বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-01-23 13:14:59 BdST
রাজনৈতিক ও পারিবারিক নিপীড়নে জর্জরিত এক নারীর করুন ট্রাজেডিসিলেটে বিধবাকে নিজের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জীবন আজ হুমকির মুখে
সিলেট মহানগরীর মিরাবাজার এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা লস্কর এখন নিপীড়নের যন্ত্রণায় জর্জরিত এক বিধবা নারী, যিনি রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে যেমন চরম প্রতিহিংসার শিকার, তেমনি পারিবারিক জটিলতার ফাঁদে পড়ে নিজের বাসস্থান হারিয়ে আজ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
প্রয়াত নুরুল আমিন লস্করের স্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, সিলেট মহানগর এর প্রাক্তন সহ-সভাপতি তাসলিমা লস্কর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ অন্ধকার।
রাজনীতি থেকে শুরু জীবনসংকট
তাসলিমা জানান, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পরিচয় ও সক্রিয়তার কারণে তিনি স্থানীয় বিএনপি ও শ্রমিক ইউনিয়ন-সমর্থিত প্রভাবশালীদের নজরে পড়েন। বারবার হুমকি, মানসিক চাপ এবং নিপীড়নের শিকার হন।
“আমি আজ রাজনীতি করি বলেই নয়, আমি বিধবা, নারী, একা — এই পরিচয়গুলোই যেন আমার অপরাধ,” — বলেন তাসলিমা।
পারিবারিক প্রতিহিংসা: মেয়ের বিয়ের জন্য মা শাস্তির মুখে
তাসলিমার মেয়ে সুমাইয়া লস্কর মীম যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তিনি ভালোবেসে একটি বিএনপি-ঘনিষ্ঠ পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করেন। বিয়েটি ছিল ছেলেপক্ষের অমতে। এই ‘অপমানের’ প্রতিশোধ নিতে তারা তাসলিমাকে মানসিকভাবে হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
“তারা বলে, আমার মেয়েকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে না আনলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি রাজি হইনি। তাই ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে আমাকে আমার নিজ বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেয়,” এই প্রতিবেদককে জানান তাসলিমা, চোখে পানি ধরে রাখতে না পেরে।
উচ্ছেদ অভিযানে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দ্যা ফিন্যান্স টুডের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই নির্মম ঘটনার পেছনে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। এই তালিকায় রয়েছেন রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের নাম নিম্নে প্রকাশ করা হলো।
মিয়া মোঃ মিজানুর রহমান – বিএনপি নেতা ও শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক
জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল – কাউন্সিলর, ওয়ার্ড ১৮
জাবের আহমেদ সুমন – ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
তাদেরকে সহযোগিতা করেছে ভুক্তভোগী নারীর মৃত স্বামীর ভাই ও তার সন্তানেরা।
তাসলিমার অভিযোগ, এসব প্রভাবশালী ব্যক্তি পুলিশের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। পুলিশ পুরো ঘটনাকে ‘পারিবারিক বিবাদ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এড়িয়ে যায় এবং কোন অভিযোগ গ্রহণ করেনি।
জীবন আজ শঙ্কার ছায়ায়
বর্তমানে তাসলিমা পরিচিত এলাকা ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন। তার দিন কাটছে ভয়, আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে।
“আমি জানি না আগামীকাল বাঁচব কিনা। আমার মেয়ের জীবন রক্ষা পাবে কিনা কারণ যারা আমাকে উচ্ছেদ করেছে, তারা ওকেও ছাড়বে না।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বিধবা, একা নারী বা যাদের স্বামী নেই — তাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই। তাদের নিরাপত্তার কেউ দায়িত্ব নেয় না।”
সমাজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন
তাসলিমা লস্করের জীবনের এই ট্র্যাজেডি শুধুই একটি পরিবারের গল্প নয়। এটি একটি রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। যেখানে রাজনৈতিক পরিচয়, পারিবারিক মতবিরোধ এবং নারীত্ব — সব মিলিয়ে একজন মানুষকে নির্বাসিত করে দিতে পারে তার নিজের ঘর থেকে।
এই প্রতিবেদন যেন শুধু একটি ঘটনার দলিল না হয়ে, সমাজের বিবেককে নাড়া দেয়। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি যেখানে একজন নারীর নিরাপত্তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.