May 31, 2025, 2:20 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2025-05-30 09:59:02 BdST

বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের পূর্বাভাসে বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা২০২৫ সালে ৭০ লাখ চাকরি কমে যাওয়ার আশঙ্কা


২০২৫ সালের জন্য বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস ৬ কোটি থেকে কমে ৫ কোটি ৩০ লাখে নেমে এসেছে। ফলে চাকরি বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পূর্বাভাসের তুলনায় বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে প্রায় ৭০ লাখেরও কম নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে।

জিডিপি বৃদ্ধির হার পূর্বাভাস অনুযায়ী ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। এই অনুমানগুলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গত এপ্রিল মাসের বিশ্ব অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা তাদের সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, যার ফলে চাকরির বৃদ্ধির গতি কমেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যদিও শিক্ষার হার বিশ্বজুড়ে বাড়ছে, কর্মসংস্থানে এখনও শিক্ষাগত অমিল রয়েছে। ২০২২ সালে মাত্র ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের কাজের জন্য যথাযথ ছিল। বিগত দশকে কম শিক্ষিত কর্মীর হার ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এলেও অতিশিক্ষিত কর্মীর হার বেড়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে।

বাংলাদেশে তরুণ বেকারত্ব জাতীয় বেকারত্ব হারের দ্বিগুণেরও বেশি, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিদায়ী কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, চাকরির বৈশ্বিক সংকোচন অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য– যা একাধারে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিবছর দেশটি ১০ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে পাঠায়। এই প্রতিবেদন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, নারী ও তরুণদের জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি অবহেলা করা যাবে না। ডিজিটাল ও উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন পেশার চাহিদা বাড়বে বলে পূর্বাভাস, তাই বাংলাদেশের জন্য এখনই দক্ষতা উন্নয়নের সংস্কার বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি, যেন দেশের ও বিদেশের বাজারে ভালো মজুরি-সুবিধার কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়।

আয় বণ্টনে বৈষম্য

প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক এক বৈশ্বিক প্রবণতা তুলে ধরে বলা হয়েছে— শ্রম আয়ের অংশ (জিডিপির যে অংশ শ্রমিকদের হাতে যায়) ২০১৪ সালে ৫৩ দশমিক ০ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। আফ্রিকা ও আমেরিকায় এই পতন সবচেয়ে বেশি। যদি এই অনুপাত অপরিবর্তিত থাকতো, তবে ২০২৪ সালে শ্রম আয় বিশ্বব্যাপী আরও এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি হতো। সেক্ষেত্রে প্রতি শ্রমিকের জন্য এটি প্রায় ২৯০ ডলার অতিরিক্ত আয় হতো (স্থিতিশীল ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায়)। এই অবনমন বৈষম্য বৃদ্ধি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শ্রমিকদের আয়ের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে তোলে।

উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন কর্মসংস্থানের প্রবণতা ও নারীর অংশগ্রহণ

আইএলও’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মসংস্থান এখন উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন পেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নারীদের এ ধরনের পেশায় অংশগ্রহণ ২১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। তবুও পেশাগত বিভাজন রয়ে গেছে। নারীরা নির্মাণ খাতে কম এবং প্রশাসনিক ও সেবামূলক পেশায় বেশি নিয়োজিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, নতুন প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব বিশ্বজুড়ে কাজের ধরনে পরিবর্তন আনতে পারে। প্রতি চার জনের মধ্যে একজন কর্মীর কাজ এআই দিয়ে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি দক্ষতার চাকরিতে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও, উচ্চদক্ষতা সম্পন্ন পেশায় এর ব্যাপকতর স্বচালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ দশমিক হুংবো বলেন, এই প্রতিবেদন কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্কবার্তা দেয়, তবে এটি একটি রূপরেখাও দিতে পারে— কীভাবে আমরা মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারি। আমাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে— সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, সামাজিক সংলাপ উৎসাহিত করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার গড়ে তুলে, যেন প্রযুক্তির সুফল সবাই পায়। আমাদের এটা করতে হবে দ্রুত, দৃঢ় প্রত্যয়ে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে।

মার্কিন চাহিদা

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৭১টি দেশে প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ চাকরি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মার্কিন ভোক্তা চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। এই চাকরিগুলো এখন বাণিজ্যিক উত্তেজনার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে ৫ কোটি ৬০ লাখ চাকরি রয়েছে। তবে কানাডা ও মেক্সিকোতে সর্বোচ্চ অনুপাতে (১৭ দশমিক ১ শতাংশ) চাকরি এই ঝুঁকিতে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, আমরা জানি, বৈশ্বিক অর্থনীতি আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য বিঘ্ন অব্যাহত থাকে এবং যদি আমরা শ্রমজগতের পরিবর্তনশীল বাস্তবতাগুলোর মোকাবিলায় ব্যর্থ হই, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব শ্রমবাজারে অনিবার্য।

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব— সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে, দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে, সামাজিক সংলাপ উন্নীত করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমবাজার গড়ে তুলে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সুফল সবাইকে পৌঁছে দিয়ে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.