March 19, 2024, 11:42 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-05-28 08:49:56 BdST

দুর্নীতিবাজদের মাঝে বদলী আতংকঅনিয়ম, দুর্নীতির কালো ছায়ায় ঢেকে আছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর


জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা এবং সে লক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহ পরিচালনা করতেই মূলত গঠন করা হয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এর বাইরেও অসংখ্য কাজ রয়েছে এ কর্তৃপক্ষের।

বস্তুত তা জানা থাকলেও কার্যত হচ্ছে তার উল্টো। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এখন অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত লুটতরাজদের আঁতুড় ঘর বলেও দাবি করছে অধিদপ্তরটির একাধিক সূত্র।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে অদৃশ্য ইশারায় চলছে নিয়োগ, বদলি আর পদোন্নতির তুঘলকি কারবার। জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি দেওয়ায় দফতরের কর্মকর্তাদের মাঝে বাড়ছে অসন্তোষ। অন্যদিকে বদলির ক্ষেত্রেও টাকা ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। বদলি সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে খোদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করেই ঘুষ বাণিজ্যের ফন্দি-ফিকির করেন ওই সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে সচিব ও মহাপরিচালক এদের কাছে অসহায়। কখনো কখনো সচিব, মহাপরিচালকের দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত কার্যকর হতে দেয়া হয় না।

এসকল কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুন্ন হতে হতে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

অভিযোগের সূত্রে অনুসন্ধানে জানা যায়- স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ মূলত একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ মোহসিন উদ্দিন। মূলত এই উপসচিবের শক্তিতেই অধিদপ্তরের সকল অবৈধ কার্যক্রম চলে। যেখানে টাকা ছাড়া নড়ে না কোনো ফাইল। হয় না স্বাভাবিক নিয়মে বদলি বা পদোন্নতি।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) খান মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপপরিচালক (পার) ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব আবু তাহের মো. সানাউল্লাহ নূরী, বহুল আলোচিত সহকারী পরিচালক (পার্সোনেল -১ ) আব্দুল মান্নান এবং সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) মতিউর রহমান এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন।

অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহসিন উদ্দিন হচ্ছেন সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নানের বড় সাহায্যকারী ও আশ্রয়াতা। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পরিচালক পদে যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে নিচের সিরিয়ালে থাকা সাত কর্মকর্তাকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উপরে পদায়ন দেওয়া হয়। এখানে বড় ভূমিকা রাখে আব্দুল মান্নান। এ ঘটনায় অধিদপ্তরে চরম অসন্তোষের পাশাপাশি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জানা গেছে, উপসচিব মোহসিনের নিজ জেলা মাদারীপুরে কিছু পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়ায় পুরষ্কার স্বরূপ ওই জেলার উপপরিচালককে (সিরিয়াল নম্বর ২৩) জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। এরফলে মাঠপর্যায়ে চরম অসন্তোষ ও চেইন অব কমান্ডে বড় রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব আজিজুর রহমান অনিয়মের বিরুদ্ধে অনেক কঠোর হলেও এখনও পর্যন্ত তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুও বাস্তবিকভাবে তার কোনো কাজ করতে পারছেন না। এমনকি তার আদেশও কেউ পালন করে না। অধিদপ্তরে নামমাত্র ডিজি তিনি। সমস্ত কাজ চলে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।

উপসচিব মহসিন এখানে প্রচন্ড ক্ষমতাবান। তার ক্ষমতার উৎস কোথায় তাই নিয়ে অধিদপ্তরে চলে কানাঘুষা। অনেকের মতে, এই পদ থেকে মোহসিনকে না সরানো পর্যন্ত পরিবর্তন আসবে না। মহসিন মন্ত্রণালয়ের সচিবকেও বিভ্রান্ত করেন এই চক্রের স্বার্থের জন্য। আরো অভিযোগ রয়েছে- আগের সচিবকে দিয়েও নানা অনিয়ম করিয়েছেন তিনি।

অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, আগে যখন নূর আলী সচিব ছিলেন তখন সিদ্ধান্তগুলো অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবরা বাস্তবায়নে ভুমিকা রাখতেন। কিন্তু এখন সিন্ডিকেটের নিকট তারাও অসহায়।

বর্তমানে এই সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব আজিজুর রহমান কঠোর অবস্থান গ্রহন করেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ আমলে নিয়ে একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নজরদারি শুরু করেছেন। পাশাপাশি কাউকে কাউকে সাময়িক বরখাস্তও করেছেন। একই সংগে কারো কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

এর ফলে অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে বর্তমানে বিরাজ করছে বদলী আতংক। এমনকি অনেকে চাকুরী হারানোর শংকায় দিন কাটাচ্ছেন।   

সূত্র জানায়, একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যেন আলোচনার শেষ নেই সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে। এ নিয়ে মাঠ প্রশাসনের ভেতরে ভেতরে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারের ঊর্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ চাইছেন এখানে কর্মরত অনেকেই। 

অভিযোগ-১

সম্প্রতি, ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগ নিয়ে ফের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আরিফুল ইসলামকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী ২৯ মে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

দপ্তরটির সদ্য স্ট্যান্ড রিলিজ (ঠাকুরগাঁও জেলা) হওয়া ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এসএম আল কামাল, একই দপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহা. মোজাম্মেল করিম, তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র গাইনকে শুনানিতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ খবর নিশ্চিত করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, চাকরি বাণিজ্যের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আগে থেকে মাঠে ছিলেন তিনি। এবার নিজেই ফেঁসে গেছেন। তদন্ত কমিটি তাকেও তলব করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ঝিনাইদহের রাজস্ব খাতভুক্ত ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির শূন্যপদ পূরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৭ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী (শুধু মহিলা) পদে ৬৭ জন এবং আয়া ৮টি পদে জনবল নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন আহবান করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৮২টি পদের বিপরীতে তিন হাজার ৭৪২ জন আবেদন করেন। ২০২২ সালের ১৪ জুলাই প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৩ জন, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ২৩৬ এবং আয়া পদে ৩০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বছরের ৭ নভেম্বর তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে বলে ভাইভা কার্ড দেওয়া হয়।

একই বছরের শেষ দিকে উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে একটি বিশেষ মহলের নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধানে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর নিয়োগের সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন সে সময়কার জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে। জেলা প্রশাসন থেকেও তদন্ত কমিটি করা হয়। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। চাকরি বাণিজ্যের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে স্থগিত হওয়া মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গত ১৯, ২০ ও ২১ মে আবার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুনঃমৌখিক পরীক্ষায় ৪৬৪ জনকে ভাইভা বোর্ডে ডাকা হয়। আগের ফলাফলে (২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর) মৌখিক পরীক্ষায় ২৮৯ জনকে পত্র দেওয়া হয়। এবার সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী আরও ১৭৫ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শুধু রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি। এর ফলে নতুন করে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

আজ ২৭ মের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়। তবে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) পর্যন্ত নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়নি।

অভিযোগ-২ 

‘পরিবার কল্যাণ সহকারী’ পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সিলেটের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) লুৎফুন্নাহার জেসমিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন বিদেশে পলায়ন করতে না পারেন-এ জন্য তাঁর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশ দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সিলেটের জেলা প্রশাসক তথা নিয়োগ কমিটির সভাপতিকে জেসমিনের করা নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সুপারিশ বহির্ভূতভাবে নিয়োগ করা আটজনের নিয়োগপত্র বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ ও এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সব তথ্য নিশ্চিত করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, 'জেসমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ায় তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার তাঁকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। 

প্রাথমিক তদন্তে অনেকেরই নাম উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল মনসুর আসজাদ বাদী হয়ে ওই ৮ জনের বিরুদ্ধে নগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। 

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. কুতুব উদ্দিন জানান, ‘যুগ্ম সচিব মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি সিলেটে অবস্থান করে বিভাগীয় পরিচালকের সভাকক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

অভিযোগ-৩ 

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি  অনুষ্ঠিত হয় পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডাবলিউভি) পদে নিয়োগ পরীক্ষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগকে ওই পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ ফলাফল প্রস্তুত করে অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিলেও পূর্নাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করতে দীর্ঘদিন বিলম্ব করা হয়। 

অভিযোগ উঠেছে, এই চক্র প্রতি পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে দুই থেকে ৩ লক্ষ করে টাকা নিয়েছে। এছাড়াও এমন অনেক প্রার্থী রয়েছে যাদেরকে চুড়ান্ত নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। চুড়ান্ত নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। 

বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় ১০৮০ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে ৯৭২ জনকে অর্থের বিনিময়ে পাশ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষার খাতা টাকার বিনিময়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ওয়েমার বা টিক চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে আনুমানিক ৭-১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

অসৎ উপায়ে দুর্নীতির আশ্রয়ে পরীক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে, এটা এজন্য নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে যে, পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই উত্তীর্ণদের পাশের নাম্বার পরীক্ষার্থীদের হাতে এসেছে। 

বিপুল অংকের এই অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বানিজ্য করেন নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে প্রশাসন ইউনিটের সিন্ডিকেট।

পরীক্ষায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি খান মো. রেজাউল করিম এবং অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পার) ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব আবু তাহের মো. সানাউল্লাহ নূরীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ৪৬ জেলার বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করেছেন।

কেউ যাতে অনিয়ম প্রমাণ করতে না পারে, সেজন্য লিখিত পরীক্ষার পরিবর্তে ৭০ নম্বর টিকচিহ্ন এবং মৌখিক পরীক্ষায় ৩০ নম্বর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এছাড়া ১৮ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আর্থিক লেনদেন সফল করতে পরীক্ষার তিন মাস পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করছে।

এই বিষয়ে পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ করা হয়। তথ্যপ্রমাণসহ দুর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সরকারি কর্মকর্তাদের অনিয়মের অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের তাদের পদ থেকে অপসারণ করে তদন্ত করা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায়, সুষ্ঠু তদন্ত করা সম্ভব হয় না। এজন্য পরিচালক (প্রশাসন), খান রেজাউল করিমসহ তার অনৈতিক কাজের সঙ্গীয় সহযোগীদের তাদের পদ থেকে অপসারণ, প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত ও ফের নিয়োগ পরীক্ষার খাতায় ‘টিক চিহ্ন’ পদ্ধতির স্থলে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি করেছেন অনেকেই।

তবে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের অনেকেই বলেন, এসব তদন্তে কিছু হবে না। টাকা ও ক্ষমতার কাছে সব নিষ্ফল। তদন্তে কোন কিছু প্রমাণ হবে না।

এখন প্রশ্ন হলো, প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে চাকরি প্রার্থী পরীক্ষাথীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য ৭০ ভাগ টিক চিহ্ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হলো কেন? টিক চিহ্ন পদ্ধতি কী মেধা যাচাইয়ের সর্বোচ্চ মাধ্যম? এই পদ্ধতি কী বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে সর্বোচ্চ চুড়ান্ত কোন পদ্ধতি? নাকি নিয়োগ পরীক্ষার অনিয়ম ও দুর্নীতি যাতে কোনভাবেই প্রমাণ করা সম্ভব না হয় তার জন্য টিক চিহ্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখিত এই তিনটি অভিযোগ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে উপসচিব মহসিন, সহকারী পরিচালক আবদুল মান্নান এবং এই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্য নিজেদের এবং পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।

এ বিষয়ে 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'র পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সকল সদস্যের সম্পদের বিবরন নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখার পরেও এমন দুর্নীতি মেনে নেয়া যায় না।  

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা