August 4, 2025, 3:58 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-08-03 23:00:37 BdST

অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ নাকোল রাইচরণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত


মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তন এসেছে।

আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আ. মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। রোববার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেনের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আব্দুল মান্নানকে ৩ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার কাছেও এই সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছেন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মিজা ওয়ালিদ হোসেন।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত'র চিঠিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিজে খরচ করা, অর্থ আত্মসাৎ ও তসরূপ করা এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তির টাকা না দিয়ে নিজেই খরচ করেছেন।

এছাড়াও নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন, বিদ্যালয় পরিচালনায় সম্পন্নরূপে ব্যর্থতা দায়িত্বে অবহেলায় আব্দুল মান্নানকে ইতোপূর্বে কারণ দর্শানোর নোটিশ কারণ দর্শানোর নোটি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা আমলে নেননি। অফুরন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি। যেকারণে পরিচালনা পর্ষদের কাছে মান্নান সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এই কারণেই ৩ আগস্ট বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে সহকারী শিক্ষক মুনীর হোসেনকে নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বহিষ্কৃত আব্দুল মান্নানকে লিখিতভাবে জবা প্রদান করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

উক্ত তারিখের মধ্যে আব্দুল মান্নান সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বিদ্যালয় যাবতীয় কাগজপত্র, আয় ব্যয়ের হিসাব ও অন্যান্য তথ্যাদি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আবুল মান্নানকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, যে সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বিধি মোতাবেক বেতন-ভাতা প্রাপ্য হবেন।

এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ—মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, যশোর শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসন মাগুরা, উপজেলা প্রশাসন শ্রীপুরসহ মোট ১০টি দপ্তরে সিদ্ধান্তের কপি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ পর্ষদের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানালেও, অন্য অংশের দাবি—ঘটনাটি আরও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি রাখে।

জানা যায়, গত ১ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভায় সদস্য সচিব শেখ আব্দুল মান্নান ও শিক্ষক প্রতিনিধি মুঃ কামরুজ্জামান অনুপস্থিত ছিলেন।

সম্প্রতি এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে দুদক সহ বিভিন্ন সংস্থায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে এই চক্রের হাতিয়ে নেয়া টাকার বিষয়ে তথ্য প্রমাণও পেয়েছে। এই চক্র দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান।

সূত্র মতে, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলা শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের আস্থাবাজন ছিলেন। স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা সুবর্ণা জামান পতিত সরকারের দোসর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের অনেক কাছের ছিলেন বলে জানা গেছে। সুবর্ণ জামান মিডিয়ায় নিউজ প্রকাশিত হওয়ায় সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

পতিত সরকার আমলে উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিদ্যালয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তাদের কাছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকরা জিম্মি ছিলেন। ভেঙ্গে পড়েছিল বিদ্যালয়ের নিয়মনীতিসহ সব ধরনের অবকাঠামো।

পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন বলেন, তারা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর যারা এই বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য তাদের সহযোগীরা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার আশালীন ভাষা ব্যাবহার করছে, মিথ্যাচার করছে এবং হুমকি প্রদান করছে। এমনকি লোভ দেখাচ্ছে তাতে কোন লাভ হবে না। আমি কোন ভাবেই দুর্নীতিবাজদের কাছে আত্মসমর্পণ করবো না। আমি যতদিন এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছি ততদিন কোন প্রকার অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.