বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-07-06 11:36:02 BdST
গণপূর্তের ১৬ প্রকৌশলী গোয়েন্দা জালে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর গণপূর্তের ১৬ প্রকোশলী বর্তমানে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে। তাদের অবৈধ সম্পদের তালিকা সরকারের বিশেষ একটি সংস্থার হাতে। তাদেরকে দুদক কেন আইনের আওতায় আনছে না তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে।
তবে দুদক সূত্র বলছে, অনেকের অভিযোগ আমলে নেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সবাই দুদকের জালে আটকা পড়বে। পতিত সরকারের আমলে সংজ্ঞবদ্ধ এই চক্র লুটেপুটে খেয়েছেন। একেকজন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। তাদের অবৈধ সম্পদের খবর খোদ দুদকের কাছেও নেই।
কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রকৌশলীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা মামলাকে করছেন থোড়াই কেয়ার। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় তারা আয়েশি জীবনযাপন করছেন। ফলে আওয়ামী দোসররা টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য আগের চেয়ে বেপরোয়াভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের অনেকেই ঢাকার বাইরে বদলি ছিলেন, তারা তদবির করে ঢাকায় ফিরছেন। অনেকে অসুস্থতার সাটিফিকেট, পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে ছুটি কাটাচ্ছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর এখনো আওয়ামীপন্থী এসব প্রকৌশলীদের কব্জায়। অনেক ঠিকাদার কাজের জন্য টাকা দিয়ে বছরের পর বছর ঘুরছেন। কাজের জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলীরা টাকা নিয়ে কাজ দেয়নি এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণপূর্ত অধিদপ্তরের ১৬ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অর্থ যোগানদাতার অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় হত্যা মামলাও হয়েছে। কিন্তু কোন মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই।
কথিত আছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাথে আসামিদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠায় মামলার গতি থেমে গেছে। পতিত সরকারের সুবিধাভোগী এসব প্রকৌশলীরা এক সময় গ্রেফতার আতঙ্কে থাকলেও এখন তারা আয়েশি জীবনযাপন করছেন। তারা এখন মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিযুক্তদের অনেককেই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাওয়া বারণ ছিলো। এখন আর নিষেধাজ্ঞা নেই। সবই সম্ভব হয়েছে তদবিরের জোরে।
অভিযুক্তদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণপূর্তের সেকেন্ড ম্যান হিসেবে পরিচিত। তিনি এক সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পরিচয় বহন করতেন। ওই প্রকোশলী রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান বাড়ি করেছেন। ঢাকার বাইরেও অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। এই কাতারে অধিকাংশ প্রকৌশলী অবৈধ সম্পদের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ।
সূত্র মতে, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে এসব প্রকৌশলী কাজে নিয়মিত নন। এতে করে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে অধিদপ্তরজুড়ে। কয়েকজনকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও কেউ কেউ ঢাকায় ফের বদলী হয়েছেন। বদলিতে তারা নিজের অসুস্থতা ও পারিবারিক সমস্যা উল্লেখ করেছেন। আবার যারা ঢাকার বাইরে আছেন তারা সপ্তাহে এক দুই দিন অফিস করেন। কাগজে কলমে হাজিরা ঠিক থাকলেও পূরো সপ্তাহ জুড়ে থাকেন গণপূর্ত অধিদফতরে। কাজের চেয়ে নিজেদের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটান। হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এসব প্রকৌশলীরা। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ও বাড়ি করেছেন অনেকেই। তাদের সন্তানরা পড়াশোনা করেন দেশের বাইরে। অনেকেই অন্য দেশের নাগরিকত্বও নিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসব সংবাদ উঠে আসলেও কর্তৃপক্ষ ও সরকারের উদাসীনতার কারণে এরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন বিজ্ঞ মহল।
সূত্রমতে, এসব প্রকৌশলী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা জোগান দিয়েছেন। তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিবি প্রধান হারুন উর রশিদ হারুন, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম ও বিপ্লব কুমার সরকারকে অর্থের যোগান দিয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। দুদক অভিযোগ গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, পতিত সরকারের আমলে দুর্নীতিতে সামনের সারিতে থাকা এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তখন ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, অনেককেই পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেকেই দাম্ভিকতা করে বলতেন যে তারা শেখ হাসিনার লোক। কেউ তাদের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে লেখলে মামলার ভয় দেখানো হতো। এখনো একইভাবে চলছে তাদের ক্ষমতার দাপট। কেউ কেউ ভোল্ট পালটিয়ে বিএনপি পন্থী বনে গেছেন।
জানা যায়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর আন্দোলন ভণ্ডুল করার চেষ্টাকারীদের দোসর হিসেবে পরিচিত এসব প্রকৌশলীকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে। এসব প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন, রামপুরা ও সাভার থানায় পৃথক হত্যা মামলা রয়েছে। মামলা হয়েছে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সক্রিয় সদস্য। আবার কেউ ছিলেন সরাসরি গণভবনকেন্দ্রিক। দুর্নীতির বরপুত্র নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল হক বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার হিসেবে আছেন। তিনি ঘুষ নিতেন প্রকাশ্যে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা জোন) শামছুদ্দোহা, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন) শহিদুল আলম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ই/এম) আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন আহাম্মাদ; তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইলিয়াস আহম্মেদ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাকির হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব, নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী প্রকৌশলী সমিরন মিস্ত্রি, নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু, নির্বাহী প্রকৌশলী আমানউল্লাহ আমান, নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ইএম ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মিরাজ।
তবে তদন্ত সাপেক্ষে এদের সাথে আরো এক ডজন নাম আসামির তালিকায় যোগ হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের মাসিক মিটিংয়ে এসব আসামিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
রাজধানীর পল্টন, রামপুরা ও সাভার থানায় মামলা ছাড়াও ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন রাজধানীর ঝিগাতলার বাসিন্দা কে এম শাহরিয়ার শুভ। তিনি গণপূর্ত'র ঠিকাদার বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, যেসব ঠিকাদার পতিত সরকার আমলে ঠিকাদারি করেছেন তারা এখন ভোল্ট পালটিয়েছেন।
মামালায় আসামির তালিকায় থাকা কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হলে তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, এসব মামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তাদের মূল উদ্দেশ্য মামলার আসামিদের বিভিন্ন চাপে রেখে ঠিকাদারি কাজ ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মামলায় গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। টাকা দিলেই মামলা থেকে রেহাই পাব বলা হচ্ছে।
এই বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মামলার তদন্ত হলে বুঝা যাবে আসামিরা কতটুকু দায়ী বা জড়িত। এর আগে তো কিছু বলা যাবেনা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ ম্যানেজ করার সুযোগ পাবেনা। সঠিক তদন্ত করেই গ্রেফতার করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডসহ দলীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তারা মনে করতেন নিজেরা চাকরি করেননা, সবাই রাজনৈতিক নেতা। যারা বিগত সরকারের সময় সুযোগ-সুবিধা ভোগ ও দুর্নীতি-অনিয়ম করেছেন, তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। তা না করে ঢালাওভাবে মামলা দেয়া হয়েছে। চাকরি হারানো এবং মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে অনেকেই ঠিকমতো অফিসে আসেন না। তবে যারা পতিত সরকার আমলে দুর্নীতি করেছেন তাদের বিচার হোক এটা আমরা চাই।
কয়েকজন প্রকৌশলীদের অভিযোগ, মামলা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সুরাহা করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়।
সূত্রমতে, এখানে যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে তাদের ইচ্ছায় সব হয়। ছাত্র-জনতা হত্যার পাশাপাশি অনেকে দুর্নীতির সঙ্গেও জড়িত। তারা এখন প্রকৌশলী হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। এর আগে গণপূর্তের এসব প্রকৌশলী জি-কে শামীমের সঙ্গে সখ্য গড়ে ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দুর্নীতি অনিয়মের মাস্টারমাইন্ডরা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের বেতনের সাথে আয়ের উৎস খোঁজ নিলে পাহাড় সমপরিমাণ সম্পদের হদিস মিলবে। স্ত্রী, সন্তান ও আত্নীয় স্বজনদের নামেও পাওয়া যাবে অঢেল সম্পদের খোঁজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার। তিনি আরেকবার প্রধান প্রকৌশলী থাকার জন্য ভেতরে ভেতরে তদবির করছেন। তবে তার এক ঘনিষ্ঠজন জানান, স্যার চাকরির মেয়াদ আর বাড়াতে ইচ্ছুক নন।
আশরাফুল আলম গণপূর্ত অধিদপ্তরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। আশরাফুল আলম বর্তমানে রিজার্ভে আছেন। তিনি সহ কয়েকজন জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য । আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। তবে তিনি জোর চেষ্টা ও তদবির করে
প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নিতে মরিয়া বলে গুঞ্জন রয়েছে অধিদপ্তর জুড়ে । তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোনো মামলা হয়নি। গণপূর্তের সবাই তাকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে চেনেন। কিন্তু লবিং করে প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এছাড়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামসুদ্দোহা (পরিকল্পনা ও বিশেষ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবুল খায়ের (সংস্থাপনা সমন্বয়ক), অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান চৌধুরী (গণপূর্ত মেট্রোপলিটন জোন) এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য জোরালোভাবে লবিং করছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের ফোনে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যারা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা তাদের তালিকা হচ্ছে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এখন পর্যন্ত আদালত থেকে কোনো চিঠি না আসায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর ঢালাওভাবে মামলার আসামি করায় প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, এক থানায় দুই তিন মাসের বেশি কাউকে রাখা হচ্ছেনা। এতেও মামলার তদন্ত করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে অনেক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের ব্যানারে লাভবান হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে গণপূর্তের দাপুটে প্রকৌশলীদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নেয়া হয়নি তাদের পাহাড় সমপরিমাণ সম্পদের হিসাব। কাউকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি। পতিত সরকারের সময়ে যেসকল প্রকৌশলী নিজ অফিসে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করেছেন তারা এখনো বীরদর্পে আছেন। শুধুমাত্র এক জায়গা থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের চিহ্নিত কর্মকর্তা। তারা সুযোগ পেলে ছোবল দিবেই। এটা অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে বলে বিজ্ঞমহল মনে করেন।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলোর মালিকরা জানান, অধিকাংশ নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের স্বজনদের নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স নিয়ে কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। তারা অনেক সময় ঘুপচি টেন্ডারের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতেন। এখনো একইভাবে চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, অতীতে যারা সুবিধাবঞ্চিত ছিলেন তাদের অধিকাংশ এখন ভালো পজিশনে আছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ভোল্ট পালটানোদেরকে নিয়ে। গণপূর্তের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণীতে গড়মিল রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এক্ষেত্রে দুদকের অনুসন্ধান জরুরি বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এদিকে দেশজুড়ে মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিগত সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়ে শুরুতে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। বিশেষ করে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদগুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ধর্মচর্চা ও এবাদতের উত্তম স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে ছিলো। কিন্তু এই সকল মসজিদ নির্মাণে ঠিকাদার ও প্রজেক্ট পরিচালক (পিডি) যোগসাজশ করে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এই প্রকল্পের পিডি ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান দাবি করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। এনিয়ে দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।
সাড়ে ৯শ' কোটি টাকা বরাদ্দে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় ৫৬৪ টি মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়ে ছিলো সরকার। এরমধ্যে সাড়ে তিনশ' মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। বাকী ২১৪টি এখনও নির্মাণ করা হয়নি। ইতোমধ্যে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হাসান মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পে কি পরিমাণ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে এই বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করে একটি মামলা দায়ের করেছে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.