November 15, 2025, 1:52 am


শাখাওয়াত প্রিন্স

Published:
2025-11-15 00:21:29 BdST

ব্যাংক মার্জারগ্রাহকরা কি পুরনো চেকে লেনদেন ও বর্তমান শাখা থেকে টাকা তুলতে পারবেন?


একীভূত (মার্জার) হতে যাচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক। এরইমধ্যে গ্রাহকদের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

তারা কি বিদ্যমান শাখাগুলো থেকে আমানত তুলতে পারবেন?

তাদের পুরোনো চেকবই দিয়ে কি টাকা তোলা যাবে?

পুরো প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হবে?

এই পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে 'সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক' নামে একটি একক ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। প্রস্তাবিত ব্যাংকটি এরইমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পেয়েছে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই)। যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকেও নামের ছাড়পত্র মিলেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এক মাসের মধ্যেই গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তিনি বলেন, '২ লাখ টাকার নিচে আমানতকারীরা তাদের পুরো অর্থ তুলতে পারবেন। বড় অঙ্কের আমানতের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উত্তোলনের সময়সূচি সরকারি গেজেটের মাধ্যমে জানানো হবে।'

গভর্নর আরও বলেন, 'প্রত্যেক আমানতকারী বাজারভিত্তিক মুনাফার হার পাবেন। নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হওয়ামাত্রই মুনাফার হার বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হবে।'

তবে গ্রাহকদের মধ্যে এখনও প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে টিবিএস একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক নামে নতুন ব্যাংকটি লাইসেন্স পেয়ে যাবে। গ্রাহকদের বর্তমান ব্যাংকে থাকা অ্যাকউন্টগুলোই নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। তখন বর্তমান অ্যাকাউন্ট দিয়েই নতুন ব্যাংক থেকে আমানতের টাকা তুলতে পারবেন।

একীভূত হতে যাওয়া কয়েকটি ব্যাংকে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকরা টিবিএসকে বলেন, নতুন ব্যাংকটি চালু হওয়ার পর মূলধন হিসেবে ২০ হাজার কোটি টাকা যোগ হবে। একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে, সেখান থেকেই তারা টাকা তুলতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, ইউনিয়ন ব্যাংকে কোনো গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা থাকলে, নতুন ব্যাংক চালু হওয়ার পর সম্পূর্ণ অর্থই তার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হবে। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে তোলা যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একীভূত হতে যাওয়া একটি ব্যাংকের প্রশাসক বলেন, 'উদাহরণস্বরূপ, ইউনিয়ন ব্যাংকে কোনো গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা থাকলে, নতুন ব্যাংক চালু হওয়ার পর সম্পূর্ণ অর্থই তার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হবে। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা তাৎক্ষণিকভাবে তোলা যাবে।'

তিনি বলেন, 'বাকি ১৮ লাখ টাকার ক্ষেত্রে সরকার গেজেটের মাধ্যমে উত্তোলনের সময়সূচি নির্ধারণ করবে। অর্থাৎ বাকি অর্থ এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে পরিশোধ করা হবে এবং এই সময়ের জন্য গ্রাহককে বাজারভিত্তিক মুনাফা প্রদান করা হবে।'

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে গ্রাহক টাকা তুলবেন না, বিশেষ করে যাদের আমানতের ওপর সুদহার বেশি হবে।

বিসমান চেক ব্যবহার করে টাকা তোলার বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'গ্রাহকের আমানতের টাকা নতুন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হবে। তবে আপাতত গ্রাহকরা তাদের নিজ নিজ ব্যাংকের চেকের মাধ্যমেই টাকা তুলতে পারবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'এই মুহূর্তে এত বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের জন্য নতুন করে চেক ইস্যু করা সম্ভব নয়। তাই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কোনো শাখায় চেক প্রদান করলে সেই ব্যাংকই নতুন ব্যাংকের অধীনে চেকটি অনার করবে।'

এছাড়া প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হবে।

প্রথম দফায় প্রতি গ্রাহকের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত ফেরত দেওয়া হবে আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে। বর্তমানে এই তহবিলে বর্তমানে ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো রয়েছে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের ৭৫ হাজার আমানতকারী ধরা হলে সর্বোচ্চ ১২ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে।

এই বিষয়ে গভর্নর বলেন, 'এই ব্যাংক অন্য যেকোনো ব্যাংকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে। আমানতকারীদের কোনো ভয়ের কারণ নেই। তাদের অর্থ নিরাপদ থাকবে।'

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার, আর প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার।

এই পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ আমানতকারীর মোট জমা ১.৪২ লাখ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১.৯৩ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১.৪৭ লাখ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশই খেলাপি।

নতুন ব্যাংকের পরিচালনা কেমন হবে?

খুব শিগগিরই 'সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক' নামে নতুন ব্যাংকটির লাইসেন্স পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর সাইনবোর্ড ধাপে ধাপে বদলে নতুন নামে হালনাগাদ করা হবে।

নতুন ব্যাংকের বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। বোর্ডে আরও সাতজন পরিচালক থাকবেন। এর মধ্যে পাঁচজন সরকারের এবং দুইজন বেসরকারি খাতের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে বড় অঙ্কের মূলধন দেওয়া হচ্ছে, তাই প্রাথমিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাই বোর্ডে থাকবেন। তবে ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে বোর্ড পরিবর্তন করে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

চূড়ান্ত একীভূতকরণে কত সময় লাগবে এবং এই সময়ে ব্যাংকগুলো কীভাবে চলবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, বর্তমানে পাঁচটি ব্যাংকে যে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মূল কাজ চারটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত থাকবে—অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, অর্থাৎ ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম সচল রাখা; আইটি সিস্টেম মনিটরিং বা ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো সুরক্ষিত রাখা; এইচআর অ্যাসেসমেন্ট, অর্থাৎ জনবল ও মানবসম্পদ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা এবং শাখা নেটওয়ার্ক পুনর্বিন্যাস ও অপ্টিমাইজেশন করা।

এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে এক থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে সরকারি ব্যাংক হলেও এটি বেসরকারি ব্যাংকের মতোই পরিচালিত হবে।

স্বাভাবিক সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, এলসি খোলা, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম আগের মতোই সচল থাকবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.