শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-08-06 13:44:45 BdST
করণীয় হতে হবে বাস্তব উপলব্ধি
দুর্দান্ত প্রতাপশালী, প্রতিহিংসাপরায়ন ও একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের এক নিষ্ঠুরতম, নজিরবিহীন পতন ঘটে গত বছরের ৫ আগস্ট।
দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে স্লোগানে স্নোগানে মুখরিত বানী আর শহীদের তাজা রক্তবিন্দু থেকে গণমাধ্যমের পাতায় পাতায় ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরু থেকে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পতনের দিন পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে স্পর্শ করা শিরোনামগুলো নিবিড় অনুভূতি এবং বাস্তব উপলব্ধি হতে পারে ‘শিক্ষা ও করণীয়’। ‘শিক্ষা’ যদি হয় নিবিড় অনুভূতি, আর ‘করণীয়’ হবে বাস্তব উপলব্ধি।
৫ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার বিকালে মানিক মিয়া এভিনিউ বিশাল এক মঞ্চে জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণা পত্র’ উপস্থাপন করেন। এই ঘোষণা পত্র কতটা সফল হবে সময়ে তা বলে দেবে।
তবে করণীয় ঠিক করতে অনেক বেশি উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাস্তব ভিত্তিতে উপলব্ধি করতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন।
আজীবন সদস্য ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, সাবেক উপদেষ্টা ড্যাব , ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখা , অধ্যাপক ডাঃ মো:শাহ আলম তালুকদার বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর যে কোন সময়ের চেয়ে দেশ বর্তমানে এতটাই দেশীয় ও বিদেশীয় চক্রান্তের শিকার হয়েছে তা সকল জনগোষ্ঠীকে অনুধাবন করতে হবে। তিনি বলেন, সে অনুযায়ী উত্তরনের পথ খুঁজে বের করে কালক্ষেপণ না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এই গুরু দায়িত্বটা দেশের বৃহত্তম এবং সর্বোচ্চ জনসমর্থিত দল বিএনপিকেই অগ্রনী ভুমিকা পালন করতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিএনপিকে সুসংগঠিত করা, বিগত সৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে যারা গুম,খুন, জেল-জুলুম ও মিথ্যা মামলার হয়রানির শিকার হয়েছন সেই ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবী। প্রবীন ও নবীনের একটা চমৎকার সমনয় দরকার। তা না হলে বিএনপি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাস্ত হয়ে যাবে। দেশও তলিয়ে যাবে অন্ধকারাচ্ছন্নে। বিগত সৈরাচার সরকারের আমলে যারা জেল-জুলুম, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদেরকেও দলকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আরো ত্যাগ স্বিকার করতে হবে।
ডাঃ শাহ আলম তালুকদার আরো বলেন, বিগত সৈরাচার সরকারের কার্যকলাপ ও পরিনতি উপলব্ধি করে লুটতরাজ, রাহাজানি, সম্পদ লুন্ঠন এবং জনগণের মালের নিরাপত্তা রক্ষায় শহীদ জিয়ার সৈনিকদের সন্মুখ কাতারে থাকতে হবে। এতে করে দলের ভাবমূর্তি যেমন অক্ষুণ্ন থাকবে, তেমনই দেশ হবে একটা সমৃদ্ধ,স্বনির্ভর ও দুর্বৃত্তপরায়ণ মুক্ত ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ বলেছেন, গত বছর ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটা টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে পরিগণিত এবং ১৭ বছর সৈরাচার হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশও বটে। দেশের ক্রান্তিলগ্নে দেশ গঠনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার সহধর্মিণী দেশমাতা, সাবেক প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান অনস্বীকার্য। সুদীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। আন্দোলনে সকল বিরোধী দলের ভুমিকা ছিল প্রশংনীয়। সৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হলেও দেশীয় ও বিদেশীয় চক্রান্ত শেষ হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করা, সব দলের মধ্যে ভাতৃ প্রতিম সম্পর্ক বিনস্ট করা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভূলন্ঠিত করা এবং দেশে আবারও সৈরাচারকে পুনর্বাসন করাই যেন এই চক্রান্তকারীদের মূল উদ্দেশ্য।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ক্ষমতায় টিকে থাকতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। প্রাণ হারায় নারী, শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। কিন্তু সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েকজন ছাড়া গত এক বছরেও জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও নেপথ্যের কুশীলবদের অধিকাংশই ধরা পড়েনি। গ্রেফতার এড়াতে তাদের কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কেউবা দেশেই আত্মগোপনে আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পলাতকদের বড় অংশই ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, যারা পালিয়ে বিদেশ গেছেন, তারা ৪ আগস্ট পর্যন্ত সরগরম ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ৪ আগস্ট রাতেও পুলিশ বাহিনীকে হুকুম দিয়ে নারী-পুরুষ, ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরা কিভাবে দেশ থেকে পালিয়ে গেলেন তার কোন সঠিক উত্তর অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের কাছে উত্থাপন করেননি। শোনা কথা, একটি বাহিনীকে টাকার বিনিময়ে কাদের-কামালরা বর্ডার যোগে ভারতে পালিয়েছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যারাই সরকার গঠন করবেন, তারা অবশ্যই এই পলাতকদের সহায়তাকারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দেশীয় ও বিদেশীয় অদৃশ্য শক্তি। বহুপক্ষীয় এবং সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে একের পর এক ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল, বৈরী ও অনিশ্চিত করে তোলার পরিকল্পনায় যারা লিপ্ত তাদেরকে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। কিছু অদৃশ্য শক্তি সরকারের সাথে মিশে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া। গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বিএনপি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.