।

এরই আলোকে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির ভঙ্গুর রাজনীতি এবং দলীয় কোন্দলের কারণে দলের শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও পদ বঞ্চিত নেতৃবৃন্দ।

জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির পুর্নাঙ্গ কমিটি নেই প্রায় তিন বছর। তৃনমুল নেতাদের সাথে জেলা নেতাদের বিস্তর দুরত্ব। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলছে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে জেলা বিএনপির কোন কার্যালয় নেই। ৫ আগস্টের পর অফিস নেয়ার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেননি। জেলায় শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে কতিপয় নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ৫ আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং আওয়ামী দোসরদের অর্থের বিনিময়ে রক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে।

দোসরদের দলে ভেড়ানো, মামলা বানিজ্যসহ নানা কারণে টাঙ্গাইলে বিএনপির রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এবং জনপ্রিয়তা তলানিতে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের অবমুল্যায়ন। বিএনপি নেতাদের এই সমস্ত গুরুত্বর অভিযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে জামাত সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

ক্ষুব্ধ তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বলেন, ৫ আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পতনের পর টাঙ্গাইলের তৃনমুলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা যে আশায় বুঁক বেঁধেছিল তা অল্প দিনেই ভেঙ্গে যায়। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নির্যাতন আর দুঃশাসনের যে চিত্র তার থেকে বাদ যায়নি টাঙ্গাইল জেলাও। আওয়ামী শীর্ষ গডফাদার ও সন্ত্রাসীরা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী গডফাদাররা তাদের দোসরদের রেখে যায়। দোসররা সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে এখনো বহাল তবিয়তে। অভিযোগ উঠেছে, ৫ আগষ্ট রাত থেকেই আওয়ামী দোসরদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সহ কতিপয় শীর্ষ নেতা।

গত ১৭ বছর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মনোনয়ন বানিজ্য, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের খুন ও হত্যাসহ গায়েবি মামলা দায়ের, বালু-ঘাট নিয়ন্ত্রন করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষন ও হামলা চালানো হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জোয়াহের ইসলামের নেতৃত্বে চলে এসব অপকর্ম। আর সকল অপকর্মের সিপাহশালা ছিলেন একজন আওয়ামী দোসর সাংবাদিক। বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার শেল্টারে আওয়ামী লীগের সকল অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সাধারন সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জোয়াহেরের অন্যতম ওই সহযোগীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার গুরুতর অভিযোগ থাকলেও বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে পুরোপুরি ব্যর্থ। বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ এক নেতা এই অপকর্মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ গডফাদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের নাম শহীদ স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলা থেকে বাদ দেয়ার মূলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর নাম উঠে এসেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে। প্রায় তিন কোটি টাকার বিনিময়ে সর্বপ্রথম শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে বিএনপির সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও এক ছাত্র সমন্বয়ক। আর নেপথ্যে ছিলেন একজন আওয়ামী দোসর সাংবাদিক। এই চারজনে মিলে তিন কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। এই বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পতনের পর দল গোছাতে ব্যস্ত না থেকে জেলা বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতা অবৈধ অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলে নেতৃত্ব দেন। ফলে তৃনমুল, পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে এত সব কুৎসিত অভিযোগ উঠলেও বিএনপির শীর্ষ এক নেতার শেল্টারে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এরা। প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নাকি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. ফরহাদ ইকবালকে মনোনয়ন দিবেন বলে ফোন করে সিগন্যাল দিয়েছেন। যে কারণে ফরহাদ ইকবালের সমর্থকেরা সন্ধ্যা নেমে আসলেই শহরে মিছিল বের করে। এতে শহরজুড়ে প্রচুর যানজটের সৃষ্টি হয়। শহরে চলাচলকারী মানুষের এনিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই।

তারেক রহমানের কাছে টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষের দাবি "আপনার নাম ব্যবহার করে যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক"।

কার্যালয় বিহীন দল

ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়টি হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপর প্রায় ১৮ বছর ধরে কার্যালয়বিহীন বিএনপি। নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য মাঠে নামলেও জেলা বিএনপির কার্যালয়ের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না জেলার সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সাধারন সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। এই অবস্থায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আস্থা হারাচ্ছেন জেলার শীর্ষ এই দুই নেতা। তবে তাদের অনুসারীরা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে অত্যাধুনিক অফিস নিয়ে চাঁদাবাজির ব্যবসা শুরু করেছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল অভিযোগ করেছেন, এরা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে গত এক বছরে আওয়ামী লীগকেও হার মানিয়েছে। যার প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আর এর সুফল ভোগ করতে পারে জামাত।

এদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনার পতনের পর টাঙ্গাইলে বিএনপির ভঙ্গুর রাজনীতির মাঠে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ফলে তাকে ঘিরে নতুন করে আশায় বুক বাঁধে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। দলকে পুনরায় সুসংঠিত ও বঞ্চিত, ত্যাগী নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ শুরু করেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। টাঙ্গাইল সদরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন টুকু।

তিনি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজের পাশাপাশি সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি কর্তৃক ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা তুলে ধরছেন সাধারন মানুষের কাছে। নিরলস পরিশ্রম আর চেষ্টার মাধ্যমে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বিএনপিকে জেলায় শক্তিশালী করছেন। সাধারন মানুষের প্রত্যাশা আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে অন্তত সদরের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারবেন তিনি। একই সাথে সন্ত্রাস, নেশা এবং চাঁদাবাজ মুক্ত টাঙ্গাইল গড়তে পারবেন বলে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন সর্বস্তরের মানুষ।

কমিটি নিয়ে টালবাহানা

দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রায় ৩৫ মাস আগে। কিন্তু আজও পুর্নাঙ্গ কমিটি হয়নি। ফলে দুই নেতা দিয়েই চলছে জেলা বিএনপি।

জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু জানান, নিজের মতো করে কমিটি বানানোর পর এক তরফা কাউন্সিলর বানিয়ে তথাকথিত একটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সাধারন সম্পাদক ফরহাদ ইকবালকে নির্বাচিত করা হয়। অথচ তারা দলের জন্য কোন ভাল কাজ করতে পারেননি। শুধু দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন। তৃমমুল নেতাকর্মীদের সাথে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কোন সম্পর্ক নাই। এই অবস্থায় বিএনপির মতো এত বড় একটি দল চলতে পারে না। জাতীয় নির্বাচনের আগেই সম্মেলনের মাধ্যম পুর্নাঙ্গ জেলা কমিটি গঠনের দাবি জানান ছাইদুল হক ছাদু।

পদ বঞ্চিত একাধিক নেতা অভিযোগ করেন যে, ৫ আগষ্টের পর জেলার একাধিক শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃনমুলের অনেকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে ইতিমধ্যে ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। অনেক নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের দলে ভেড়ানো সহ নানাভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। যা আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পুর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে।

এই বিষয়ে জানার জন্য টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. ফরহাদ ইকবালের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার এক সহকর্মী রিসিভ করে বলেন, ভাই একটি মিটিংয়ে আছেন। এই কথা বলে নাম্বারটি কেটে দেন। এর আগে জেলার সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের হোয়াটসআপে মেসেজ দিলেও কোন সাড়া মিলেনি।

প্রসঙ্গতঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে থাকায় দলের ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পদপদবি থেকে বঞ্চিত। শীর্ষ নেতারা নিজেদের রক্ষা করতে ব্যস্ত। তারেক রহমান বিনয়ী আচরণ, নম্রতা, ভদ্রতায় নিজেকে একজন সভ্য রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সুতরাং তাকে অনুসরণ, অনুকরণ করাই হবে দলের জন্য শোভনীয় লক্ষন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.