May 1, 2025, 9:09 pm


নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী প্রতিনিধি

Published:
2021-11-10 02:43:18 BdST

খেজুরের গুড়কে ঘিরে এক সম্ভাবনাময় অর্থনীতি


শীত মৌসুমের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতো গাছিরা।

খেজুরের গুড়ের দেশ বিদেশে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পায়েস এবং খেজুরের রস থেকে উৎপন্ন গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাঢ় রস দিয়ে তৈরি করা হয় পাকদেয়া মুড়ি, চিড়া, খই ও বড় পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলি।

শীতের সময়ই পাওয়া যায় সুস্বাদু এই পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস পানের মজাই আলাদা।

এখনও তেমন একটা শীতের তীব্রতা দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন রাজবাড়ীর অনেকেই।

গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা অনেক গাছিরা। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে কদর বেড়ে যায় খেজুর গাছের। গাছ থেকে রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি আর রস ও গুড়ের নানা শীতকালীন পিঠা তৈরির ধুম পড়ে আবহমান গ্রামে।

এক সময় দিগন্ত জুড়ে মাঠ কিংবা সড়কের দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ চোখে পড়তো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। এক সময় এ অঞ্চলে প্রচুর খেজুর গাছ চোখে পড়লেও ইট ভাটায় জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত এবং নতুন গাছ রোপন না করার কারনে বিলুপ্ত হতে চলেছে এই ঐতিয্য।

রাজবাড়ী সদরের রামকান্তপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, মাঝবয়সী রশীদ গাছী রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুত করছেন। ব্যস্ততার মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, আমরা রাজশাহীর বাঘা থেকে এসেছি। শীত শুরুর আগেই আমরা নিজের ও বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে খেজুরের গাছ লিজ নিয়ে থাকি। এবারও দুজন মিলে এ পর্যন্ত ১১০ গাছ নিয়েছি। রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝোড়ার কাজ শেষ করেছি। ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজও শুরু করেছি। শীত একটু বেশী পড়লে পুরোদমে রস সংগ্রহের কাজ শুরু করতে পারবো। এখন প্রতিদিন ১ মন এর মতো রস সংগ্রহ করছি।

বালিয়াকান্দির গাছি নাছির মুন্সী বলেন, ‘আমরা শীত মৌসুমে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করি। সেই গুড় বাজারে বিক্রির টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।’

স্থানীয়রা জানান, 'খেজুরের গুড় এই এলাকার একটি ঐতিহ্য। রস থেকে গুড় তৈরি একটি শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে রাজবাড়ী জেলার কয়েকশ’ পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু বানিজ্যিক ভাবে গাছের চাষ না হওয়া এবং খেজুর গাছ কমে যাওয়ার কারনে এখন আর এ কাজে এগিয়ে আসছে না। শীত এলেই রাজবাড়ীর প্রায় প্রতিটি পরিবারকে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করতে দেখা যেত।'

দাদশী বাজারের প্রবীন ব্যক্তি রুস্তম জানালেন খেজুরের গুড় আর নতুন ধানের চাল দিয়ে শুরু হতো নবান্ন উৎসব। এখন সব হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি উদ্যোগ নিলে সেই দিন ফিরিয়ে আনতে পারে। নজরদারি না থাকায় এবং খেজুর গুড়ের নামে ভেজাল গুড় তৈরি হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি হারাতে বসেছে।

বালিয়াকান্দির আক্কাস জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় তৈরি করছে ভেজাল খেজুরের গুড়। তবে ভেজাল প্রতিরোধ ও গুড় শিল্প রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেজুরের গুড় পুনরায় ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য। চাহিদায় কারনে দেশে খুলে যেতে পারে অর্থনীতির নতুন দুয়ার কারন দেশ বিদেশে সব জায়গায় খেজুরের গুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এদিকে, গাছিদের অভিযোগ ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে অনেক খেজুর গাছ কেটে ফেলায় বিলুপ্তির পথে খেজুর গাছ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.