নিজস্ব প্রতিবেদক
Published:2024-11-06 16:43:23 BdST
জনশক্তিখাত নিয়ে নতুন চক্রান্তমালয়েশিয়া সরকারের নাম ব্যবহার করে তিন ব্যক্তির প্রতারণা
পল্টন থানায় জিডির প্রস্তুতি
ঢাকায় মালয়েশিয়ার তিন নাগরিকের গোপন সফর নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত: অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করা, জনশক্তি রপ্তানীর নামে প্রতারণা ও বিশেষ একটি মহলের আমন্ত্রণে তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন।
এই সফরকালে তারা ঢাকার পল্টন থানায় জনশক্তি রপ্তানীকারকদের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। সেখানে নিজেদেরকে ‘মালয়েশিয়ান সরকারের প্রতিনিধি’ বলেও পরিচয় দেন।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, বাংলাদেশ দূতাবাস ও মালয়েশিয়ান দূতাবাসের একাধিক সূত্র 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে নিশ্চিত করেছে ওই ব্যক্তিরা মালয়েশিয়ান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে আসেননি। মূলত: তারা জনশক্তি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। জনশক্তি রপ্তানীকারকদের সঙ্গে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা থানায় ডিজি করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার ওই তিন নাগরিক হচ্ছেন মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন ফর ফরেন ন্যাশনাল নাম সংগঠনের সভাপতি দাতোশ্রী থাইয়াগরাজ ও সাধারণ সম্পাদক ড. সুকমারানা এনকে নায়ার (সুইচ) এবং দাতো মো. নোয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কৌশল হিসেবে বিতর্কিত ব্যবসায়ী নূর আলী ও বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানীকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম এবং অপর জনশক্তি রপ্তানীকারক আশফাক হোসেন তাদেরকে নিয়ে আসেন। এই তিন ব্যক্তি রাজধানীর পল্টন থানায় গত ৩ সেপ্টেম্বর দায়ের হওয়া একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তারা ওই সময় নিজেদের মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। তারা নিজেদেরকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠজন বলেও পরিচয় দেন। এছাড়াও ওই ব্যক্তিরা নিজেদেরকে মানবাধিকার কর্মী, মালয়েশিয়ান কেডিএনের লোক, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক, সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্যাদি পরিচয় ব্যবহার করে। তারা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে কুয়ালালামপুর এনসিবি (ইন্টারপোল) বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করান। ওই চিঠিতে দুইজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মালয়েশিয়ান সরকারের ইমিগ্রেশণ সফটওয়্যার ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশনা চান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি সম্পুর্ণ অনৈতিক এবং প্রতারণার শামিল। মালয়েশিয়ার ওই তিন ব্যক্তির দুজন সেখানকার জনশক্তি আমদানী সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা। ২০০১ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশী জনশক্তি রপ্তানীকারকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ড. সুকুমারানাকে সেখানকার ব্যবাসায়ী সংগঠন পিএএসএমএ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদেরকে জনশক্তি নেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও প্রতারণা করে আসছেন। তাদেরকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানী খাত নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, এফডব্লিউসিএমএস মালয়েশিয়ান সরকারের জনশক্তি আমদানী বিষয়ক ইমিগ্রেশন সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১৪টি সোর্স কান্ট্রি থেকে জনশক্তি নিয়ে থাকে। এই সফটওয়্যার বন্ধ রাখার নির্দেশনা বাংলাদেশ চাইতে পারে না। তাছাড়া পল্টন থানার তদন্ত কর্মকর্তা যে এনসিবি ইন্টারপোলের মাধ্যমে যে নির্দেশনা চেয়েছেন সেটাও যৌক্তিক নয়। কারন তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য চাইতে পারতেন। সেটা না করে তারা রুহুল আমিন স্বপন নামে এক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও আমিন নূর নামে একজন মালয়েশিয়ান নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আমিন নূর মালয়েশিয়ান নাগরিক এবং এই মামলার আসামিও নয়। তাকে জড়িয়ে চিঠি দেওয়া আন্তর্জাতিক রীতিনীতির লংঘণের শামিল।
সূত্র জানায়, পল্টন থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এবং অপর একজন বিতর্কিত ব্যবসায়ীর লিখে দেওয়া ড্রাপট অনুযায়ী পল্টন থানা পুলিশ কুয়ালালামপুর ইন্টাপোলকে ওই চিঠি দিয়েছে। যা কোনভাবেই যৌক্তিক হয়নি।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.