May 5, 2024, 9:16 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-04-24 13:23:32 BdST

আইনি পদক্ষেপ নেবে আইডিআরএসোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত


সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত।

সোমবার (২২ এপ্রিল) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

বীমা কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী মনিরুজ্জামানের দায়ের করা একটি রিট (নং-৪৫১৯/২০২৪) আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। সংস্থাটির পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আদালতে আইনগতভাবে লড়ব’।

তিনি বলেন, 'দুই বছর আগে ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে আইডিআরএর প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তও হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু চেম্বার জজ আদালত পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দিলে আইডিআরএর সিদ্ধান্তই শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে এবং প্রশাসক নিয়োগ হয়।'

এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ২১ তারিখ থেকে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। সংস্থাটির পরিচালক (উপসচিব) আব্দুল মজিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত ১৮ এপ্রিল এই তথ্য জানানো হয়।

প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয় অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসিকে। 

দায়িত্ব গ্রহণের পর যতদ্রুত সম্ভব কোম্পানিটিতে দেশি বা বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা সম্পন্ন করার পাশাপাশি বীমা পলিসি ইস্যুসহ কোম্পানির সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রশাসককে।

কোম্পানিটির আগের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পদত্যাগের পর গত জানুয়ারি থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন কাজী মনিরুজ্জামান।

সোনালী লাইফের পরিচালক ছিলেন ২০ জন। এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ, অর্থাৎ সাতজনই এক পরিবারের। অর্থ আত্মসাতের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। অন্যরা তাঁরই স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ ও মেয়ের জামাতা।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিয়ে নিরীক্ষক নিয়োগ, নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ, মালিকপক্ষের সশরীর শুনানি গ্রহণ ইত্যাদি প্রক্রিয়া শেষ করেই আইডিআরএ প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল এক চিঠিতে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে কেন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। ৫ কার্য দিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে ১৮ এপ্রিল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এ সংক্রান্ত শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

এর আলোকে গত ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শুনানিতে অংশ নেন সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। তবে এর আগের দিন ১৭ এপ্রিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের ৩ জন পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরা হলেন- আহমেদ রাজিব সামদানী, হুদা আলী সেলিম ও হাজেরা হোসেন।

প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত আইডিআরএ’র চিঠিতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিলের শুনানিতে কোম্পানির পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান নূর-এ হাফজা পৃথকভাবে জবাব দাখিল করেন। আর বোর্ডের পক্ষে জবাব দাখিল করেন কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান কাজী মনিরুজ্জামান।

কাজী মনিরুজ্জামানের জবাবে বলা হয়, কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে ও তার পরিবারের অনুকূলে ইস্যুকৃত শেয়ারের মূল্য, মাসিক বেতন গ্রহণ, তার নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ প্রদান, বিদেশ ভ্রমণ, বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ব্যয় বাবদ অর্থ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস দাবি করেন- সোনালী লাইফের কাছে তার পাওনা ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৫ টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত অফিস ভাড়া বাবদ ১১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮শ’ টাকা, অফিস ভাড়ার বিলম্ব ফি বাবদ পাওনা ২৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৬ টাকা, কোম্পানিকে ঋণ দেয়া বাবদ পাওনা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৪২ টাকা তিনি গ্রহণ করেছেন।

তবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের এই দাবির সাথে কোম্পানির বুক অব একাউন্টস, লেজার সিস্টেম জেনারেটেট ভাউচার, ব্যাংকের এডভাইস চেক ইত্যাদি ডকুমেন্টসের সাথে কোন মিল না থাকায় তার এই বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি আইডিআরএ’র শুনানিতে।

মূলত কোম্পানির টাকায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিপুল ব্যয় বহন, নগদ গ্রহণ ও নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি উদঘাটিত হওয়ার পর তা ভাড়া হিসেবে গ্রহণের দাবি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রশাসক নিয়োগের চিঠিতে।

অপরদিকে নূর-এ হাফজা তার জবাবে বলেন, তার নামে ইস্যুকৃত প্লেসমেন্ট শেয়ারের মূল্য তিনি পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করেছেন। এছাড়া তিনি কোম্পানি থেকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন তা পরিশোধ করতে ইচ্ছুক বলেও জানান।

আইডিআরএ বলছে, অসম্পূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ বা তথ্য গোপন, অস্বচ্ছ হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি, অভ্যন্তরীণ কন্ট্রোল সিস্টেমের অনুপস্থিতি, ক্যাশ চেকে বড় অংকের লেনদেন, এফডিআর জামানত রেখে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ গ্রহণ এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কোম্পানিটির ব্যাংক সিগনেটরির প্রায় সকলেই একই পরিবারের সদস্য।

এমন অবস্থায় সোনালী লাইফ কর্তৃপক্ষ বীমা কোম্পানিটির কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালনা করছে যে, এতে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে কোম্পানি ও বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।

এর আগে সোনালী লাইফের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অডিট ফার্ম হুদাভাসী চৌধুরী এন্ড কোং-কে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওই তদন্তে ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ উঠে আসে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা