October 5, 2024, 10:27 pm


বিশেষ প্রতিনিধি

Published:
2024-09-18 11:15:33 BdST

চর দখলের মত শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ দখল!


অনেক টা চর দখলের মতো দখল হয়ে গেছে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ। কোন নিয়ম-নীতি না মেনে গত ১২ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দেয়া হয়েছে ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাসকে। অভিযোগ উঠেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় দলবল নিয়ে চেয়ারম্যান মিসেস লায়লা আরজুমান্দের রুম দখল করেন নতুন চেয়ারম্যান ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস। দখলকারীদের অধিকাংশ'র বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা এবং মাদক পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এদিকে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও চাননা চর দখলের মত মেডিকেল কলেজও দখল হোক। শিক্ষার্থীরা এই নিয়োগের ঘোর বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ আর থাকবেনা। প্রয়োজনে আন্দোলন করে হলেও শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন।


জানা যায়,গত ১৫ সেপ্টেম্বর কলেজ পরিদর্শক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর স্বাক্ষরকৃত চিঠিতে বলা হয়, মাননীয় উপাচার্য আপনার কলেজের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান মিসেস লায়লা আনজুমান্দ এর মনোনয়ন পত্র বাতিল করে তার স্থলে গভর্নিংবডির অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য (১০-০৬-২০২৬ তারিখ পর্যন্ত) ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রেনেসাঁ হসপিটাল এন্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট, ধানমন্ডি, ঢাকা-কে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দান করেছেন। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, গভর্নিংবর্ডির কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহের এতদসংক্রান্ত সংযুক্ত নিয়মাবলী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে। উল্লেখ্য যে, অন্যসব সরকারি বা সায়েত্য শাসিত চিঠিতে যিনি স্বাক্ষর করেন তার নাম লেখা থাকে। ওই চিঠিতে শুধু স্বাক্ষর থাকলেও পদবী ব্যবহারকারীর কোন নাম উল্লেখ করা হয়নি।


প্রশ্ন উঠেছে, কাউকে গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান করতে হলে তাকে গভর্নিং বোর্ডের সদস্য হতে হবে। ট্রাস্ট ওই বোর্ডের অনুমোদন থাকতে হবে। চেয়ারম্যান হতে হলে বিধি বিধান মেনেই চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে। চিঠিতে বিধানের কথা উল্লেখ করতে হবে। কত তারিখে কার স্বাক্ষরিত চিঠি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখ থাকতে হবে। ধারা উপধারাও উল্লেখ থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঐ চিঠিতে তেমন কোন কিছুই উল্লেখ নেই। চিঠি টি অনেকটাই তড়িঘড়ি করে টাইপ করে অদক্ষতার পরিচয় বহন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক এর চিঠি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ও বেআইনী বলে জানিয়েছেন শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নিম্নে নিয়মাবলি তুলে ধরা হলোঃ ধারা-১৮(১)। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ এর উপ-ধারা ১৮(১) মোতাবেক অধিভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান অনুসারে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হবে।


ধারা-১৮(২)। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ এর উপ-ধারা ১৮(২) মোতাবেক “পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান” উদ্যোক্তাদের (মালিক পক্ষের) মধ্য হতে নির্বাচিত হবেন এবং “পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান” ছাড়াও ৫০ ভাগ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য উদ্যোক্তাদের (মালিক পক্ষের) পক্ষ হতে নির্বাচিত হবেন। ধারা-১৮(৩)। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ এর উপ-ধারা ১৮(৩) মোতাবেক পরিচালনা পর্ষদে সরকারের ১ জন, অধিভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদর্তরের ১ জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। অর্থাৎ, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২২ এর উপ-ধারা ১৮(২) মোতাবেক ডাঃ মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের উদ্যোক্তা (মালিক) না হওয়ায়, তাকে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আইন বহির্ভুতভাবে নিয়োগ প্রদান করায় তার নিয়োগ অবৈধ ও বাতিল বলে গণ্য হবে।


এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১ টায় ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস তার নিজস্ব লোকজন নিয়ে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ-এ যান। সেখানে যাদের কে নিয়ে গেছেন তাদের কারো বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা এবং মাদক পাচারের মামলা রয়েছে। দখলকারীদের ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, তারা ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস এর ক্যাডার বাহিনী। চর দখলের মত হাসপাতাল দখল করতে এসেছেন। একটি কলেজে এভাবে দখল প্রক্রিয়া চলা মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অন্ধকারের গহ্বরে ঠেলে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয় টি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে জানাজানি হবার পর আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ এর শিক্ষার্থীদের মধ্যেও বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।


অভিযোগে আরো প্রকাশ দখলকারীদের মধ্যে ডা. রেজাউল হক নামে যিনি ছিলেন, তিনি গত ২৯ এপ্রিল ৫১ লাখ টাকার ইয়াবা সহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। ডা. রেজাউল হক উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতালে কর্মরত আছেন। তিনি নিজে শুধু মাদক পাচারের সাথে জড়িত এমন নয়, ইয়াবা সেবনে অতিরিক্ত আশক্তও বলে জানা গেছে। রেজাউলের ইয়াবা সেবনের বাহিনীকে নিয়েই শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ চেয়ারম্যান এর পদ দখল নিতে যান ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা