মানসুরা চৌধুরী দোলা
Published:2024-09-18 11:35:03 BdST
বিজিএফসির উপ-ব্যবস্থাপক শফিকুল অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক (অর্থ) মোঃ শফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া ১৯৮৮ সালে বিজিএফসি কোম্পানিতে ডেইলি বেসিসে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সহকারি (ক্লার্ক) পদে চাকুরীতে স্থায়ীকরণ হন। ২০০৮ সালে তিনি বি এ পাশ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বিজিএফসিতে অফিসার পদে পদোন্নতি পেয়ে হিসাব ও অর্থ বিভাগে যোগদান করেন। যদিও তার এই বিষয়ে কোন ডিগ্রী বা অভিজ্ঞতা ছিল না।
জানা যায়, ঢাকাস্থ বিজিএফসিতে লিয়াঁজো অফিসে পদায়ন পাওয়ার পর তার ভাগ্য খুলে যায়। তিনি ঝুঁকে পড়েন অবৈধ আয়ের উৎস খুঁজতে। ধরাও দেন অবৈধ টাকা রোজগারের সব কিছু। দ্রুত সময়ের মধ্যে বনে যান কোটিপতি। নাম লেখান শিল্পপতির কাতারে।
শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, চাকুরির পাশাপাশি নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, বৈদেশিক ট্রেনিং বাণিজ্য ও ভুয়া বিল ভাউচার করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে তিনি অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন । তার ডেমরাতে রয়েছে পাশাপাশি ২টি ৭ তলা বিল্ডিং। যার ঠিকানা বাড়ি নং ২৩/৪, রোড নং মুসলিম নগর মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ি ডেমড়া। মোঃ শফিকুল ইসলাম ভুইয়া, পিএফ ৪৯৮, উপ ব্যবস্থাপক অর্থ ও হিসাব প্রায় ২ যুগ ধরে ঢাকায় লিয়াঁজো অফিসে অবৈধভাবে চাকরীতে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লি; এর ছোট একটা কোম্পানি সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিঃ এর ব্যায়ভার একটি বড় কোম্পানির সমান। গত ২০১৯/২০ অর্থবছরে এর ব্যয় ছিল ৯৫১ কোটি টাকা যার সিংহভাগ ব্যয় করেছে ঢাকা লিয়াঁজো অফিস। তার প্রধান খরচের খাত দেখানো হয়েছে কোম্পানীর প্রধান কার্যালয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়া অফিসে। কাজেই অডিট টিম যখন লিয়াঁজো অফিসে ফাইল ডিমান্ড করে তখন উনার তেমন কোন খরচ চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ সরকারী বিধান মতে একজন কর্মকর্তার কোন অফিসে তিন বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। সেখানে তিনি দুই যুগ ধরে ঢাকা লিয়াঁজো অফিসে কর্মরত আছেন। এই ব্যক্তি সরকারি টাকায় একাধিক বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত ঠান্ডা মেজাজে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি পতিত সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের একজন মন্ত্রীর দোহাই দিয়ে অনেক কাজ বাগিয়েছেন। তাছাড়া প্রশাসনে তার এক আত্নীয়'র পরিচয় বহন করতেন। মিডিয়ার লোকজনকে থোরাই কেয়ার করতেন। শফিকুল ইসলাম তার সন্তানদেরকে ঘুষের টাকায় নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করিয়েছেন। তিনি সব সময় আওয়ামী পন্থী কয়েকজন কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে কোটি কোটি টাকা এবং সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে ওই সব কর্মকর্তারা তাকে শেলটার দিতেন। তার পড়াশোনার সার্টিফিকেট নিয়ে যথেষ্ট ভূল তথ্য থাকা সত্ত্বেও দিব্বি চাকরি করছেন। মাতুয়াইলে তার নিজস্ব পরিচালনায় কয়েকটি সিএনজি গাড়ি এবং সমিতিও আছে। তবে এসব বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন মিডিয়ার কাছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কঠোর বিরোধিতা করেছেন শফিকুল ইসলাম। সাবেক সমাজ কল্যান মন্ত্রী দিপুমণির আত্নীয় পরিচয় দিয়ে মন্ত্রণালয়ের অনেক তদবির বাণিজ্য করেছেন এই শফিকুল ইসলাম। সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সখ্য ছিলো শফিকুলের সখ্যতা তার বিভিন্ন ফরমায়েস তামিল করতেন। শফিকুল ইসলাম লাখ লাখ টাকা দিয়ে পতিত সরকারের কাজের বাহিনীকে সহযোগীতা করার অভিযোগ করার অভিযোগ ও আছে তার বিরুদ্ধে। শক্তের ভক্ত নরমের যম বলে খ্যাত। বিদেশ সফরে গিয়েছেন অসংখ্যবার। তিনি টাকার জন্য অসাধ্য কাজকে সাধ্য করতে পারেন খুব সহজেই।
অপর একজন প্রমোট অফিসার শাহ মোঃ তাওহিদুল ইসলাম পিএ ৩৯৬, সহকারী ব্যবস্থাপক হিসাব ও অর্থ। ১৯৮৬ সালে অত্র কোম্পানির ডেইলি বেসিসে কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৯১ সালে সহকারী (ক্লার্ক) ২য় পদে চাকুরিতে স্থায়ী হন। এসএসসিতে ৩য় শ্রেনিতে পাশ এবং এইচ এইচসি সার্টিফিকেট দাখিল করে ২০০৫ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানে সহকারী ব্যবস্থাপক অর্থ হিসাব পদে পদোন্নতি পান ।
তবে তার ওই বিষয়ে কোন সার্টিফিকেট বা অভিজ্ঞতা নেই। তিনি এবং শফিকুল প্রতি বছর নিজের ক্ষমতাবলে ফরেন ট্রেনিং করেন। তিনি এস এস সি পাশ করেন ফরেন ট্রেনিং এর সময়। ওই সময় তার জীবন বৃত্তান্তে বিএ পাশ বলে দাখিল করেন মন্ত্রণালয়ে। ইউরোপ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফরেন ট্রেনিং করেছেন। ঢাকাতে তার প্রচুর সম্পদ এর খবর পাওয়া গেছে । থাকেন আলিশান ফ্ল্যাটে। চলাফেরা করেন দামি গাড়ীতে। তার রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যাংক ব্যালেন্স।
ঢাকাস্থ লিয়াঁজো অফিসে নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা সর্ব্বোচ্চ দশজন থাকার কথা সেখানে বর্তমানে আছেন ২৯ জন। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ একজন অফিসার বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী লোকজন রয়েছে। অতিরিক্ত কোন লোকবল নেই। উক্ত দুই কর্মকর্তা প্রায় দুই যুগ ধরে একই অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, শফিকুল ইসলাম চাকুরী প্রার্থীদের নিকট হতে দশ থেকে পনের লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। গত দুই যুগ ধরে এই অবৈধ কর্মকান্ড করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তাছাড়া ফরেন ট্রেনিং এর বিভিন্ন কর্মচারীদের কাছ থেকে ফরেন ট্রেনিং পাইয়ে দিবে বলে পনের বিশ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে থাকেন। ফ্রান্সে ফরেন ট্রেনিং এর একটি ফরেন ট্রেনিং এর একটি ফাইল জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। অন্যদিকে কোম্পানির ব্যক্তিগত গাড়ী পারমিশন না থাকলেও কোম্পানির পাজেরো গাড়ী সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেন। গাড়ী নং গ -৩৭৬৪৮১। এজন্য তিনি প্রতি মাসে বিল ভাউচার করে থাকেন।
জানা যায়, সরকার পতন হলেও তারা আছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। পালটিয়েছেন আকিদাও। তারা দুইজন ছিলেন এই ডিপার্টমেন্টের গডফাদার। তাদেরকে সবাই সমীহ করে চলেন। একজন জেনারেল ম্যানেজার তাদেরকে সার্বক্ষনিক শেল্টার দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ থেকে জানা গেছে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.