August 15, 2025, 11:27 pm


আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক

Published:
2025-08-15 21:40:47 BdST

দিল্লিতে ধসে পড়ল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির গম্বুজ, নিহত ৫


ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসৌধ চত্বরের একটি গম্বুজ ধসে পড়েছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া আরও অনেকে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দিল্লির নিজামউদ্দিন এলাকায় সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির একটি গম্বুজের একাংশ ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছুটির দিন হওয়ার সেই সময় সমাধিক্ষেত্রের ভিতরে অনেক পর্যটক ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি হুমায়ুন স্মৃতিসৌধের কমপ্লেক্সের মধ্যে শরীফ পাতে শাহ-এর দরগা রয়েছে। শুক্রবার বিকেলে সেটিরই ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, যখন এই ঘটনা ঘটে তখন সেখানে ১৫-২০ জন উপস্থিত ছিলেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধসের ঘটনার পর বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের খবর দেওয়া হয়। এখন সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে। পাঁচটি অগ্নিনির্বাপণ ইঞ্জিন মোতায়েন করা হয়েছে। এই স্মৃতিস্তম্ভটি ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি একটি সমাধিসৌধ যা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

হুমায়ুন ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট। তার পুরো নাম ছিল নাসির-উদ-দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন। তিনি তার বাবা বাবরের মৃত্যুর পর ১৫৩০ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর রাজত্বকালে তিনি শের শাহ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাসনে ছিলেন। পরে পারস্যের শাহের সহায়তায় তিনি নিজের সাম্রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু এর মাত্র এক বছর পর তার মৃত্যু হয়।

হুমায়ুনের সমাধি দিল্লির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। এটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অসাধারণ উদাহরণ এবং ভারতের প্রথম বাগান-সমাধি হিসেবে পরিচিত। এর নির্মাণ কাজ ১৫৬৫ সালে সম্রাট হুমায়ুনের প্রথম স্ত্রী বেগা বেগম (হাজি বেগম নামেও পরিচিত) শুরু করেন এবং এর স্থপতি ছিলেন পারস্যের মীরক মির্জা গিয়াস।

এই সমাধিটি মূলত লাল বেলেপাথর এবং সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি, আর এর স্থাপত্যে পারস্যের 'চারবাগ' (চার ভাগে বিভক্ত বাগান) এবং ভারতীয় শিল্পকলার এক চমৎকার সংমিশ্রণ দেখা যায়। এই সমাধির নকশা ও নির্মাণশৈলী পরবর্তীকালে বহু মুঘল স্থাপত্যকে প্রভাবিত করেছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো আগ্রার বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল, যা প্রায় এক শতাব্দী পরে নির্মিত হয়েছিল।

এটি কেবল হুমায়ুনের সমাধি নয়, এখানে মুঘল রাজবংশের প্রায় ১৫০ জনেরও বেশি সদস্যের কবর রয়েছে, তাই একে 'মুঘল রাজবংশের নেক্রোপলিস' (সমাধিক্ষেত্র) বলা হয়। এর অসাধারণ ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্বের কারণে এটি ১৯৯৩ সাল থেকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা লাভ করেছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.