ড. মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন এমবিই
Published:2025-09-10 21:34:52 BdST
ডাকসুর নির্বাচন প্রেক্ষাপট
ডাকসুর গতকালের নির্বাচন-পরবর্তী প্রেক্ষাপট আমাদের কাছে শুধু একটি ক্যাম্পাসভিত্তিক ঘটনা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকনির্দেশনা ও প্রতিফলন। ছাত্রসমাজের নির্বাচনে যে বৈষম্য, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব দেখা গেছে, তা গোটা জাতির রাজনৈতিক সংকট ও গণতান্ত্রিক অবক্ষয়েরই প্রতিচ্ছবি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে –
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিশেষত ছাত্রদল সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে সক্ষম হয়নি। দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার এবং রাজনৈতিক অবরোধের ফলে মাঠের শক্তি ক্ষয়প্রাপ্ত। তবে এটিই নতুন করে দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের আস্থার সংকট –
আজকের তরুণ প্রজন্ম বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজছে। কিন্তু বিএনপি তাদের কাছে সুস্পষ্ট ভিশন বা পরিকল্পনা যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেনি। ফলে শূন্যতার সুযোগ অন্যরা গ্রহণ করেছে।
ক্ষমতাসীনদের প্রভাব সুস্পষ্ট–
ডাকসু নির্বাচন আবারও প্রমাণ করেছে যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে ভোটের মাধ্যমে প্রকৃত নেতৃত্ব কখনও উঠে আসে না। এটি গোটা জাতির জন্য এক সতর্ক সংকেত।
বিএনপির করণীয়:
> তৃণমূল থেকে পুনর্গঠন
গ্রাম, উপজেলা, জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বকে সামনে আনতে হবে। ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মেধাবী নেতাকর্মীর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
> ছাত্র-যুবসমাজের সাথে সংযোগ
শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি ও গবেষণা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা দিতে হবে। তরুণরা যাতে বিএনপিকে ভবিষ্যতের ভরসা ও বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, সে ধরনের আস্থা তৈরি করতে হবে।
> বিকল্প নীতি উপস্থাপন
কেবল আন্দোলন নয়—অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, শ্রমনীতি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন—প্রতিটি খাতে সুস্পষ্ট নীতি ও কর্মপরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। এতে বিএনপি শুধু “বিরোধী দল” নয়, বরং “ভবিষ্যতের সরকার” হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে।
> ঐক্য ও নেতৃত্বের স্বচ্ছতা
অভ্যন্তরীণ বিভক্তি ও অনৈক্য দূর করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। টাকার বিনিময়ে পদবী নয়, বরং সততা, যোগ্যতা, এবং ত্যাগের ভিত্তিতে নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে।
> আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয়তা
গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপিকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। এতে দলটি শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও গ্রহণযোগ্য একটি শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
> তদারকি ও নীতিনির্ধারণ কমিটি গঠন
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যেমন—ছাত্রদল, যুবদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল—এদের কার্যক্রম মনিটরিং ও নীতি নির্ধারণের জন্য একটি ‘স্ক্রুটিনি কমিটি’ বা তদারকি প্যানেল গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। এই কমিটি নিয়মিতভাবে তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করবে, সংগঠনগুলো যাতে সঠিক নীতি মেনে চলে এবং নেতাকর্মীরা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করে তা নিশ্চিত করবে। এতে সংগঠনের শৃঙ্খলা ও দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার
ডাকসুর নির্বাচন আমাদের স্পষ্ট করে দিয়েছে—অন্যায়, জুলুম ও প্রহসনের মাধ্যমে কেউ চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে পারে না। বিএনপি যদি নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে নেয়, সংগঠনকে পুনর্গঠন করে এবং সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অটল থাকে, তবে ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব।
আল্লাহ আমাদের প্রিয় দল বিএনপিকে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন।
লেখক একজন আন্তর্জাতিক গবেষক, মানবাধিকার সংগঠক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, জাতীয়তাবাদী আদর্শের কর্মী।
বার্মিংহাম, যুক্তরাজ্য
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.