May 1, 2024, 3:54 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-02-26 19:08:21 BdST

লক্ষ্মীপুরে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মেয়াদ শেষেও মিলছেনা গ্রাহকের টাকা


লক্ষ্মীপুরে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে মেয়াদ শেষ হলেও শত শত গ্রাহকের নিয়ে টালবাহানা করার অভিযোগ উঠেছে। 

বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একাধিবার অভিযোগ দেওয়ার পরও সাড়া মিলছে না। এই ঘটনায় লক্ষ্মীপুরের গ্রাহকেরা টাকা পাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীটির সাবেক নারী কর্মী আকলিমা আক্তার শিল্পি জানান, টাকা না পাওয়ার কারণে কোম্পানীর মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের হুমকি ধমকি শুনতে হচ্ছে। গ্রাহকদের হুমকির ভয়ে তিনি ঢাকা থেকে হামছাদী ইউনিয়নের বাড়িতে এসে থাকতে পারছেন না। সম্প্রতি গ্রাহকরা তার ঘর মেরামতের সামগ্রীও নিয়ে যায়।

বীমা কর্মী আকলিমা আক্তার শিল্পির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিল্পি সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী। তিনি বীমা কোম্পানী পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মী হিসেবে এক সময় কাজ করেন। তিনি আশপাশে বহু মানুষকে পলিসি করিয়ে দিয়েছেন। ১০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকার পলিসিও ছিল। বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছেনা কোম্পানী।

এদিকে কোম্পানীর লোকেরা গা ঢাকা দিয়েছে। লক্ষ্মীপুরের অফিস কার্যক্রম বন্ধ, সাইন বোর্ড নেই। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোবাইল বন্ধ। এতে করে ওই এলাকার গ্রাহকেরা তার বাড়িতে এসে ভিড় করেন তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে টাকা না পেলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার হুমকি দিয়ে আসছে।

সদর উপজেলার হামছাদী এলাকার বীমা গ্রাহক ছালেহা বেগম, কহিনুর বেগম, নাজমা বেগম, মনি বেগম ও দেলোয়ার হোসেন জানায়, আমাদের বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২-৩ বছর হবে। এখন কোম্পানী টাকা দিচ্ছেন না। কোম্পানীর লোককেও পাওয়া যাচ্ছে না। দুই-একজন ঢাকার বাংলামটরে প্রধান কার্যালয়ে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী কার্যালয়ে গিয়ে দরজায় তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখেন। তাদের মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে তারাসহ একই এলাকার অন্তত ৩০-৫০ জন গ্রাহক বিপাকে রয়েছেন। 

সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের গর্ন্ধব্যপুর গ্রামের তোফায়েল আহমদ এর পুত্র মো: শাহজাহান বলেন, তিনি বছরে ১০ হাজার টাকা করে টাকা জমা দিতেন। ২০২২ সালে তার বীমার মেয়াদ শেষ হয়।

তিনি সকল কাগজপত্র লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ে জমা দিতে গেলে ওই অফিসের মোস্তফা কামাল তার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে দ্রুত চেক নিয়ে আসবেন বলে জানান। এখন কার্যালয় ও ওই কর্মকর্তার মোবাইল বন্ধ। প্রায় ২ বছর হতে চলেছে এখনও তিনি টাকা পাননি।

ইতিমধ্যে কোম্পানীকে উকিল নোটিস দিয়েছেন। তবুও কোম্পানী টাকা দিচ্ছেনা। দ্রুত টাকা এনে দিবেন বিনিময়ে ২ হাজার টাকা নেওয়ার একই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের বিনোদধর্মপুর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন।

তিনি বলেন লক্ষ্মীপুর অফিসের মোস্তফা কামাল আমার কাছ থেকে দ্রুত বীমার চেক এনে দিবেন বলে ২ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন তার মোবাইল ও অফিস বন্ধ। আমার টাকা পাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

লক্ষ্মীপুর জজকোর্টের আইনজীবী এ্যাড: সোহেল মাহমুদ ও মহসিন কবির মুরাদ জানান, পদ্মা লাইফ তাদের অনেক গ্রাহকের মেয়াদ শেষেও টাকা দিচ্ছেনা। আমরা অনেক গ্রাহকের পক্ষ থেকে কোম্পানীকে উকিল নোটিস করার পরও তাদের দিচ্ছেনা। এখন আমরা গ্রাহকদের বলেছি আদালতে মামলা করার জন্য। 

জেলা শহরের একতা সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলায় বীমা কোম্পানীটির কার্যালয়ে গেলে দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। এসময় বাইরে কোম্পানীর নামে কোন সাইবোর্ড দেখা যায়নি। 

তবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অন্য একটি বীমা কোম্পানীর ম্যানেজার বলেন, পদ্মার কার্যালয় বাগবাড়ি এলাকায় ছিল। সেখান থেকে একতা সুপার মার্কেটে এসেছে। কিন্তু তাদের অফিস খুলতে কখনো দেখা যায়নি। 

দায়িত্বরত কর্মকর্তার ফোনে একাধিকবার কল ও এসএমস দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একই কার্যালয়ের কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লি: (ডিএমডি) হেফজুর রহমান গ্রাহকের টাকা না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কোম্পানী ফান্ডে টাকা না থাকার কারণে লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলার গ্রাহকের টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ফান্ড পেলে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা হবে।

জেলা কার্যালয় বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। এই কারণে অনেকে কার্যালয়ে এসে ভিড় ও কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ করছে। যে কারণে জেলা কার্যালয় কেউ বসতে চায়না।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা