May 5, 2024, 11:49 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-04-24 22:19:32 BdST

গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় আইডিআরএ’র নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেইযমুনা লাইফের আয় শূন্য, দায় ৯.৫৮ কোটি টাকা


গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে ৭টি নির্দেশনা দিয়েছিল বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এসব নির্দেশনার অন্যতম ছিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো, পলিসি ল্যাপস কমানো ও নবায়ন প্রিমিয়াম হার ৬০ শতাংশে উন্নীত করা। কিন্তু গেল বছরে এর কোনটাই বাস্তবায়ন করতে পারেনি বীমা কোম্পানিটি।

উল্টো ব্যয় বৃদ্ধি ও তামাদির হার কমাতে না পারা এবং ২য় বর্ষের নবায়ন হার বাড়াতে না পারায় বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

কোম্পানিটির ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের ব্যবসা সমাপনীর সাময়িক হিসাব পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া পাওয়া গেছে।

আইডিআরএ’র নির্দেশনা বলা হয়েছিল, নবায়ন প্রিমিয়াম হার ৬০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অথচ কোম্পানিটির ২০২৩ সালে ২য় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের হার মাত্র ১৭. ৫৬ শতাংশ।

সমাপনী হিসাবের তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে গ্রুপ ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স বাদ দিয়ে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম আয় করে করে ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এসে ২য় বর্ষ নবায়ন প্রিমিয়াম আয় করে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা।

আবার ২০২২ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম ও ২০২৩ সালের ২য় বর্ষ নবায়ন মিলে মোট প্রিমিয়াম আয় করে ২১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর এই প্রিমিয়ামের জন্য খরচ ২২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রাহেকর কাছ থেকে জমা নেয়া প্রিমিয়ামের সব টাকা খরচ ধরা হলেও কোম্পানির তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে আরো ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। 

অর্থাৎ ১০০ টাকার প্রিমিয়াম আয়ের জন্য যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স খরচ করেছে ১০৫.২৫ টাকা।

অন্যদিকে ২য় বর্ষে ৪ কোটি ২২ লাখ নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করায় কোম্পানিটিতে গ্রাহকের দায় দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানির তহবিল থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা লোকসান করে গ্রাহকের দায় নিয়েছে  ৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

ফলে কোম্পানিটি গ্রাহকের এই দায় কিভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ব্যবসা সমাপনীর হিসাব অনুসারে, যমুনা লাইফ ২০২৩ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় করে ৩৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই প্রিমিয়াম সংগ্রহে কোম্পানিটি মোট ব্যয় করেছে ২৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই হিসেবে উদ্বৃত্ত থাকে ৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অথচ লাইফ ফান্ডে যোগ হয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

অর্থাৎ প্রিমিয়াম বাবদ গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়েছে ৩৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর গ্রাহকের জমাকৃত টাকার দায় পরিশোধ করতে জীবন বীমা তহবিলে জমা হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

এই ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কী করে ৩৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা প্রিমিয়ামের দায় পরিশোধ সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া গেল বছরগুলোতে লাইফ ফান্ড বরাবরই ঋণাত্মক বা ঘাটতি ছিল।

ফলে যমুনা লাইফের আর্থিক অবস্থাটি এমন দাঁড়িয়েছে- বছর বছরে গ্রাহকের দায় বাড়ছে, কমছে আর্থিক সক্ষমতা।

সমাপনী হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তহবিল থেকে খরচ করে প্রিমিয়াম আয় করছে যমুনা লাইফ। ফলে গ্রাহকের দায় বাড়ছে। এর মধ্যে আইডিআরএ’র নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ব্যয় করছে। কোম্পানিটির ২০২৩ সালে অতিরিক্ত ব্যয় ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

আবার বিগত ৭ বছরে নতুন কোন বিনিয়োগ নেই। কোম্পানিটির সমাপনী হিসাবের তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যমুনা লাইফের এমন আর্থিক অবস্থা শুধু কোম্পানিটির গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুন্ন করার আশংকাই তৈরি করছে না বরং এর প্রভাব পড়বে গোটা বীমা খাতের ওপর। তাই বীমা খাতে গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে যমুনা লাইফের চেয়ারম্যান বদরুল আলম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোম্পানির এই পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্ধারিত প্রথম বর্ষ কমিশন হার বেশি থাকায় ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমানো আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান খন্দকার এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু তিনি (কামরুল হাসান) অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় আমার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের কোন বীমা দাবি বকেয়া নেই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা