July 3, 2025, 10:58 pm


নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক

Published:
2025-07-03 17:51:43 BdST

পিআর কি? নির্বাচনে পিআর কেন দরকার ও কেন দরকার নয়


আমার এক অ্যাডভোকেট বন্ধু প্রশ্ন করে বললো, ধর পি আর সিস্টেমে নির্বাচন করে একটি রাজনৈতিক দল ৩০ টি আসন পেলো। তখন সিট বন্টনের ক্ষেত্রে দলটি কোথায় কোথায় প্রতিনিধিত্ব করবে?

প্রশ্নটা যুক্তিসংগত। তাকে আমি প্রশ্ন করলাম যে ধর, সিরাজুল ইসলাম স্যার অথবা কোন জাতীয় অধ্যাপক ভোট দিলেন। এখন তাদের ভোটের মান আর মাদক ব্যবসায়ী অথবা চোরাকারবারির ভোটের মান তো একই। তাহলে ভোটের গুনগত মান কি থাকলো? খানিকক্ষন মাথার চুল ধরে টানাটানি করে বললো বা দে যারা এ বিষয়ে পারদর্শী তারাই ভাবুক।

ইদানিং সামাজিক মাধ্যম, রাজনীতির মাঠ, চায়ের দোকান সব জায়গার আলোচনায় উঠে এসেছে এই পি আর পদ্ধতি। বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা না থাকায় সবাই বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমিও পড়াশোনা করে যেটুকু বুঝেছি তা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরলাম।

কেউ কেউ মনে করে ব্যক্তি নয়, দলের সার্বিক ভোট প্রাপ্তিতে নির্ধারণ হবে সংসদে আসন। আর একটি দল প্রকৃত অর্থেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে। মাত্র কয়েক শতাংশ ভোট কমবেশি হওয়ার কারণে সংসদে আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হবে না। কোনো দল ৪০.২১ শতাংশ ভোট পেয়েও সংসদে মাত্র ৬২টি আসন বা ৩২.৫০ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ৩০টি আসন পাওয়ার ঘটনা আর ঘটবে না।

অর্থ ও পেশিশক্তি বা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথও বন্ধ হবে। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম কমে আসবে। দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই ধরনের নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা ভাবছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলও এই ব্যবস্থার পক্ষে দাবি তুলেছে।

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর তার অধীনে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের’ লক্ষ্যে গঠিত বিভিন্ন কমিশন নানা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছে।

বিশেষ করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন বা পিআর পদ্ধতির দিকে নজর অনেক রাজনৈতিক দলের। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিশোদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপর সেই পালে নতুন করে হাওয়া তোলেন তরুণদের গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি। তবে, প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে আসছে। প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষেই রয়েছে তারা।

অন্যদিকে, নির্বাচনি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভোটারদের মতামতকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করবে। তবে বিএনপির আপত্তির কারণে এই নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদি সব রাজনৈতিক দল একমত হয়, তবে ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আনুপাতিক ভোটিংয়ের দিকেই এগোতে পারে। কিন্তু এই পি আর পদ্ধতিটা আসলে কী?

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোন দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন। পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র তিনটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘কোনো দল নির্বাচনে যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তারা সেই অনুপাতে আসন পাবে, নির্বাচনের এই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি যদি চালু হয় তাহলে তা সুশাসন নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’

এই পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়।

তবে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সুবিধা হলেও কিছুটা অসুবিধায় পড়বে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। কারণ আনুপাতিক হারে বড় দলগুলোকে ছোট দলগুলোর জন্য কিছু আসন ছেড়ে দিতেই হবে। যার ফলে, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা কিছুটা হলেও খর্ব হবে।

তবে, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য হবে, সে কথা নিশ্চিত বলা যায়। কিন্তু এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের জটিল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা কতটুকু সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু আছে।

বিভিন্ন পত্রিকায় দেখলাম তারা লিখেছে, সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে ৯১টি দেশে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ, ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে আনুপাতিক হারে নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে সুপারিশ করে আসছিলেন।

তাদের মতে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা বিতর্ক যেমন রয়েছে, তেমনি বর্তমান পদ্ধতির ভোটে যে কোন রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারী হয়ে উঠলেও তা রোধ করা যায় না।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.