November 27, 2025, 3:04 am


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-11-27 01:27:58 BdST

মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত জেলাটাঙ্গাইলে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও অস্বস্তিতে বিএনপির প্রার্থীরা


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩রা নভেম্বর ২৩৭টি আসনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আরও বলেন যে, এটি প্রাথমিক পর্যায়ের তালিকা। যে কোনো সময় যে কোনো আসনের প্রার্থীতা পরিবর্তন হতে পারে।

বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় প্রানহানি ঘটেছে অন্তত দুটি জেলায়। এছাড়া আরও অনেকগুলো জেলায় ঘোষিত মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি করে মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ কিংবা বিক্ষোভের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

এরপর থেকে দেশের অধিকাংশ জায়গায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে কিছু আসন বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। এরমধ্যে টাঙ্গাইল জেলা অন্যতম।

ঢাকা বিভাগের অধীনস্থ টাঙ্গাইল জেলায় রয়েছে ৮টি সংসদীয় আসন। এই আসনগুলো বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দখলে ছিলো। হাসিনা সরকারের জাতাকলে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী ছিলেন পলাতক। আবার কেউ শিকার হয়েছেন জেল-জুলুমের। দলের জন্য অনেকেই জীবন দিয়েছেন অকাতরে। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগসাজশ করে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এই জেলায় যাদেরকে মনোনয়ন দিয়েছে তাদের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কর্তৃক গঠিত একটি বিশেষ টিমের সদস্যদের গভীর অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে একটি রিপোর্ট তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই প্রার্থীরা। উপরন্তু দলের মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নেমেছে। যেখানে তারেক রহমানের নির্দেশ মোতাবেক সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় ব্যানারে কাজ করার কথা; সেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারন করেছে।

আরও পড়ুন: বিএনপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিরোধ সামলাতে 'নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের যাচাই'

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত বিভেদ সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রতিটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইপূর্বক কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠানোর দায়িত্ব যাদেরকে দেয়া হয়েছিল, তারা কি কোনভাবে ম্যানেজ হয়ে গিয়েছেন? নাকি সঠিক রিপোর্ট দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সহায়তা করছেন? এই প্রশ্ন এখন গোটা টাঙ্গাইলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

পার্টি হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন পরিবর্তনের পাশাপাশি পুনরায় যাচাই বাছাই করে চুড়ান্ত মনোনয়ন প্রদানের দাবিতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও শোডউন করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এর ফলে দিন দিন অশান্ত হয়ে উঠছে এসব কর্মসুচি। আর এই কোন্দল-বিভেদের সুযোগ নিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে জামায়াত সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই বেকায়দা পরিস্থিতিতে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। সব মিলিয়ে বিএনপির ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল গিয়ে এফটি টীমের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি আসনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা দলের চেয়ে নিজেকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আর যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারাও মনোনয়ন টিকিয়ে রাখতে একইভাবে নিজেদেরই প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাহলে কিভাবে দলের ভেতর কোন্দল কমবে তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে মধুপুরে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অনেকে আহত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই অবস্থায় প্রাথমিকভাবে মনোনীতদের সমর্থকরা একদিকে গনসংযোগ চালাচ্ছে। অপরদিকে দলীয় প্রতিপক্ষকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বহু প্রত্যাশিত মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তি ফিরে পাচ্ছেন না প্রার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাথমিক নাম ঘোষণা করে। টাঙ্গাইল জেলার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে মনোনয়ন ঘোষণা করা হলেও সদর আসনের প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়। একই সাথে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরনের মতো কর্মসুচি থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। মনোনয়ন বঞ্চিতরা বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষনের পর মনোনয়ন পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে গনসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে অংশ নিতে শুরু করে। এখন তা বিক্ষোভ কর্মসুচিতে রূপ নিয়েছে।

টাঙ্গাইল- ০১

টাঙ্গাইল- ০১ (মধুপুর-ধনবাড়ি) আসনে মনোনয়ন পান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। পরে তিনি দলের অপর নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীর সাথে দুরত্ব ঘোঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এই আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আলীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে তার কর্মী-সমর্থকরা। এর জেরে গত ১৯ নভেম্বর দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় স্বপন ফকিরের সমর্থকরা মিছিল সমাবেশ করে দল থেকে মোহাম্মদ আলীকে বহিস্কারের দাবি জানায়। মোহাম্মদ আলীর সমর্থকরাও উল্টো মিটিং-মিছিল করে স্বপন ফকিরের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় জেলা বিএনপি সাধারণ ভোটার ও জনগনের কাছে কিছুটা হলেও সমালোচনার মুখে পড়েছে।

টাঙ্গাইল -২

এদিকে সম্পুর্ন ব্যাতিক্রমী চিত্র দেখা যায় টাঙ্গাইল -২ (গোপালপুর-ভুয়াপুর) আসনে। এই আসনে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টুর মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। দলের অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে এই আসনে।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আবদুস সালাম পিন্টু

আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল -০২ (গোপালপুর-ভুয়াপুর) আসনে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার সাথে প্রতিদ্বন্দিতায় প্রতিবারই বিপুল ভোটে পরাজিত হন সাবেক আমলা ও ৭১ টিভির মালিক মোজাম্মেল বাবুর শ্বশুর খন্দকার আসাদুজ্জামান।

জনপ্রিয় এই নেতাকে ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ছিল বিএনপি নিধন পরিকল্পনার একটি অংশ। এই মামলায় পিন্টুর আরো দুই সহোদর মাওলানা তাজউদ্দিন ও রাতুল বাবুকে আসামী করা হয়। পিন্টুর আরেক ভাই ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা একাধিক মামলার আসামী হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। আব্দুস সালাম পিন্টুর আরেক ভাই বিএনপির প্রচার সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। ফ্যাসিষ্ট হাসিনার ১৭ বছরে ৩৫০ মামলায় আসামী করা হয় তাকে। ১২ বার তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃংখলা বাহিনী। বিভিন্ন মেয়াদে ৫ বছর কারাভোগ করেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

টাঙ্গাইলের রাজনৈতিক সচেতন মহলের ধারনা, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতেই সালাম পিন্টু পরিবারের উপর এমন বর্বর নির্যাতন চালায় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ।

এদিকে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিনই কোন না কোনও এলাকায় পিন্টুর সমর্থকরা উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা, গণসংযোগ, মিটিং-মিছিল করছেন। এই আসনে কোনও দলীয় কোন্দল না থাকায় অনেকটাই নির্ভার আব্দুস সালাম পিন্টু। সবকিছু ঠিক থাকলে এখানে বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করবে।

টাঙ্গাইল-৩

টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম ওবায়দুল হক নাসির। তার নাম ঘোষণার পর থেকেই অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। পাল্টাপাল্টি কর্মসুচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এই নির্বাচনী এলাকা।

এই আসনে লুৎফর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি বিগত সাড়ে ১৫ বছর বিএনপির কোন মিটিং-মিছিলে অংশ নেননি। তবে যেকোনোভাবেই হোক, এলাকায় তিনি জনসমর্থন ধরে রেখেছেন।

এই বিষয়ে এফটি টীমের গোপন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, লুৎফর রহমান আজাদ এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা একই বংশোদ্ভুত। এই সূত্রে আজাদের মিছিলে প্রতিদিনই রানার কর্মী-সমর্থকরা যোগ দিচ্ছে। এর ফলে আজাদের মিছিলে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটছে।

অন্যদিকে, তেমন কোন বিতর্কিত ইস্যু না থাকলেও এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এস এম ওবায়দুল হক নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি মায়ের বদৌলতে ঘাটাইলের বাসিন্দা।

টাঙ্গাইল-৪

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন। এই আসনে বিএনপির ঢাকা বিভাগীর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু ও কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম মিয়া সহ বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, লুৎফর রহমান মতিন বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সাথে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে দলীয় বিভিন্ন ফোরামে বিতর্ক সৃষ্টি হলে ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়ে একরকম স্বেচ্ছায় বিএনপির রাজনীতি থেকে বিদায় নেন মতিন।

গত ৩রা নভেম্বরে বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরপরই লতিফ সিদ্দিকীর সাথে মতিনের একত্রিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। 

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মতিনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ

এখানেই শেষ নয়, বিগত সরকারের শাসনামলে মতিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিএনপিতে পুনর্বাসনে সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

দলীয় সূত্র মতে, বিগত ১৭ বছর মতিনের সাথে কালিহাতীর সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক ছিল না। বিএনপির দুঃসময়ে কালিহাতীর কোন নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়াননি তিনি। লুৎফর রহমান মতিন ঘটা করে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করেছেন একাধিকবার। এরকম একজন ব্যক্তিকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি কোনভাবেই মানতে পারছেন না কালিহাতীর তৃনমুল বিএনপির নেতকর্মীরা। নেতাকর্মীদের এখন একটাই দাবি আর তা হচ্ছে - অবিলম্বে লুৎফর রহমান মতিনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ইঞ্জিনিয়ার হালিমকে মনোনয়ন দেয়া হোক।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন প্রত্যাশা করেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম

টাঙ্গাইল-৪ আসনে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে এফটি টীমের বিশেষ অনুসন্ধানে আলোচিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিমের ব্যাপক জনসমর্থন দেখা গেছে। এই বিষয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম দীর্ঘদিন ধরে ৩১ দফার লিফলেট বিতরনসহ নানা শান্তিপুর্ন কর্মসুচির মধ্য দিয়ে দলকে সংগঠিত রেখেছেন। মাঠ পর্যায়ে দল ও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হওয়ায় তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন দাবি করেছেন। পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম বিএনপির চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি তুলেছিলেন।

সূত্র মতে, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং সঠিকভাবে পুনরায় যাচাই-বাছাই করলে টাঙ্গাইল-৪ আসনে ইঞ্জিনিয়ার হালিমের বিকল্প নেই বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা।

তাদের মতে, এই আসনে লতিফ সিদ্দিকীর মতো প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের সাথে ভোটযুদ্ধে জিততে হলে অপর জনসমর্থিত নেতা হালিমের কোনও বিকল্প নেই।

অন্যদিকে, অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী বেনজির আহমেদ টিটুর বিরুদ্ধে বালু মহাল দখল, দলীয় পদ বিক্রি এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিএনপিতে পুনর্বাসন সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। 

স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগষ্টের পর কালিহাতী বিএনপির প্রকৃত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে টিটু নিজের পছন্দমত লোক দিয়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন করেন। এসব কমিটিতে পতিত আওয়ামী ঘরানার অনেকেই স্থান পায়। ফলে কালিহাতীর সকল শীর্ষ নেতারা টিটুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করেন। এই অবস্থায় কার্যত একা হয়ে যান বেনজির আহমেদ টিটু। তবুও টিটুই এই আসনে চুড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।

এছাড়া কালিহাতীর সকল বালু মহাল টিটুর সমর্থকদের দখলে চলে যায় বলে অভিযোগ উঠে। সম্প্রতি এলেঙ্গা পৌরসভা এলাকায় মতিন গ্রুপ এবং টিটু গ্রুপের মধ্যে এনিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

পাশাপাশি বেনজিরের সমর্থকেরা এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বিএনপির হাইকমান্ড টিটুর উপর নাখোশ হন। এসব কারনেই তিনি দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন বলে মনে করছেন অনেকে।

টাঙ্গাইল-৫

টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বিএনপির হাইকমান্ড দলীয় মনোনয়ন ঘোষনা স্থগিত রেখেছে। এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল-৫ আসনে টুকুই মনোনয়ন প্রত্যাশা করে

সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের নিমিত্তে টুকু অসীম ধৈর্য্য নিয়ে সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সাথে টাঙ্গাইল সদর আসনের প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিত গণসংযোগ করছেন। টুকু নিজ নির্বাচনী এলাকার যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই দেখা যাচ্ছে টুকুকে ঘিরে মানুষের উচ্ছাস। সৃষ্টি হচ্ছে জনজোয়ারের। ব্যাপক  জনসমর্থন নিয়েই তিনি সভা-সমাবেশ ও গনসংযোগের মাধ্যমে পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

তার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মানুষের জন্য কিছু করার স্পৃহা দেখে উজ্জীবিত হয়ে টাঙ্গাইল চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষও হাতে হাত মিলিয়ে টুকুর সাথে কাজ করছেন। টুকুর জন্য নিজেদের উদ্যোগেই তারা নির্বাচনী প্রচারণা করছেন।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলে তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্তদের মাঝে টুকুর শীতবস্ত্র বিতরণ

তারা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জমজমাট করে রেখেছেন টুকুর নির্বাচনী প্রচারণা। সকলের কাছেই টুকু একজন গ্রহণযোগ্য নেতা হয়ে উঠেছেন

সম্প্রতি বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের ৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে টাঙ্গাইল সদর এলাকায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন আলহাজ্ব সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইল শহর ও আশপাশের অসহায় মানুষের জন্য শীতবস্ত্র প্রদানকে একটি মানবিক দায়িত্ব হিসেবে দেখছে স্থানীয় জনগণ।

টাঙ্গাইল জেলায় এই মানবিক উদ্যোগ শুধু শীতার্তদের কষ্ট লাঘবই করেনি, বরং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে একতা, সহমর্মিতা এবং জনসেবার অঙ্গীকারকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

তারা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জমজমাট করে রেখেছেন টুকুর নির্বাচনী প্রচারণা। সকলের কাছেই টুকু একজন গ্রহণযোগ্য নেতা হয়ে উঠেছেন

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইলের দুই ইউনিয়নে ইসলামী চিন্তাবিদদের সাথে টুকুর মতবিনিময়

শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন টুকু। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া চাচ্ছেন এবং তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা জেনে নিয়ে দ্রুত সমাধান করতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনাও দেন।

আরও পড়ুন: টাঙ্গাইল পৌর শহরে ৭ দিনব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি

ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইলকে পরিচ্ছন্ন শহরে রূপান্তরের লক্ষ্যে সাতদিন ব্যাপী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছেন টুকু। এসময় শহরের প্রধান সড়ক, বাজার ও আবাসিক এলাকাগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন: বিএনপির প্রচার সম্পাদক টুকুর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা, থানায় জিডি

এই আসনে জেলা বিএনপির সাধারন সস্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালও গনসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। ফরহাদের সমর্থকরা টুকুর ব্যাপক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কুৎসা রটানোর কারণে এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠছে।

নেতাকর্মীদের দাবি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও স্বার্থান্বেষী মহল একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে এবং টুকুকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই এসব ঘৃন্য কর্মকাণ্ড করা হয়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, টাঙ্গাইল সদরকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং মুক্ত করে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তোলা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এতে অনেকেরই চক্ষুশূল হয়েছি আমি।

আরও পড়ুন: ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগে ব্যস্ত টুকু

তিনি আরও বলেন, পতিত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে ৫ বছরের বেশি সময় আমি জেলে ছিলাম। রাজপথে আন্দোলনের সময় পুলিশের লাঠিপেটায় রক্তাক্ত হয়েছি। আমার পরিবার নির্মম নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। তবে এনিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। আমি সবসময়ই দলের হাইকমান্ডের প্রতি আনুগত্য পোষণ করেছি এবং দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেছি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এই প্রতিবেদককে বলেন, দলীয় হাইকমান্ডের প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য, দেশ ও দলের জন্য ত্যাগ, সাংগঠনিক দক্ষতা, পারিবারিক ঐতিহ্য, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে এলাকার কৃতি সন্তান এবং সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান রাজনীতিবিদ সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে জয়ী হওয়ার সুযোগ করে দিবেন।

উল্লেখ্য, এই আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন ব্যারিষ্টার জিয়াউর রহমান প্লেটো। তিনিও নিজের অনুসারীদের নিয়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।

টাঙ্গাইল-৬

অন্য সব আসনের মধ্যে কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা রবিউল আওয়াল লাভলু। এই আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও তাদের পক্ষে তেমন সভা-সমাবেশ চোখে পড়েনি।

রবিউল আওয়াল লাভলু এফটি টীমকে বলেন, দুই একজন প্রার্থী বিভিন্ন গনমাধ্যমে অসত্য ও মনগড়া তথ্যের মিশেলে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে আমার ভাবমুর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে। তবে তারা সফল হবে না বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

টাঙ্গাইল-৭

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী। এই আসনে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন বিএনপি সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাঈদ সোহরাব দীর্ঘদিন ধরে ৩১ দফার লিফলেট বিতরনসহ নানাভাবে ভোটের মাঠে কাজ করছেন। গত শনিবার ঘোষিত মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিশাল শোডাউন করে তার কর্মী-সমর্থকরা।

টাঙ্গাইল-৮

টাঙ্গাইল-৮ (সখিপুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান এক মুক্তিযোদ্ধাকে ফোনে হুমকি দেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সখিপুরে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে মুক্তিযোদ্ধারা সমাবেশ করেছেন। এই কর্মসূচিতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

যদিও আহমেদ আযম খান এই বিষয়টিকে নির্বাচনে তাকে হারানোর জন্য প্রতিপক্ষদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ভাইরাল হবার পর আযম খান নানাভাবে কর্মী-সমর্থক ভোটারদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। আযম খানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে তার মুঠোফোনে কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.