November 21, 2025, 3:45 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-11-21 15:18:51 BdST

হেলে পড়েছে বেশ কিছু ভবন; আতঙ্কে রাস্তায় মানুষসিদ্ধিরগঞ্জে ভূমিকম্পে স্কুলসহ বহু ভবনে ফাটল


ছুটির দিনের সকালে শক্ত ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল ঘরবাড়ি, আতঙ্ক ছড়াল ঢাকাসহ সারা দেশে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময় স্থায়ী হওয়া এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত শিশু সহ ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

৫.৭ মাত্রার এই শক্তিশালী ভূমিকম্পে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিভিন্ন এলাকার বহুতল ভবনের দেয়াল, সিঁড়ি ও কলামে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি ভবন হেলে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বেশ কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলগুলোতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভূমিকম্প শুরু হতেই ভবনগুলো তীব্রভাবে দুলতে থাকে। এতে আতঙ্কিত বাসিন্দারা দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে যান। কিছু ভবনে ফাটল ধরার সঙ্গে সঙ্গে ভবন সামান্য হেলে গেছে।

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ভবন হেলে পড়েছে

সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং, হীরাঝিল আবাসিক, আল ইসলাম নগর, রনি সিটির ৪ নম্বর গলি ও ৫ নম্বর রোড, মুক্তিনগর এলাকায় বহু ভবনে দেয়াল, কলাম, সিঁড়ি ও সাইড ওয়ালে গুরুতর ফাটল দেখা গেছে। কিছু ভবনের সাইড ওয়াল ভেঙে পাশের টিনশেড ঘরের ওপর পড়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভবনেও বড় ফাটল দেখা গেছে। ঘটনার পর ফাটল দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছে।

স্কুলটির ইংলিশ মিডিয়াম শাখার ইনচার্জ কামাল উদ্দিন বলেন, “আজ বৃত্তি পরীক্ষা চলাকালে ভূমিকম্পে ভবন হঠাৎ দুলে ওঠে। এসময় পুরো স্কুল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সব ছাত্র-ছাত্রীকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনি। কেউ আহত হয়নি। তবে ভবনের একটি দেয়ালে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।”

ঐ এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাকদুম ভবন, প্রকৌশলী কুটির, শাহেনা নিবাসসহ আরও কয়েকটি বহুতল ভবনে দৃশ্যমান ক্ষতি হয়েছে। এসব ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মুক্তিনগর এলাকার বাসিন্দা সেলিনা আক্তার বলেন, টায়ার গলির একটি বহুতল ভবনের দেয়ালে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কয়েকটি রুমের টাইলস ভেঙে পড়েছে।

হীরাঝিল আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বলেন, “হঠাৎ করে পুরো বিল্ডিংটা দুলে উঠল। প্রথমে বুঝতেই পারছিলাম না কী হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেয়ালে ফাটল দেখা যায়। আমরা বাচ্চাদের নিয়ে নিচে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি।”

রনি সিটির ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দা লিপি বেগম বলেন, “আমাদের সিঁড়িতে টাইলসে চিড় ধরে গেছে। রান্নাঘরের শোকেস থেকে জিনিসপত্র পড়ে যায়। ভয় পেয়ে আমরা সবাই বাইরে বের হয়ে যাই। বাসায় উঠতে ভয় লাগছে।”

আল ইসলাম নগরের বাসিন্দা আব্দুল গফুর জানান, “ভবনটা এমনভাবে দুলছিল যে মনে হচ্ছিল পাশের দিকে হেলে পড়ছে। ভূমিকম্প থামার পর দেখি কলামে ফাটল। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকব বুঝতে পারছি না।”

মুক্তিনগরের কলেজছাত্রী নাদিয়া ইসলাম বলেন, “আমি অনলাইনে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ টেবিল-চেয়ার কেঁপে উঠতে থাকে। নিচে নেমে দেখি পুরো গলির মানুষ রাস্তায়। পরে শুনলাম পাশের ভবনের কয়েকটা রুমের টাইলস ভেঙে গেছে।”

ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও প্রকৌশলীরা ভবনগুলোর ঝুঁকির মাত্রা যাচাই করতে জরুরি পরিদর্শন শুরু করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ না করতে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, আশপাশের আরও ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ দলের দ্রুত পরিদর্শন জরুরি।

আদমজী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার মিলন মিয়া জানান, কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বেশ কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কিছু ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। আমদের তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।

আরও পড়ুন: ৫.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঁপল ঢাকা, নিহত ৪

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিসেট্ম বলছে, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।

এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিলো রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি নরসিংদীর ঘোড়াশাল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

আজকের এই ভূমিকম্পকে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান সিসমোলোজিক্যাল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬।

যে অঞ্চলে ভূমিকম্পটি হয়েছে, সেটি ইন্দো-বার্মা টেকনিক প্লেটের অংশভুক্ত বলে জানান অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পটিতে যে তীব্র, যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, তা তাঁর অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.