May 14, 2024, 9:14 pm


FT Online

Published:
2019-12-01 00:50:47 BdST

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৭ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন এম এ খালেক


এফটি বাংলা

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেক প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট প্রতিষ্ঠান হুদাভাসীর অডিট রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে। সুদসহ যা ১৬৭ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে।

২০১০ এর জানুয়ারী থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা এম এ খালেক প্রাইমএশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে নিজ একাউন্টে সরিয়েছেন। ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা সাবিহা খালেক, ভাগ্নে মিজানুর রহমান মোস্তফা এবং ব্যক্তিগত স্টাফ মোঃ তাজুল ইসলাম এবং ব্যক্তিগত কোম্পানি মেক্সনস বাংলাদেশ লিঃ এর নামে স্থানান্তর করেছেন। যার ব্যাংক লেনদেনের প্রমান পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন থেকে ২১ কোটি টাকা এম এ খালেক বিভিন্ন নামে পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়েছে। যা ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর ২০১৯ এর হিসাবে বেরিয়ে এসেছে।

বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের একজন এমএ খালেক। তিনি ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যাংকটির নেতৃস্থানীয় পদে থাকার সুবাদে তিনি প্রাইমএশিয়া ফাউন্ডেশনের টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপ করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ খালেকের ব্যাক্তিগত মোবাইল নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল ও এসএমএস দিলেও তিনি কোন জবাব দেননি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় ফাউন্ডেশনের অধীনে। ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট আইন দ্বারা গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড। এ আইনের ৫১ ধারার বিধান অনুযায়ী, ট্রাস্টি নিজের লাভের জন্য কিংবা অন্য যেকোনো প্রয়োজনে ট্রাস্টের সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারেন না।

কিন্তু প্রাইমএশিয়া ট্রাস্টি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএ খালেক প্রাইমএশিয়ার ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি স্ত্রী, ভাগ্নে, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, নিজের কোম্পানিসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্থানান্তর করেছেন।

এ বিষয়ে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, ট্রাস্ট আইনের ৫১ ধারা অনুযায়ী ট্রাস্টিরা ফাউন্ডেশনের কোনো অর্থ ব্যক্তিগত বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্থানান্তর করতে পারেন না। এমনকি ফাউন্ডেশনে নিজের দেয়া চাঁদা তোলারও আইনগত বৈধতা নেই। কিন্তু এমএ খালেক প্রাইমএশিয়া ফাউন্ডেশনে যে চাঁদার টাকা জমা দিয়েছিলেন, তা তুলে নিয়েছেন। ফাউন্ডেশনে থাকা নিজের শেয়ারের টাকাও ব্যক্তিগত কোম্পানির কাছে স্থানান্তর করেছেন। ট্রাস্টের টাকা ব্যক্তিগত হিসাব, স্ত্রী, ভাগ্নে, কর্মচারীসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেছেন। জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ার পর ট্রাস্টিদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন তিনি। কিন্তু ফাউন্ডেশনের আত্মসাত্কৃত অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা ফেরত চেয়ে তাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ফেরত না দিলে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।তবে অর্থের সংকট বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিকে টেনে ধরছে।

তিনি আরো বলেন, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্তমানে ভালোভাবে চলছে। বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অতি শীঘ্রই স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মান কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবুল কাশেম মোল্লা বলেন, আমরা ফাউন্ডেশনের আত্মসাত্কৃত টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে কথা বলতে তার বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি প্রথমে অভিযোগগুলো অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেছেন। তবে কবে টাকা ফেরত দিবেন তা আমি বলতে পারব না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আবদুল হান্নান চৌধুরীকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা না। ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্টির টাকা এগুলো। আর এ টাকা ২০১০ সালের দিকে নেয়া হয়েছে। আমি ২০১৭ সালে এসে ট্রাস্টি বোর্ড সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হতে দেখেছি। ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যাপার হওয়ায় এখানে আমার বলার বা করার কিছু থাকে না।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন এমএ খালেক। একই বছরের ১০ ডিসেম্বর ট্রাস্টি বোর্ডের ১৭তম সভায় পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। সে সভায় প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. নজরুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৩ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার হাজার। ১২টি বিভাগে ২৫০ জন শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ৫০০ জন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা