August 15, 2025, 11:27 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-08-06 14:01:53 BdST

স্কয়ার ফার্মার ডোজ জালিয়াতি ও রি-প্যাকিং কেলেঙ্কারির অভিযোগ


বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিরুদ্ধে আমদানিকৃত হার্বাল কক্সিডিউস্টাট পণ্য হার্ব-অল কক্স এর সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবৈধ রি-প্যাকিং করে ডোজ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জিরো এন্টিবায়োটিক পোল্ট্রি ফার্ম অর্গানিক চিকেন এর মালিক প্রকৌশলী ইমরুল হাসানসহ বহু খামারি, যারা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, সুইজারল্যান্ডের লাইফ সার্কেল নিউট্রিশনের তৈরি এই প্রোডাক্টের ডোজ নির্ধারণ করা রয়েছে প্রথম ১৪ দিনে প্রতি টনে ১ কেজি, এরপর থেকে ৫০০ গ্রাম। কিন্তু স্কয়ার ফার্মা এই তথ্য গোপন রেখে বাংলাদেশে প্রতি টনে ৩০০-৫০০ গ্রাম মাত্রায় বিক্রি করে আসছিল। কিন্তু ২০২১ সালে তৈরি করা এই পন্যের টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশনের কপিতে যেখানে স্কয়ার ফার্মা কিশোরগঞ্জ (ডাঃ মোঃ আশরাফুল ইসলাম) ও ময়মনসিংহ (ডাঃ মোঃ কামরুল হাসান) এলাকায় প্রতি টনে ১ কেজি থেকে ২ কেজি ডোজে ট্রায়াল করেছিল। আমদানিকৃত পন্যটির ২০ কেজির মূল প্যাকেটেও ডোজ উল্লেখ করা হয়নি বলে ডোজ গোপনের সুযোগ তৈরি করেছে বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ তদন্তে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস দোষী হিসেবে নিরূপন হলেও শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা এখনো নেয়নি অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শাহিনুর ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, "স্কয়ার ডোজ জালিয়াতি ও রি-প্যাকিং করতে পারে না। এমনকি ট্রায়াল দিয়েও ডোজ পরিবর্তন করার অধিকার নেই। আমরা শোকজ করেছি এবং তাদের জবাব পেয়েছি।"

কেন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বা লাইসেন্স কেন বাতিল হচ্ছে না এই প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর তিনি দিতে পারেননি।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ বয়জার রহমান জানান, "স্কয়ার অধিদপ্তরের শোকজ এর জবাবে ভুল স্বীকার করেছে ও ভবিষ্যতে এমন হবে না বলে লিখিত দিয়েছে। আমরা অভিযোগকারী খামারিকে ক্ষতিপূরণ পৌঁছাতে বলেছি।"

এদিকে, অধিদপ্তর ক্ষতিপুরন দিতে বলার পরেও স্কয়ার ফার্মা ডোজ জালিয়াতি নিয়ে লজ্জিত না হয়ে উল্টো খামারীকে অন্যায়ভাবে ভিত্তিহীন দোষারোপ করে যাচ্ছে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদকের কাছে মুঠোফোনে অভিযোগকারী খামারির খামার পরিচালনার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, "তিনি কি পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন? বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা যাচাই করুন।"

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আমদানি নীতিমালার ক্যাটাগরি-২ এর আওতায় আমদানিকৃত পণ্যেও অবৈধ রি-প্যাকিং ও মাদার প্রতিষ্ঠানের ঘোষণাকৃত ডোজ গোপন করে যে অপরাধ করেছেন এবং এই বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের শোকজের উত্তরে কি জানিয়েছেন তা সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। আমার সহকারী আপনার সাথে যোগাযোগ করবে জানিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এই বিষয়ে ভেটেরিনারী চিকিৎসক ডাঃ মাসুদুল ইসলাম (নিবন্ধন নং ৪৭১৩) প্রতিবেদককে বলেন, স্কয়ারের এই ডোজ জালিয়াতি অনৈতিক। অভিযোগকারী খামারের মুরগির কক্সিডিউসিস সংক্রমণ হয়েছিল, স্কোরিং শিটে তার প্রমাণ রয়েছে এবং এটা স্কয়ারের ডোজ গোপন করার কারনেই হয়েছে।

পুষ্টিবিদ চয়ন কুমার বর্ম (নিবন্ধন নং ২৮৯৭৩) বলেন, প্রোডাক্ট ভালো, কিন্তু স্কয়ার যে ডোজ দিয়েছে তা ম্যানুফ্যাকচারার ঘোষিত নয়, বরং নিজেরা বানিয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

অভিযোগকারী খামারি প্রকৌশলী ইমরুল হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে বলেন, স্কয়ারের ঘোষিত ডোজ অনুসরণ করেই আমরা বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছি। বহুবার জানানো সত্ত্বেও তারা প্রতারণা করেছে। এখন উল্টো আমাদের দোষারোপ করছে।

তিনি আরও দাবি করেন, স্কয়ারের অনৈতিক আচরণের কারণে তার জিরো এন্টিবায়োটিক ফার্মিং প্রকল্প হুমকির মুখে। তিনি স্কয়ার ফার্মার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপের মত দেশে হলে এতদিনে স্কয়ারের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যেত।

স্কয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী ও পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য দেননি। অঞ্জন চৌধুরী ক্ষুদেবার্তার উত্তরে জানিয়েছেন, তিনি দেশের বাইরে আছেন এবং ফার্মার দায়িত্বে নেই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.