March 28, 2024, 6:58 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-07-08 03:26:12 BdST

স্বাস্থ্যের ঠিকাদার চক্র – জনপ্রশাসন সচিবকে সিএমএসডির বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শহীদুল্লার চিঠিস্বাস্থ্যখাতকে মিঠু সিন্ডিকেট বাণিজ্য মুক্ত করার তাগিদ


স্বাস্থ্যখাতে বহুল আলোচিত ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ ও তার সহযোগীদের দৌরাত্মের বিষয় তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমডি) বিদায়ী পরিচালক (ভান্ডার ও সরবরাহকারী) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ জনপ্রশাসন সচিবকে চিঠি দিয়েছেন।

গত ৩০ মে দেওয়া ওই চিঠিতে তিনি সিএমএসডিসহ গোটা স্বাস্থ্যখাতকে ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্যমুক্ত’ করার অনুরোধ জানান।

চিঠিতে সিএমএসডিসহ স্বাস্থ্যখাতে ঠিকাদার চক্রের ইশারায় বদলী, পদায়নসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন এই সেনা কর্মকর্তা। আরও তুলে ধরেন করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবায় সমন্বয়হীনতার চিত্র।

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লার চিঠির পর কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে জন প্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন গতকাল টেলিফোনে ফিন্যান্স টুডেকে বলেন, ‘আমি এধরনের কোন চিঠি পাইনি। তাছাড়া চিঠি তিনি আমাকে দিবেন কেন? চিঠি দিবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এধরনের চিঠি আমি পেলে অবশ্যই  বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।’

পরে তিনি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শহীদুল্লার দেওয়া চিঠির একটি কপি চেয়ে নেন।

সিএমএসডির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লার স্বাক্ষরিত চিঠির বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে, ‘পরিচালক কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে বদলী করতঃ সেনাবাহিনীতে প্রত্যবর্তন এবং তদীয় স্থলে সামরিক বাহিনী হতে বিমোচক না এনে দীর্ঘ দিনের প্রথা ভঙ্গ করে একজন অতিরিক্ত সচিব মহোদয়কে প্রেষণে পরিচালক কেন্দ্রীয় ঔষধাগার হিসেবে বদলী করন।’

চিঠিতে এই সেনা কর্মকর্তা সিএমএসডির ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি এবং সাপ্লাইয়ার (ঠিকাদার) পরিবেষ্ঠিত দুষ্ট চক্র বা সিন্ডিকেট বানিজ্যের আধিপত্য সম্পর্কে লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে ঠিকাদার চক্রের মধ্যে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু এবং বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের জাহের উদ্দিন উল্লেখযোগ্য। এই চক্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিশেষত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে বাজেট সংগ্রহসহ প্রকিউরমেন্ট প্লান তৈরি এবং তাদের দেওয়া প্রকিউরমেন্ট লিস্ট অনুযায়ী সিএমএসডিতে কাজ বাগিয়ে নিতে আধিপত্য বিস্তার করে। যা তারা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে। এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিম্নমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ হচ্ছে। যেহেতু সিএমএসডির সকল ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে সেহেতু সে সমস্ত স্থানে তাদের পছন্দনীয় কর্মকর্তা বদলী করে আনায় হাত রয়েছে বলে জানা যায়। এমনকি ক্রয় প্রক্রিয়া তাদের মনঃপুত না হলে ক্ৰয় বাতিল/ দীর্ঘায়িত করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ওইসব কর্মকর্তারা। প্রয়োজনবোধে কর্মকর্তার বদলীসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। উল্লেখ্য মিঠু চক্র, এবং বেঙ্গল সাইন্টিফিক ইত্যাদি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উচ্চস্তরের অফিসসমূহে সিন্ডিকেট বানিজ্যে লিপ্ত। সিএমএসডির স্বাভাবিক যন্ত্রপাতির ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিগত ২০১৯-২০ এ (অর্থবছর) তাদের আধিপত্য উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু উচ্চপদস্তসহ বিভিন্ন স্তরের অসাধু কর্মকর্তা ঠিকাদার মিঠু বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে জানা যায়। মিঠু বাহিনীর রয়েছে বিভিন্ন নামে বেনামে সাপ্লাই কোম্পানী এবং প্রতি বছর তারা একটি করে নতুন কোম্পানী খুলে থাকে। তাদের সাম্প্রতিক একটি কোম্পানীর নাম মেডিটেক ইমেজ লিমিটেড। যার পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির পিটু। আগে এই ব্যাক্তি লেক্সিকন নামে মিঠু গ্রুপের অপর একটি কোম্পানীতে ছিলেন। মিঠু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। ভারত এবং বাংলাদেশে তার এজেন্টের মাধ্যমে সকল কলকাঠি নেড়ে থাকেন। সিএমএসডির ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ক্রয় প্রক্রিয়ার মধ্যেও রয়েছে মিঠু গ্রুপ বা মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের হুমায়ুন কবির পিটুর আধিপত্য। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) এবং জনৈক অতিরিক্ত সচিব মিঠু চক্রের নির্দেশে তাদের পছন্দনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রের ক্রয়ের তালিকা পাঠিয়েছেন সিএমএসডিতে। অদ্যাবদি (৩০ মে) তারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন যাতে ক্রয় পরিকল্পনা তাদের ইচ্ছেমাফিক বাস্তবায়িত হয়। অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) সিরাজুল ইসলাম সিএমএসডির ক্রয় কমিটির সদস্য ও কোন কোন কমিটির চেয়ারম্যান। মিঠু অর্থাৎ মেডিটেক ইমেজ লিমিটেড যে কোন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রাইস অফার হিসেবে উচ্চমূল্যে দাখিল করে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ইতিপূর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কার্যকালে মিঠু গ্রুপের একচেটিয়া প্রভাব লক্ষনীয় ছিল। মন্ত্রী ও তার অসাধু সহযোগী কর্মকর্তার সহায়তায় সিএমএসডিতে শত শত কোটি টাকার সিন্ডিকেট বাণিজ্য করছে এবং নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। উল্লেখ্য যে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্রয়ে কোনরূপ যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে সমস্ত অর্থ লোপাট করেছে একই সিন্ডিকেট।’

মিঠু সিন্ডিকেটের বিষয়ে বিগ্রেডিয়ার শহীদুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি সিএমএসডির পরিচালক হিসেবে গত ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর যোগদান করি এবং ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে একটি ক্রয়ের লিস্ট (মিঠু কর্তৃক প্রদত্ত) আমার হস্তগত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক অতিরিক্ত সচিব মৌখিকভাবে জানান যে, এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও তার ছেলের রিকুয়েস্ট (অনুরোধ) রয়েছে। তাদের লিস্ট ও প্রাইস লিস্ট অনুযায়ী প্রকিউরমেন্ট করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সে অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট স্পেসিফিকেশন বানাতে হবে এবং ইভ্যলুয়েশন করতে হবে যাতে মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডসহ অন্যান্য সরবরাহকারী তাদের পছন্দ অনুযায়ী অর্ডারগুলো পায়। আমি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করি। তাদের লিস্ট নরমাল প্রকিউরমেন্ট প্রসেসে অর্ন্তভুক্ত করিনি। তাতে মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের সহযোগী সাপ্লাইয়াররা ক্ষিপ্ত হন। কোভিড-১৯ সংক্রমনের জন্য নরমাল প্রকিউরমেন্ট স্থগিত করি। কিন্তু গৃহীত পদ্ধতিসমূহে মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডের কোন অনুরোধ আমলে নেইনি। অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিড হাসপাতালের আইসিইউ সমূহের জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য একটি চাহিদা পাঠায় এবং মৌখিকভাবে ক্রয়ের নির্দেশ দেয়। এধরনের ক্রয় প্রক্রিয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ সিএমএসডির নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন সরবরাহকারী (ঠিকাদার) চিকিৎসা সরঞ্জামাদী সাপ্লাই করার জন্য অফারসহ সিএমএসডি বরাবরে আবেদন পেশ করে। যার মধ্যে মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের যন্ত্রপাতির প্রাইস ছিল উচ্চমূল্যের। মে মাসে ডিপিএম পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের দেয়া প্রাইজ উচ্চমূল্যের এবং যন্ত্রপাতি অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় কম্পারেটিভ ইভ্যোলুয়েশনে বাদ পড়ে। এই ক্রয় প্রক্রিয়ায় আগে থেকে প্রভাব বিস্তার করার পরও বর্তমানে ডিপিএম (সরসরি ক্রয়) পদ্ধতির যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ইভ্যালুয়েশন বাদ পড়ার কারনে মিঠু বাহিনীসহ অন্যান্যরা ক্ষিপ্ত হয়। আগের অভ্যাস অনুযায়ী সিএমএসডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার গণমাধ্যম ও অনলাইন গণমাধ্যমে চালাতে থাকে। উল্লেখ সিএমএসডির বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী বদলীতে মিঠু বাহিনীর হাত রয়েছে বলে জানা যায়। ফলশ্রুতিতে আমি কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক হিসেবে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করার পরও অনাকাংখিতভাবে, অন্যায়ভাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রেষণ প্রত্যাহারপূর্বক বদলীর আদেশ জারি করে। আমার স্থলে একজন অতিরিক্ত সচিবকে বদলীপূর্বক পদায়ন করে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই কোভিড-১৯ এর সকল ক্রয় পদ্ধতি আমি দ্রুততা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পাদন করেছি এবং করছি। এতে এক ধরনের স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ বাস্তবায়িত না হওয়ার হিংসা এবং ঈর্ষা দিন দিন বাড়ছে বলে প্রতীয়মান। তাদের মদতেই এধরনের বদলী হয়েছে বলে অনুমেয়।’

জেএমআই হসপিটাল রিকুয়েস্টিং ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড ঢাকা'র মাস্ক সরবরাহের বিষয়ে বিগ্রেডিয়ার শহীদুল্লা তার চিঠিতে লিখেছেন, ‘কোভিড সংক্রামনের কারনে প্রত্যাশিতভাবে চিকিৎসা সংক্রান্ত দ্রব্যাদি সরবরাহের জন্য সকল প্রকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তাতে কি ধরনের দ্রব্যাদি সরবরাহ করতে হবে তার পরিমানসহ উল্লেখ করা হয়। জেএমআই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে মাস্ক ও সার্জিক্যাল গ্লাবস তৈরি করে থাকে তার পরিমান উল্লেখসহ জেএমআইকে মার্চ মাসে ‘স্বাভাবিক মাস্ক’ সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। চিকিৎসা সামগ্রী প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান জেএমআই কভিড সংক্রামনের শুরু থেকে হ্যান্ডগ্লাবস স্যানিটাইজার, সাধারণ মাস্ক ডিজিডিএ কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স/কোয়ালিটি সার্টিফিকেট/ ছাড়পত্র প্রদানের মাধ্যমে সিএমএসডিকে সরবরাহ করে আসছে। ওই কোম্পানী নরমাল মাস্ক সরবরাহের মধ্যে এন-৯৫ লেখা সম্বলিত মাস্ক সিএমএসডিকে সরবরাহ করে। ওই মাস্ক সরবরাহের পর কয়েকটি হাসপাতাল থেকে বিষয়টি সিএসএসডিকে জানানো হলে তাৎক্ষনিকভাবে মাস্কগুলো যে সাধারণ মাস্ক তা জানানো হয় এবং ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। সিএমএসডি তাৎক্ষনিকভাবে জেএমআইকে তাদের সরবরাহকরা মাস্ক ফেরত নিতে আদেশ দেয় এবং সাধারণ মাস্কে কেন এন-৯৫ লেখা মোড়ক দেওয়া হয়েছে তার লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। জেএমআই লিখিত ব্যাখ্যা দেয় এবং সিএমএসডি তাৎক্ষনিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টির সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়, যাতে এধরনের কোন বিভ্রান্তি দেখা না দেয়। জেএমআই ভুল সম্বলিত ব্যাখ্যা সিএমএসডি কর্তৃক গৃহীত হয়নি এবং কেন এই কোম্পানীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার লিখিত ব্যাখ্যা দিতে ৭ কর্মদিবসের সময় দিয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে জেএমআই তার ব্যাখ্যা দেয়। পরবর্তীতে সিএমএসডিতে এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য এবং জাতীয়ভাবে বিভ্রান্তিমূলক কর্মকান্ডের জন্য তাদের সরবরাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে মতামত, সুপারিশসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে চিঠি দেয় সিএিএসডি। জেএমআইর মাস্ক বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তড়িঘড়ি করে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে সঠিকভাবে তদন্ত করেনি। তারা জেএমআই থেকে কেন এন-৯৫ লেখা সম্বলিত মোড়কে মাস্ক সরবরাহ করেছে তার তদন্ত না করে সিএমএসডির উপর একপাক্ষিকভাবে দোষ চাপিয়ে তদন্ত কাজ সমাপ্ত করে। যার প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। এধরনের তদন্ত প্রতিবেদনের সঠিকতা যাচাই না করে সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে প্রেরীত একজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিপ্রায়ে সরকারী ছুটির দিনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বদলীর আদেশ জারি করা হয়। এধরনের কার্যক্রমে একধরনের সিন্ডিকেট জড়িত বলে অনুমেয়।’

চিঠিতে শহীদুল্লাহ আরও বলেন, ‘বর্তমানে পরিচালক সিএমএসডির বদলী অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্খিত বলে প্রতিয়মান হয়। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কোরের বিমোচক অফিসার ব্যাতিত দীর্ঘদিনের বদলী প্রথা ভঙ্গ করে বেসামরিক প্রসাশনের কর্মকর্তাকে প্রেষনে পরিচালক হিসেবে বদলী ভাবমূর্তি নষ্টের সামিল এবং অপমানজনক। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ কর্তৃক এই ধরনের পদক্ষেপ অনভিপ্রেত ও দৃষ্টতাপূর্ন বলে সচিব, জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় বরাবরে দিয়েছেন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ দিয়েছে। এমতাবস্থায় এই বিষয়ে আপনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং প্রয়োজনে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এই ধরনের অনিয়ম সুরাহা করার জন্য এবং সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি সমুজ্জল রাখার স্বার্থে সিএমএসডিকে সিন্ডিকেট বাণিজ্য হতে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।’ 

চিঠির শুরুতে বলা হয়, ‘আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহ, পরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার আপনার নিকট বিনীতভাবে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের কার্যক্রম, কোভিড -১৯ সংক্রমণে সিএমএসডির ভূমিকা, বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সমূহ এবং পরিশেষে সিএমএসডিতে পরিচালক হিসেবে সামরিক বাহিনীর এএমসি কোর থেকে জৈষ্ঠ অফিসারের বদলী এবং বিমোচক প্রথা ভঙ্গ করে জনপ্রশাসন  মন্ত্রনালয় হতে একজন অতিরিক্ত সচিবকে পরিচালক হিসেবে বদলীর বিষয় বস্তু উপস্থাপন করছি।’

চিঠিতে ব্রিগেডিয়ার শহীদুল্লাহ বলেন, কোভিড-১৯-এর সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে কোনরুপ সুষ্ঠ প্রকিউরমেন্ট প্লান দেওয়া হয়নি। ১০০ কোটি অর্থের বরাদ্দ ছাড়া কোন ধরনের অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কি পরিমান পিপিইসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রয়োজন হবে তার কোন সুষ্ঠ চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারনে ক্রয় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়েছে। হাসপাতালসমূহের কোভিড-১৯ এর সংক্রমনে কি কি যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে তার সঠিক চাহিদা বা ক্রয় পরিকল্পনা পাঠানো হয়নি।

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘কেন্দ্রীয় ঔষধাগার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অধীন একটি ঔষধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়কারি প্রতিষ্ঠান। একজন পরিচালক, দুইজন উপ পরিচালক, ৬ জন সহকারী পরিচালক ও ১১ জন ডেস্ক অফিসার সহ আনুমানিক ১৭০ জন জনবল নিয়ে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার পরিচালিত। পরিচালক (ভান্ডার ও সরবরাহ) ব্যাতিত অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কর্মচারী বেসামরিক জনবল। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেনাবাহিনীর আর্মি মেডিক্যাল কোরের কর্নেল, ব্রিগেডিয়ারের পদমর্যাদার অফিসার কর্তৃক প্রেষণে বদলীর মাধ্যমে পরিচালিত। সম্পূর্ণভাবে সরকারী ক্রয়বিধি পিপিআর -২০০৮ অনুসরন করে ওপেন টেন্ডারিং এর মাধ্যমে সরকারী ঔষধ এবং বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রপাতি একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবছর ক্রয় করে থাকে। যে কোন ক্রয় কাজের পূর্বশর্ত হিসেবে একটি ক্রয় পরিকল্পনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে (রেভিনিউ বাজেট হলে) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে (উন্নয়ন বাজেট হলে) প্রয়োজনীয় বাজেট, অর্থ সংস্থান, যন্ত্রপাতির তালিকা ও স্পেসিফিকেশন, ক্রয় পদ্ধতি এবং প্রতিটি চিকিৎসা সামগ্রী কি পরিমান অর্থের মধ্যে ক্রয় করতে হবে তার সঠিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনাসহ প্রেরন করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে সিএমএসড়ি পুনরায় রিভাইজড ক্রয় পরিকল্পনাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন স্বাপেক্ষ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের লক্ষ্যে এক বা একাধিক প্যাকেজ ও লটে ভাগ করে তার ডেস্ক সমূহে বিন্যাস করে থাকে। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ডেস্কে পিপিআর ২০০৮ অনুসরণ পূর্বক ক্রয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য রয়েছে প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারী। উপরন্ত সিএমএসডিতে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ ক্রয় কনসালট্যান্ট, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা এনালিস্ট এবং অন্যান্য জনবল। এছাড়া কোন নির্দিষ্ট ক্রয়ে বিশ্বব্যাংক/ইউনিসেফ বা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কিভাবে ক্রয় করতে হবে তার একটি দিকনির্দেশনা প্রেরন করে থাকে। পিপিআর ২০০৮ অনুসরন পূর্বক ক্রয় পদ্ধতি অনুসরন করার জন্য রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সমন্বয়ে একাধিক সরবরাহকারী কমিটি। সর্বক্ষেত্রে যথাযথ প্রতিটি ক্রয়, ক্রয় প্রক্রিয়া এক অনুসরন বা একাধিক করার কমিটি সিএমএসডি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। আনুমানিক ৬-৭ মাস সময় পর ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান যথাথ ক্রয়পক্রিয়া অনুসরণ করার পর সিএমএসডির স্টোরে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। তা সঠিক পাওয়া গেলে সার্ভে ইউজার অ্যান্ড বোর্ডের মাধ্যমে পুণরায় বিবিন্ন স্তরের হাসপাতাল সমূহে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ব্যবস্থাপনাতে পাঠানো হয়। তা ইউজার কর্তৃক সঠিক পাওয়া গেলে সরকারি কোষাগার থেকে বিল পরিশোধ করা হয়।'

চিঠিতে কোভিড-১৯ সংক্রমনে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘সিএমএসডির স্বাভাবিক ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয় অর্থবছরের শুরু হতেই। বিগত বছর থেকে স্বাভাবিক ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সৌজন্য উপহার হিসেবে চীনে পাঠানোর জন্য আনুমানিক দুই কোটি টাকার পিপিই, সার্জিক্যাল গাউন, হ্যান্ড ওয়াশ, মফ ক্যাপ ও সার্জিক্রাল মাস্ক ইত্যাদি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অ্যারিস্টোক্রেট, এসিআই, আরএফএল গ্রেট ওয়াল, জেএমআই থেকে সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পাঠায়।পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমুদয় সামগ্রী চীন দূতাবাসের মাধ্যমে চীন সরকারকে হস্তান্তর করে। এভাবেই শুরু হয় সিএমএসডির কার্যক্রম। বাংলাদেশ কোভিড সংক্রামনের কারনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সিএমএসডি কর্তৃক কি কি সরঞ্জাম ক্রয় করতে হবে তার কোন সঠিক পরিকল্পনা কখনোই পাঠানো হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে সিএমএসডি নিজস্ব উদ্যোগে স্টক করতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১০ মার্চ স্বাস্ত্য অধিদপ্তরের সিডিসি পরিচালক কোভিড সংক্রমনের জন্য আনুমানিক ১৫ কোটি টাকার একটি চাহিদা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় তাৎক্ষনিক পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরন করার জন্য। একমাত্র এরিস্ট্রোক্যাট, এসিআই, আরএফএল, গ্রেটওয়াল ও জেএমআই ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না যারা পিপিই প্রস্তুত করতে পারে। ঔষধ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দিকনির্দেশনায় অ্যারিস্ট্রোক্রেট শুধু মাত্র পিপিই তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান পিপিই সরবরাহের জন্য এগিয়ে আসে। এরমধ্যে লকডাউন শুরু হয়। ক্রয় পদ্ধতি কিভাবে অনুসরন করা হবে, অর্থের সংস্থান আছে কিনা, স্পেসিফিকেশন কি হবে, কি পরিমান ক্রয় করতে হবে তার সঠিক কোন পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যথা সময়ে পাঠানো হয়নি। সীমাহীন এই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সিএমএসডির কিছু সংখ্যক জনবল নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মার্চের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী মৌখিকভাবে পর্যায়ক্রমে ক্রয় করে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় পাঠাতে সক্ষম হয়। এটা ছিল সীমাহীন বাস্তবতা এবং চ্যালেঞ্জ।’ 

তাছাড়া সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের সদস্যরা দিনরাত একইভাবে পরিশ্রম করে সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সরবরাহ করার জন্য অদ্যাবধি সহায়তা করে আসছে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। সাপ্লাই চেইন সক্রিয় রাখার জন্য আপনার সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি পরিচালক হিসেবে আমার সরলতা, নিষ্ঠা, ধৈৰ্য্য, একাগ্রতা, সততা এবং কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেছি পিপিইসহ অন্যান্য সামগ্রী বাংলাদেশের প্রতিটি হাসপাতালে পাঠাতে। বারংবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যান্য সামগ্রী কি পরিমান ক্রয় করতে হবে, তার অর্থের উৎস কি হবে তার কোন নির্দেশনা মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যেও পাওয়া যায়নি। অর্থের চাহিদাকারীর দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপরে বর্তালেও আনুমানিক ১৫ই মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব (বাজেট) এর মৌখিক নির্দেশনায় সরবরাহ সামগ্রী পিপিইসহ অন্যান্য আইটেম এর আনুমানিক প্রয়োজন উল্লেখ পূর্বক ১০০ কোটি টাকার অর্থের চাহিদা সিএমএসডি কর্তৃক পাঠানো হয়। দীর্ঘ সময় পরে মার্চের শেষ দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাঠায়। উল্লেখ্য যে আপনার নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের সঠিক সক্রিয় ভূমিকায় ২০ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আংশিক পিপিই এবং অন্যান্য চাহিদা পাঠায়। পরবর্তীতে আমি নিজ উদ্যোগে কোন পদ্ধতিতে বা নির্দেশনায় সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় নির্দেশনা হবে জানতে চাইলে সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় জানান পিপিআর -২০০৮ এর আলোকে ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) পদ্ধতি অনুসরন করে ক্রয় করার জন্য। গত মার্চের শেষ সপ্তাহের মধ্যে পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী যথাযথভাবে বাংলাদেশের প্রতিটি হাসপাতাল/ উপজেলা পর্যায়সহ পৌছাতে সক্ষম হই। যার প্রতিবেদন সিএমএসডি হতে প্রতিদিন অনলাইন ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াও কেন্দ্রীয় ঔষধাগার আনুমানিক ২০ টি নতুন পিসিআর ল্যাব যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কাজ এপ্রিল এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করে।'

উল্লেখ্য যে মার্চ-এপ্রিলে ক্রয়কৃত দ্রব্যাদিসমূহ ডিপিএম পদ্ধতির সঠিক কোন পর্যায় সমূহে অর্ন্তভূক্ত হবে তা কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের প্রকিউরমেন্ট কনসালটেন্টসহ একটি ওয়ার্কিং পেপার তৈরি করে এবং সে অনুযায়ী সমস্ত ক্রয় প্রক্রিয়া ডিপিএম পদ্ধতির আওতায় সকল নিয়ম অনুসরণ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্নভাবে তাদের ক্রয়ের চাহিদাসমূহ পাঠালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল (কোভিড হাসপাতালসহ) এর চাহিদার ভিত্তিতে পিপিই সার্জিক্যাল মাস্ক, এন-৯৫ মাস্ক, কেএন-৯৫ মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাবস, বুট কভার, বডি ব্যাগসহ বিবিধ সামগ্রী ক্রয় করে পৌছাতে থাকে।
উল্লেখ্য যে, প্রতিদিন পিপিইর গড় চাহিদা ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার। এসব পিপিইর মান নিয়ন্ত্রনের জন্য সিএমএসডি এক বা একাধিক মনিটরিং কমিটি গঠন করে যারা সার্বক্ষনিকভাবে সরবরাহকৃত দ্রব্যাদির মান যাচাই করে থাকে। আনুমানিক ৯০০ কোটি টাকার ক্রয় সম্পাদিত হলেও অদ্যাবধি ১০০ কোটি টাকার অর্থ সংস্থান হয়েছে। বারবার অর্থের চাহিদা পাঠানোর পরেও অর্থ মন্ত্রণালয় সিএমএসডির বরাবরে অর্থ সংস্থানসহ বরাদ্দ প্রেরণ করেনি। এ পর্যন্ত (৩০ মে) সিএমএসডি ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৩৭ পিস পিপিই ক্রয় করার পর বিতরন করেছে ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৪ পিস। অদ্যাবধি কোন বিল সরবরাহকারীকে দেওয়া হয়নি।

স্বাস্থ্যখাতে বহুল আলোচিত ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ ও তার সহযোগীদের দৌরাত্মের বিষয় তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমডি) বিদায়ী পরিচালক (ভান্ডার ও সরবরাহকারী) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লাহ জনপ্রশাসন সচিবকে চিঠি দিয়েছেন।

গত ৩০ মে দেওয়া ওই চিঠিতে তিনি সিএমএসডিসহ গোটা স্বাস্থ্যখাতকে ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্যমুক্ত’ করার অনুরোধ জানান।

চিঠিতে সিএমএসডিসহ স্বাস্থ্যখাতে ঠিকাদার চক্রের ইশারায় বদলী, পদায়নসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন এই সেনা কর্মকর্তা। আরও তুলে ধরেন করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবায় সমন্বয়হীনতার চিত্র।

বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লার চিঠির পর কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে জন প্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন গতকাল টেলিফোনে ফিন্যান্স টুডেকে বলেন, ‘আমি এধরনের কোন চিঠি পাইনি। তাছাড়া চিঠি তিনি আমাকে দিবেন কেন? চিঠি দিবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এধরনের চিঠি আমি পেলে অবশ্যই  বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।’

পরে তিনি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শহীদুল্লার দেওয়া চিঠির একটি কপি চেয়ে নেন।

সিএমএসডির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদুল্লার স্বাক্ষরিত চিঠির বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে, ‘পরিচালক কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে বদলী করতঃ সেনাবাহিনীতে প্রত্যবর্তন এবং তদীয় স্থলে সামরিক বাহিনী হতে বিমোচক না এনে দীর্ঘ দিনের প্রথা ভঙ্গ করে একজন অতিরিক্ত সচিব মহোদয়কে প্রেষণে পরিচালক কেন্দ্রীয় ঔষধাগার হিসেবে বদলী করন।’

চিঠিতে এই সেনা কর্মকর্তা সিএমএসডির ক্রয় প্রক্রিয়ায় সরকারি এবং সাপ্লাইয়ার (ঠিকাদার) পরিবেষ্ঠিত দুষ্ট চক্র বা সিন্ডিকেট বানিজ্যের আধিপত্য সম্পর্কে লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে ঠিকাদার চক্রের মধ্যে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু এবং বেঙ্গল সায়েন্টিফিকের জাহের উদ্দিন উল্লেখযোগ্য। এই চক্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিশেষত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে বাজেট সংগ্রহসহ প্রকিউরমেন্ট প্লান তৈরি এবং তাদের দেওয়া প্রকিউরমেন্ট লিস্ট অনুযায়ী সিএমএসডিতে কাজ বাগিয়ে নিতে আধিপত্য বিস্তার করে। যা তারা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে। এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিম্নমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ হচ্ছে। যেহেতু সিএমএসডির সকল ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে সেহেতু সে সমস্ত স্থানে তাদের পছন্দনীয় কর্মকর্তা বদলী করে আনায় হাত রয়েছে বলে জানা যায়। এমনকি ক্রয় প্রক্রিয়া তাদের মনঃপুত না হলে ক্ৰয় বাতিল/ দীর্ঘায়িত করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ওইসব কর্মকর্তারা। প্রয়োজনবোধে কর্মকর্তার বদলীসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয় বলেও জানা যায়। উল্লেখ্য মিঠু চক্র, এবং বেঙ্গল সাইন্টিফিক ইত্যাদি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উচ্চস্তরের অফিসসমূহে সিন্ডিকেট বানিজ্যে লিপ্ত। সিএমএসডির স্বাভাবিক যন্ত্রপাতির ক্রয় প্রক্রিয়ায় বিগত ২০১৯-২০ এ (অর্থবছর) তাদের আধিপত্য উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু উচ্চপদস্তসহ বিভিন্ন স্তরের অসাধু কর্মকর্তা ঠিকাদার মিঠু বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে জানা যায়। মিঠু বাহিনীর রয়েছে বিভিন্ন নামে বেনামে সাপ্লাই কোম্পানী এবং প্রতি বছর তারা একটি করে নতুন কোম্পানী খুলে থাকে। তাদের সাম্প্রতিক একটি কোম্পানীর নাম মেডিটেক ইমেজ লিমিটেড। যার পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির পিটু। আগে এই ব্যাক্তি লেক্সিকন নামে মিঠু গ্রুপের অপর একটি কোম্পানীতে ছিলেন। মিঠু বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। ভারত এবং বাংলাদেশে তার এজেন্টের মাধ্যমে সকল কলকাঠি নেড়ে থাকেন। সিএমএসডির ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ক্রয় প্রক্রিয়ার মধ্যেও রয়েছে মিঠু গ্রুপ বা মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের হুমায়ুন কবির পিটুর আধিপত্য। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) এবং জনৈক অতিরিক্ত সচিব মিঠু চক্রের নির্দেশে তাদের পছন্দনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা যন্ত্রের ক্রয়ের তালিকা পাঠিয়েছেন সিএমএসডিতে। অদ্যাবদি (৩০ মে) তারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন যাতে ক্রয় পরিকল্পনা তাদের ইচ্ছেমাফিক বাস্তবায়িত হয়। অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) সিরাজুল ইসলাম সিএমএসডির ক্রয় কমিটির সদস্য ও কোন কোন কমিটির চেয়ারম্যান। মিঠু অর্থাৎ মেডিটেক ইমেজ লিমিটেড যে কোন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে প্রাইস অফার হিসেবে উচ্চমূল্যে দাখিল করে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য প্রভাব বিস্তার করে থাকে। ইতিপূর্বে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কার্যকালে মিঠু গ্রুপের একচেটিয়া প্রভাব লক্ষনীয় ছিল। মন্ত্রী ও তার অসাধু সহযোগী কর্মকর্তার সহায়তায় সিএমএসডিতে শত শত কোটি টাকার সিন্ডিকেট বাণিজ্য করছে এবং নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। উল্লেখ্য যে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্রয়ে কোনরূপ যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে সমস্ত অর্থ লোপাট করেছে একই সিন্ডিকেট।’

মিঠু সিন্ডিকেটের বিষয়ে বিগ্রেডিয়ার শহীদুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি সিএমএসডির পরিচালক হিসেবে গত ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর যোগদান করি এবং ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতে একটি ক্রয়ের লিস্ট (মিঠু কর্তৃক প্রদত্ত) আমার হস্তগত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক অতিরিক্ত সচিব মৌখিকভাবে জানান যে, এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও তার ছেলের রিকুয়েস্ট (অনুরোধ) রয়েছে। তাদের লিস্ট ও প্রাইস লিস্ট অনুযায়ী প্রকিউরমেন্ট করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সে অনুযায়ী ইকুইপমেন্ট স্পেসিফিকেশন বানাতে হবে এবং ইভ্যলুয়েশন করতে হবে যাতে মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডসহ অন্যান্য সরবরাহকারী তাদের পছন্দ অনুযায়ী অর্ডারগুলো পায়। আমি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করি। তাদের লিস্ট নরমাল প্রকিউরমেন্ট প্রসেসে অর্ন্তভুক্ত করিনি। তাতে মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের সহযোগী সাপ্লাইয়াররা ক্ষিপ্ত হন। কোভিড-১৯ সংক্রমনের জন্য নরমাল প্রকিউরমেন্ট স্থগিত করি। কিন্তু গৃহীত পদ্ধতিসমূহে মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডের কোন অনুরোধ আমলে নেইনি। অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিড হাসপাতালের আইসিইউ সমূহের জন্য ডিপিএম পদ্ধতিতে কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য একটি চাহিদা পাঠায় এবং মৌখিকভাবে ক্রয়ের নির্দেশ দেয়। এধরনের ক্রয় প্রক্রিয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ সিএমএসডির নোটিশ বোর্ডে দেওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন সরবরাহকারী (ঠিকাদার) চিকিৎসা সরঞ্জামাদী সাপ্লাই করার জন্য অফারসহ সিএমএসডি বরাবরে আবেদন পেশ করে। যার মধ্যে মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের যন্ত্রপাতির প্রাইস ছিল উচ্চমূল্যের। মে মাসে ডিপিএম পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়ায় মেডিটেক ইমেজ লিমিটেডের দেয়া প্রাইজ উচ্চমূল্যের এবং যন্ত্রপাতি অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় কম্পারেটিভ ইভ্যোলুয়েশনে বাদ পড়ে। এই ক্রয় প্রক্রিয়ায় আগে থেকে প্রভাব বিস্তার করার পরও বর্তমানে ডিপিএম (সরসরি ক্রয়) পদ্ধতির যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ইভ্যালুয়েশন বাদ পড়ার কারনে মিঠু বাহিনীসহ অন্যান্যরা ক্ষিপ্ত হয়। আগের অভ্যাস অনুযায়ী সিএমএসডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার গণমাধ্যম ও অনলাইন গণমাধ্যমে চালাতে থাকে। উল্লেখ সিএমএসডির বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারী বদলীতে মিঠু বাহিনীর হাত রয়েছে বলে জানা যায়। ফলশ্রুতিতে আমি কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক হিসেবে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করার পরও অনাকাংখিতভাবে, অন্যায়ভাবে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রেষণ প্রত্যাহারপূর্বক বদলীর আদেশ জারি করে। আমার স্থলে একজন অতিরিক্ত সচিবকে বদলীপূর্বক পদায়ন করে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চা

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা